পর্যাপ্ত চিকিত্সক, ফার্মাসিস্টের অভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা সঙ্কজনক। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে জরুরি চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে জেলায় চিকিত্সক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস। উদ্বেগে রয়েছেন সদ্য নিযুক্ত জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। জেলার বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “বর্তমান চিকিত্সক-ফার্মাসিস্ট দিয়ে কোনও রকমে স্বাস্থ্য পরিষেবা সামাল দেওয়া হচ্ছে।”
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথি-হলদিয়া ও এগরা তিন মহকুমা হাসপাতাল-সহ তমলুক জেলা হাসপাতাল, দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৪৮টি চিকিত্সক পদ শূন্য রয়েছে। ১৬৮ জনের জায়গায় আছেন মাত্র ১২০ জন। তমলুক জেলা হাসপাতালে ৫০ জনের জায়গায় আছেন ৪৪ জন, কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ৩৮ জনের জায়গায় ২৫ জন, হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ৪০ জনের জায়গায় ৩০ জন ও এগরা মহকুমা হাসপাতালে ৩৪ জন চিকিত্সকের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন চিকিসকের জায়গায় ৪ জন চিকিত্সক রয়েছেন।
কেন এমন অবস্থা?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে জেলায় নতুন চিকিত্সক না আসায় এবং গত অক্টোবর মাসে জেলা থেকে ৩৩ জন চিকিত্সক উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যত্র চলে যাওয়ার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জেলা জুড়ে এত চিকিত্সক পদ শূন্য থাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। একই চিত্র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও। জেলার ২৫টি ব্লকের ২৫টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ ৭৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেখানে ২৪৫ জন চিকিত্সক থাকার কথা সেখানে অর্ধেকেরও কম, ১১২ জন চিকিত্সক রয়েছেন। অর্থাত্ ১৩৩টি পদই শূন্য। কাঁথি মহকুমার বড়বড়িয়া ও এগরা মহকুমার চাতলা ও কসবাগোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘ দিন কোনও চিকিত্সক না থাকায় পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়েছে। অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিত্সকদের অস্থায়ী ভাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। শুধু চিকিত্সক কম নয়, জেলার সর্বত্রই রয়েছে ফার্মাসিস্ট এবং নার্সদের অভাব। এমনই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য কমিটির সদস্য অলোকেশ গুড়িয়া এবং সংস্থার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুবিমল বর্মনের। অলোকেশবাবুর কথায়, ‘‘ফার্মাসিস্টদের দিয়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির স্টোরের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া জেলায় যেখানে ১৩৫ জন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা, সেখানে রয়েছেন মাত্র ১০৬ জন।” তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি একাধিকবার উচ্চমহলে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “চিকিত্সা পরিষেবায় এই সঙ্কটের কথা জেলার পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।” স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধায় দু’জনেরই আশা উচ্চমহলের হস্তক্ষেপে অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন জেলাবাসী। এখন জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য দফতরেরও একই সুরে নিষ্কৃতির পথ দেখছেন তাঁরা। |