বেশ কিছু কাল পরে দেখা হয়েছে তিন বন্ধুর। কফি শপের আড্ডা কিন্তু বারবারই থমকে যাচ্ছে। কারণ, প্রত্যেকেই এক লাইন করে কথা বলছে আর তার পরই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল ফোন নিয়ে! না, ফোনে কথা বলা বা এসএমএস নিয়ে নয়! মোবাইল ইন্টারনেটে ফেসবুক ঘাঁটতে ব্যস্ত তারা। ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়ে গিয়েছে, এ দিনের এই আড্ডার খবর! সাঁটানো হয়ে গিয়েছে ছবি! এ বার ক’টা ‘লাইক’ আর ‘কমেন্ট’ সাইবার-দেওয়ালে জমা পড়ল, তার হিসেব নেওয়ার পালা! ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আত্ম’প্রকাশের তাগিদে বাস্তবের আড্ডাটাই চলে গেল পিছনের বেঞ্চিতে!
নতুনতম পোশাক থেকে নতুনতম বয় বা গার্লফ্রেন্ড, সিনেমা দেখা থেকে শপিং মলে কেনাকাটা-খাওয়াদাওয়া, মায় মধুচন্দ্রিমার ছবি সবই আজকাল ব্রেকিং নিউজ হয়ে আছড়ে পড়ছে সাইবার দেওয়ালে। অনবরত লোক দেখিয়ে যে এত সুখ, মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক খোলার আগে কে বুঝেছিল!
গ্রিক পুরাণের নার্সিসাসকে মনে পড়ে? যে সুদর্শন যুবা দীঘির জলে প্রতিবিম্বিত নিজের রূপে মুগ্ধ হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আত্মপ্রেমে আত্মহারা যুবক শেষে হয়ে গিয়েছিল ফুল। তেমনই অনেক নার্সিসাস-ফুল আজকাল থরে থরে ফুটে থাকতে দেখা যায় সাইবার দেওয়ালে। তারা মুখ দেখে সাইবার-দর্পণে। অন্যের পছন্দের বাটখারায় মেপে নেয় নিজের রূপ ও কীর্তির ওজন। অজস্র মানুষ সারা দিন ধরে নানা মুহূর্তে নিজেই নিজের বিভিন্ন অঙ্গ ও ভঙ্গির ছবি তুলে পোস্ট করেন। সদ্যসমাপ্ত ২০১৩-র সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ছিল, ‘সেলফি’! |
আমিত্বের এই অনর্গল উদযাপন কি সামাজিক নার্সিসিজম বিস্তারেরই ইঙ্গিত নয়? সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী অবশ্য একে সরাসরি নার্সিসিজম বলতে রাজি নন। তাঁর মতে, একাকীত্ব থেকে এই অভ্যাসের জন্ম হচ্ছে। একাকীত্ব বলতে তিনি বোঝাতে চান ‘লোনলিনেস’, ‘সলিচিউড’ নয়। ‘সলিচিউড’ থেকে মহৎ সৃষ্টির জন্ম হয়। কিন্তু ‘লোনলিনেস’ দেয় কষ্ট। আশিসবাবুর বক্তব্য, মানুষ সামাজিক প্রাণী। কিন্তু মানুষের প্রতি আধুনিকতার অবদান ওই ‘লোনলিনেস’। এই একাকীত্বের আধুনিক ওষুধ ‘কনজিউমারিজম’, ভার্চুয়াল পৃথিবী এবং সোশ্যাল মিডিয়া। আশিসবাবুর কথায়, “সমাজ নেই। পরিবার নেই। তাই ওই ফেসবুকে পরিবার খুঁজছে একাকীত্বে ভোগা মানুষ।”
কিন্তু মানুষ যখন একা নয়, যখন নিঃসঙ্গ নয়, তখনও তো এড়ানো যাচ্ছে না ফেসবুকের অনুপ্রবেশ। অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় একে আত্মকেন্দ্রিকতাই বলতে চান। তাঁর বক্তব্য, “সব মানুষ একা, সকলের একই সমস্যা তা হতে পারে না। তা হলে মূহূর্তে মুহূর্তে বেড়ানোর ছবি পোস্ট করত না লোকে।” স্বস্তিকা এখনও ব্যক্তিগত কথা বলার জন্য বন্ধুদের ফোন করেন। ফেসবুকে আপডেট দেন না।
কিন্তু যুগের হাওয়া উল্টোটাই। প্রেমে পড়া থেকে প্রেম ভাঙা, সব ঘোষণাই হয়ে যাচ্ছে ফেসবুকে। মনের আনন্দ, প্রাণের পুলক, এখনকার রাগ, তখনকার বিরক্তি সব হাটের মাঝে হাঁড়ি ভাঙা। অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, এই আত্মপ্রচার সময়ের ধর্ম। প্রচারের আকাঙ্ক্ষা মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি। পরমব্রতর কথায়, “আমি নিজের কাজের প্রচার বা জীবনের বড় কোনও ঘটনা শেয়ার করার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করি। বাথরুমে গেলাম না লাল জুতো পরলাম, তা ফেসবুকে জানাই না।” কিন্তু আম আদমি? ফেসবুকে লাইক আর কমেন্টের পাহাড় দেখেই তারা সেলিব্রিটি-জীবনের স্বাদ পেতে চায়। এটা একটা আগ্রাসী নেশার মতো। মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায় আবার লক্ষ করছেন, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডুবে থাকতে গিয়ে মানুষ বাস্তব জীবনে কথা বলতেই ভুলে যাচ্ছে। বিশেষ করে নবীন প্রজন্মের মধ্যে এই সংক্রমণ প্রবল আকার নিয়েছে।
প্রবীণেরাও কি নেই? ঊর্মিমালা বসু যেমন ফেসবুকে ঢুকেছেন প্রবাসী মেয়ের সঙ্গে আড্ডা দেবেন বলে। ঊর্মিমালাদেবীর কথায়, “মেয়েকে পাড়ার, পরিবারের গন্ধ দিতে চাই বলেই নানা রকম ছবি দিই।” তাতে রান্নাবান্নার ছবিও থাকে, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে জল জমার ছবিও থাকে। তবে আমিত্বকে ভালবাসার গুরুত্বটা অস্বীকার করচেন না মধ্য ষাটের এই বাচিক শিল্পীও। তাঁর বক্তব্য, “আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি বলি, বাহ্, ঊর্মি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, কাজে উৎসাহ পাই। ফেসবুকেও নিজের ছবিতে লাইক পড়লে এটাই ঘটে।” |
রস সংগ্রহে আধুনিক প্রযুক্তির দাবি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাল গাছ থেকে রস সংগ্রহে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দফতর। শনিবার সকালে কলকাতার সুজাতা সদনে পশ্চিমবঙ্গ তালগুড় শিল্পী মহাসঙ্ঘের বার্ষিক সভায় এ কথা জানান রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুব্রত সাহা। তিনি বলেন, “আমি খড়্গপুর আইআইটি-র কর্তাদের চিঠি লিখেছি। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম রস সংগ্রহের কাজে খুব উত্সাহী নয়। কিন্তু এর বাজার রয়েছে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার হলে কর্মসংস্থান হবে।” জানুয়ারি মাসে খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হবে বলে তিনি জানান। তালগুড় শিল্পীদের কাছে মন্ত্রীর আবেদন, “শহরে নয়, গ্রামে গিয়ে সভা, আলোচনা করতে হবে। গ্রামের মানুষকে বোঝাতে হবে। তাঁদের হাতে নতুন প্রযুক্তি তুলে দিতে হবে। বাজার ধরার বিষয়ে সাহায্য করতে হবে। গ্রামের পণ্যের রফতানিতে জোর দিতে হবে।” খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর সূত্রে খবর, খেজুর ও তাল রস সংগ্রহে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে দিল্লি আইআইটি-র সঙ্গে কথা চলেছে। এ ছাড়া তাল মিছড়ি এবং জয়নগরের মোয়া বিদেশে রফতানির বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। সভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ দফতরের সচিব জয়ন্ত আইকত, উদ্যানপালন দফতরের সচিব আশিস ঠাকুর হাজির ছিলেন। |