মেঝেতে পুরু হয়ে জমে রয়েছে ধুলো, শুকনো পাতা। বিস্তীর্ণ এলাকায় আগাছার ভিড়। দেওয়ালের গা জড়িয়ে উঠেছে বুনো লতা। কোথাও ঢুকতে গেলেই বাধা পেতে হয় ঝুল ও মাকড়সার জালে। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা আর জঞ্জালের স্তুপ। চকিতে এটাই নবদ্বীপের রাজ্য প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বর্তমান চেহারা। আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দশা যদি এমন হয় সেখানে চিকিৎসা কেমন হবে তা বলাই বাহুল্য। শনিবার দুপুরে প্রাণিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে রীতিমত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেনি মন্ত্রীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা জমাট ভিড়টাও।
নদিয়ার নবদ্বীপে অবস্থিত হলেও এই প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির উপর সংলগ্ন বর্ধমান জেলার বিরাট অংশের মানুষও নির্ভরশীল। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তৈরি হওয়া নবদ্বীপের বাবলারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাণগোপাল নগরের এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এলাকার প্রাচীনতম পশু হাসপাতাল বলে পরিচিত। বিঘা পাঁচেক জমির উপর তৈরী কেন্দ্রটি এক সময়ে এলাকার ছোটদের কাছে ‘চিড়িয়াখানা’ বলে পরিচিত ছিল। গরু, মোষ বা ছাগলের মতো গবাদি পশু ছাড়াও ঘোড়া, কুকুর ও পাখির চিকিৎসা হত এই কেন্দ্রে। সে দিন অবশ্য অনেক আগেই ফুরিয়েছে। এখন কার্যত পোড়োবাড়ি হয়ে পড়ে আছে এই পশু হাসপাতাল। দুটো অপারেশন থিয়েটার, ওয়ার্ড, আউটডোর, মূল হাসপাতাল ভবন, চিকিৎসক বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার আবাসন সব ব্যবস্থাই রয়েছে। মেলে না কেবল চিকিৎসা পরিষেবাটুকু। |
হতশ্রী চেহারা। —নিজস্ব চিত্র। |
মন্ত্রী আসার খবর পেয়ে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, নবদ্বীপের বাবলারি, ইদ্রাকপুর, মহীশূরা, স্বরূপগঞ্জের পাশাপাশি বর্ধমানের পূর্বস্থলী, বিদ্যানগর, জাহান্নগর, কোবলা, শ্রীরামপুর, রাজাপুর, মাধাইপুর, হেমাতপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ তাঁদের পশু-পাখির চিকিৎসার ব্যাপারে এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। অথচ সব ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এখানে কোনও চিকিৎসা হয় না। মেলে না চিকিৎসকের দেখাও। ফলে বেশির ভাগ সময়েই গবাদি পশু নিয়ে এসে হয়রান হয়ে ফিরে যেতে হয়।
প্রাণী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মন্ত্রী এসেছেন শুনেই তড়িঘড়ি কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপে ছুটে আসেন নদিয়ার ভেটেরেনারি অফিসার অমিত দাস। মন্ত্রীর কড়া প্রশ্নের মুখে তিনিও মেনে নেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বেহাল অবস্থার কথা। মন্ত্রী তাঁকে আগামী আট জানুয়ারির মধ্যে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্বপনবাবু বলেন, “গ্রামে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নেই এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া দায়। গ্রামীণ বাংলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রাণিসম্পদ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।”
নবদ্বীপের আর এক মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, উপ-পুরপ্রধান তুষার ভট্টাচার্যও চলে আসেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বেহাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুণ্ডরীকাক্ষবাবুও। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “যে উদ্দেশ্যে নবদ্বীপের এই পশু হাসপাতাল সেটাই ব্যহত হচ্ছে। পশুপালকেরা সাহায্য পাচ্ছেন না। বাম জমানায় একে একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে এই পশু হাসপাতালটি বাঁচানোর জন্য আমরা উদ্যোগী হচ্ছি। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে হাসপাতাল পরিষ্কার করা হবে। কর্মীদের বলেছি নিজের কাজটুকু ঠিক করে করুন। আর কী কী অভাব আছে লিখিতভাবে জানান। বিভাগীয় মন্ত্রী হিসাবে বলছি নবদ্বীপের এই কেন্দ্রের জন্য টাকার অভাব হবে না।” ক্ষুব্ধ প্রাণিসম্পদ দফতরের মন্ত্রীকে অমিতবাবু একবার বলেন, “স্যার, কিছু অসুবিধা রয়েছে ঠিকই, তবে এখনও কিন্তু প্রতি মাসে প্রায় ৭০০ গবাদি পশুর চিকিৎসা হয়।” যা শুনে স্বপনবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুণ্ডরীকাক্ষবাবুর টিপ্পনি, “সে তো হাসপাতালের ঝোপ-জঙ্গল দেখেই মালুম হচ্ছে!”
|
পাঁচ পরামর্শ |
• কর্মীদের নিজের কাজটা ঠিক করে করতে হবে।
• একশো দিনের প্রকল্পে হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার।
• এলাকা ধরে ধরে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবির।
• ওষুধ, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি সহ যা দরকার এখনই তালিকা করে কিনে নেওয়া।
• তিন দিনের মধ্যে ওই কেন্দ্রের বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। |
|