অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধনের স্মৃতিচারণা গ্রন্থ স্মৃতিকণ্ডূয়ন-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ সংবাদ (‘স্মৃতির সরণি বেয়ে স্বচ্ছন্দ বিচরণ...’, ৩১-১২) পড়ে আমার ছাত্রজীবনের স্মৃতিও ‘কণ্ডূয়িত’ হয়ে উঠল। ১৯৫৬-৫৮ শিক্ষাবর্ষে প্রেসিডেন্সি কলেজে বি এ শ্রেণিতে আমি প্রণবের সহপাঠী ছিলাম। আমাদের সাম্মানিক বিষয় ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু আবশ্যিক ইংরেজি সাহিত্যের শ্রেণিতে আমরা একই বিভাগে পড়তাম। আমার সহপাঠীদের মধ্যে কয়েক জনের নাম বলি: রামগোপাল অগ্রবাল, প্রণবকুমার বর্ধন (অর্থনীতি), সুমিত সরকার (ইতিহাস), দীপক বড়ুয়া (পালি), মণিলাল চক্রবর্তী (ইতিহাস)। আমার সঙ্গে বাংলা সাম্মানিকের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছিল অরুণ সেন, প্রশান্তকুমার পাল, শান্তা সেনগুপ্ত, বাসন্তী গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জয় মজুমদার, কিরণশঙ্কর মৈত্র প্রমুখ।
প্রণবকে প্রতিবাদী ছাত্র হিসেবে দেখেছি। এক দিন আমাদের আবশ্যিক ইংরেজি শ্রেণিতে অধ্যাপক ফণিভূষণ মুখোপাধ্যায় (ইনি পরে বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হন) (চার্লস ল্যাম-এর ‘পার্সোনাল এসে’ হিসেবে ‘দ্য সুপারঅ্যানুয়েটেড ম্যান’ প্রবন্ধটি পড়াচ্ছিলেন। তিনি ওই প্রবন্ধে বর্ণিত তখনকার লন্ডন নগরী ও সোহো অঞ্চলের কথা যখন বলছিলেন, তখন প্রণব দাঁড়িয়ে উঠে তাঁর বর্ণনার প্রতিবাদ করে এবং সেখানকার যথোচিত বিবরণ দেয়। অধ্যাপকপ্রবর তা মেনে নিয়েছিলেন। |
প্রণব কলেজের নানা সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। কলেজের ‘দি ইকনমিস্ট’ পত্রিকায় (১৫-৬-১৯৫৮) একটি চমৎকার প্রবন্ধ লেখে ‘দিস ইজ দ্য ওয়ে ডিমক্র্যাসি এন্ডস’। কলেজে আয়োজিত মক পার্লামেন্ট অনুষ্ঠানে সরকার পক্ষের পরিকল্পনা ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব চমৎকার পালন করেছিল। এই অনুষ্ঠানে সংসদের অধ্যক্ষ পদ উজ্জ্বল করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ শঙ্করদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজের রবীন্দ্র পরিষদের অনুষ্ঠানেও প্রণবকে দেখেছি। এখানে ইংরেজি সাম্মানিকের কেতকী কুশারীও থাকত। গান গাইত সঞ্জয় মজুমদার ও চিত্রলেখা চৌধুরী। সঞ্জয় সুবিনয় রায়ের সংগীত-শিষ্য। চিত্রলেখা চিত্রনিভা চৌধুরীর কন্যা।
প্রণব বাংলা ও ইংরেজি দু’ধরনের রচনাতেই নিপুণ ছিল। নিজের বিষয় অর্থনীতি ছাড়াও। ১৯৫৯ সালের প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকায় তার প্রবন্ধ ‘দিস অ্যাংরি এজ’ পুরোপুরি দর্শন বিষয়ক রচনা। পত্রিকার ১৯৬০ সালের সংখ্যায় (সম্পাদিকা গায়ত্রী চক্রবর্তী) তার প্রবন্ধ ‘ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড দি ইনটেলেকচুয়াল’ একাধারে অর্থনীতি ও সমাজতত্ত্বের আলোচনা। প্রণব চমৎকার ছোটগল্পও লিখত। ১৯৫৯ সালের কলেজ পত্রিকায় (সম্পাদক কেতকী কুশারী) প্রকাশিত তার ছোটগল্প ‘আমি পলাতক’ এক ম্যাসোকিস্ট, স্যাডিস্ট ও এসকেপিস্ট যুবকের নিজেকে লেখা চিঠির আঙ্গিকে রচিত। শুরু হয়েছে বিবাহিতা প্রেমিকার প্রতি এই উচ্চারণে: ‘না সুমিতা, আতঙ্কিত হয়ো না। এ আমাকে লেখা আমারই চিঠি।’ শেষ হয়েছে মপাসাঁ সুলভ একটি তীব্র চমক দিয়ে: ‘হ্যাঁ, সুমিতা, আমি আত্মহত্যা করলুম।’ সুতরাং, প্রণবের বাংলা লেখা কিছু আকস্মিক ব্যাপার নয়। ছাত্রজীবনেই তার পূর্বপ্রস্তুতি ছিল।
প্রণবকে বিশেষ অনুরোধ, ‘বাংলা গল্প আবার লেখো। ছাত্রজীবনের আনন্দ-উপভোগ ফিরিয়ে দাও’।
কাননবিহারী গোস্বামী। প্রাক্তন অতিথি অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
|
পত্রিকা ক্রোড়পত্রে ‘পার্ক স্ট্রিট’ (১৪-১২) রচনায় সুবোধ সরকার বলেছেন, “বিয়াল্লিশে অশনি সংকেত দেখেছিল পার্ক স্ট্রিট... বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হল... চাল নিয়ে চার্চিল এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তি ভাইস চ্যান্সেলর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে উদারতার রাজনীতিটি করেছিলেন, তা আর কেউ করেনি কোথাও। সব চাল উড়ে গেল ব্রিটিশ সৈন্যকে খাওয়াতে...।”
‘বিয়াল্লিশে’ নয়, বাংলায় ওই দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তেতাল্লিশে, বাংলা ১৩৫০ সাল, যে জন্য ওই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষকে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ বলা হয়ে থাকে। ওই সময় বাংলায় খাজা নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে (১৯৪৩-’৪৫) মুসলিম লিগ সরকার বহাল ছিল। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি (১৯৪০-’৪৪) এবং বাংলায় হিন্দু মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওই মুসলিম লিগ মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন না। তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক নেতা যিনি সে সময় ভারত সরকার ও বাংলার মুসলিম লিগ সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতায় সৃষ্ট ওই দুর্ভিক্ষের তীব্র সমালোচনা করেন এবং ‘বেঙ্গল রিলিফ কমিটি’ গঠন করে বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত দুর্গত মানুষকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
বিমলেন্দু ঘোষ। কলকাতা-৬০
|
আমি রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নিকট আমার একটি আবেদন। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার সুন্দরায়নের জন্য যথেষ্ট চিন্তা করছেন। আমরা যারা কলকাতা শহরে জন্মেছি আর প্রায় আট দশক কাটিয়েছি, আমরাও শৈশবের কলকাতাকে ফিরে পেতে চাই। যদিও জানি বিপুল লোকসংখ্যার ভারে সেটা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন করে দোকান বাজারে রাস্তা ভরে যেতে দেখলে খারাপ লাগে।
লেক মার্কেটে নতুন মল তৈরি হল। শুনেছি, মলের সামনের দোকানিদের (হকার বলব না। কারণ, হকাররা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে) তোলা হল বহু টাকা দিয়ে। সুন্দরায়ন হল। কিন্তু তারা কোথায় গেল? পুরো লেক রোড, রাসবিহারী কালীঘাটের মোড় থেকে লেক মার্কেট ছাড়িয়ে দেশপ্রিয় পার্ক অবধি আস্তে আস্তে তাদের দোকান বসে যাচ্ছে। রুটিওয়ালারা রাসবিহারীর উপর বসে গেল। বসল ফলওয়ালা, ব্যাগওয়ালা। বয়স্কদের চলার পথ সঙ্কুচিত, বেঞ্চ পেতে দু’ধারে লোক খেতে বসে যাচ্ছে।
আমার বাড়ির সামনে একজন হঠাৎ ফল নিয়ে বসল। থানা পুলিশকে বিরক্ত করে তাকে তোলা হল। তার পর সে সেখানে রুটিওয়ালাকে বসাল। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে মাননীয়া কাউন্সিলর মহাশয়া তাকে উঠিয়ে ছাউনি টাউনি খুলে দিলেন। তারা পিছন ফিরতেই আবার দোকান চালু হল। আবার থানা-পুলিশ, কাউন্সিলর করে আপাতত দোকান বন্ধ হল। কিন্তু সেই অপরিষ্কার ছাউনি চৌকি বেঞ্চি প্লাস্টিকের জঞ্জাল এখনও জমে রয়েছে।
গীতা মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-২৯ |