|
|
|
|
একশো দিনের কাজের নেতৃত্বে স্বনির্ভর দল |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
এ বার একশো দিনের কাজের পরিকল্পনা এবং রূপায়ণে নেতৃত্ব দেবে গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা। গ্রামের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা চিহ্নিত করবেন, গ্রামে কী কী কাজ হবে, কোথায় হবে। কাজের মাপ, মজুরির হিসেব, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা, সব বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে মেয়েদের। তাঁদের মাধ্যমে মজুরির টাকাও দেওয়া হতে পারে গ্রামবাসীকে। এই কাজে তাঁদের তথ্য ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মী মিলিয়ে গঠিত একটি দল। এমনই ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যের আটটি জেলার ১৮টি ব্লক পড়ছে ওই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায়।
কেন এই উদ্যোগ? রাজ্যের এনআরইজিএস কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার জানালে ন, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সামনে অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ। আরও বেশি গরিব মানুষকে আরও বেশি দিন কাজ দিতে হবে। আরও মহিলাকে আনতে হবে এই প্রকল্পের কাজে। প্রকল্পের অধীনে এমন কাজ করতে হবে, যা বাস্তবিকই গ্রামের মানুষের কাজে লাগে। এই সব লক্ষ্যে পৌঁছতে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সঙ্গে জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সমন্বয় করছে।
গ্রামীণ জীবিকা মিশন মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজে সহায়তা করে। তার সঙ্গে সমন্বয় করলে একশো দিনের প্রকল্পে বাড়তি কী কাজ হবে?
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, এখন একশো দিনের প্রকল্পে সেচের জন্য পুকুর খনন হয়। এ বার কেবল পুকুর খননই করা হবে না, সেখানে মাছ চাষ, পুকুর পাড়ে ফলের বাগান, জমি সমান করা, এই সব কাজও হবে। কোন ধরনের জমিতে কী চাষ ভাল হবে, উঁচু জমি হলে সেচের সুবিধে পেতে কী করতে হবে, নিচু জমি হলে কী করে অতিরিক্ত জল বাইরে বের করতে হবে, এমন নানা বিষয় শেখানো হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্তা সুকান্ত সরকার বলেন, “ভবিষ্যতে ওই পরিকল্পনা স্বনির্ভর দলগুলি নিজেরাই যাতে করতে পারে, তা জানাতে আমরা সব ধরনের প্রশিক্ষণ দেব। তাঁদের থেকে গ্রামের অন্যরাও জানতে পারবেন।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ শুরু করেছে। জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর, এনআরইজিএস সেল ও দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই কাজ দেখভাল করবেন। কাজ পরিচালিত হবে অনেকগুলি স্বনির্ভর দল দিয়ে তৈরি ‘ফেডারেশন’-এর মাধ্যমে। সেই সঙ্গে থাকবে পঞ্চায়েত দফতরের এনআরইজিএস বিভাগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক এবং অন্য কর্মী-সদস্যরা। প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য একটি ‘সহায়ক দল’ তৈরি করা হবে, তাতে থাকবেন কৃষি, উদ্যান পালন প্রভৃতির বিশেষজ্ঞরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নয়াগ্রাম, বিনপুর ১, ২ ও গোপীবল্লভপুর ১ এই চারটি ব্লক এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। তিন বছরের ওই প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। চারটি ব্লকের ৩৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ শুরু হবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি। ।২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প শেষ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়া দুই প্রকল্পের সমন্বয়ে পাইলট প্রজেক্ট শুরু হচ্ছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, মালদহ, জলপাইগুড়ি এবং দুই দিনাজপুর জেলার নির্দিষ্ট কিছু ব্লকে।
এই সমন্বয়ের ফলে আরও কয়েকটি সুবিধে হবে, মনে করেন দিব্যেন্দুবাবু। এক, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এখন গৃহস্থালী- কেন্দ্রিক কাজ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। দরিদ্র মানুষের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ, ফলের বাগান তৈরি কিংবা ছাগল-মুরগির খামার তৈরির কাজ তৈরি করার লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি গ্রামে কোন পরিবারের কী প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করতে পারবে। আর দুই, গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলি চিহ্নিত করে, কাজের তালিকা পেশ করবেন গ্রাম সংসদে। ব্লক থেকে প্রকল্প পাশ (‘ভেটিং’) করিয়ে আনার প্রক্রিয়া এখনকার মতোই চালু থাকবে। নতুন নিয়মের পাশাপাশি প্রচলিত নিয়মে পঞ্চায়েতও প্রকল্পের প্রস্তাব দেবে। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির আশা, “দুই প্রকল্পের সমন্বয় তৈরি হলে গ্রামীণ উন্নয়নের পাশাপাশি স্বনির্ভর দলগুলিরও উন্নতি ঘটবে।” স্বনির্ভর দলের সদস্যরা অবশ্য খুশি অন্য কারণে। লালগড়ের ধরমপুর, চামটিয়াড়া, শালুকা গ্রামের স্বনির্ভর দলের সদস্য সোনামণি সিংহ, নিতু কালিন্দী, জাহ্নবী মাহাতোদের বক্তব্য, “সেচের ব্যবস্থা নেই। আগে সেটা চাই। কিন্তু তা হচ্ছে না। বারবার বলা হচ্ছে শালপাতার থালা সেলাই কর। তার আবার বাজার নেই। ফলে আমরা নিজেদের মতো করে টাকা ভাগ করে নিই। সোনামণির কথায়, “সরকারের নতুন প্রস্তাব মতো কাজ হলে গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন হবে। ভালো হবে আমাদেরও।’’
|
বালকের রহস্যমৃত্যু |
নিখোঁজ বালকের দেহ মিলল খালের ধারে। শনিবার সকালে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার কেশাপাট এলাকার শিমুলহান্ডা গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ ফারাদ হোসেন (১০)। ফারাদের কাকা শেখ সইদুল ইসলামের অভিযোগ, “শুক্রবার সন্ধ্যের সময় গ্রামের একজন এসে ফারাদকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। তারপর থেকেই ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার সকালে খালের ধারে ফারাদের দেহ মেলে। আমাদের অনুমান ওকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ওই বালকের দেহে বাইরে থেকে আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত করছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|