|
|
|
|
বিনোদন |
বড় পর্দার বড়দিনে ধুম লাগছে চাঁদের পাহাড়ে
ইন্দ্রনীল রায় • কলকাতা |
|
|
এক দিকে বিভূতিভূষণ। অন্য দিকে বলিউড।
এক দিকে বাংলা ছবির ইতিহাসে সব চেয়ে ব্যয়বহুল ছবি। অন্য দিকে যশরাজ ঘরানার পটবয়লার।
‘চাঁদের পাহাড়’ আর ‘ধুম থ্রি’।
অপেক্ষা আর তিন দিন। এই একজোড়া ছবি নিয়ে টলি-বলি জুড়ে যে পরিমাণ হইচই হচ্ছে, সাম্প্রতিক কালে তা আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এবং বঙ্গদেশে ১৫ কোটি টাকার বাজেটের ‘চাঁদের পাহাড়’ নিয়ে মানুষের কৌতূহল ‘ধুম থ্রি’র থেকে একটু বেশি মাত্রাতেই দেখা যাচ্ছে।
এর একটা কারণ অবশ্যই নস্টালজিয়ার প্রতি বাঙালির দুর্বার আকর্ষণ। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, “বাঙালি নস্টালজিয়া ভালবাসে। ছোট বেলার কল্পনার সঙ্গে দৃশ্যগুলো মেলে কি না, আমাদের প্রজন্মের মানুষ তো সেটা দেখতেই যাবে।” দিল্লিতে বসেই আশিসবাবু জেনেছেন, চাঁদের পাহাড় বাংলার সব চেয়ে বড় বাজেটের ছবি। আশিসবাবুর জন্মের বছর, ১৯৩৭-এ লেখা হয়েছিল ‘চাঁদের পাহাড়’। “সেই সময় অত আলোড়ন হয়নি বইটা নিয়ে। কিন্তু তার পর ধীরে ধীরে এটা একটা ক্লাসিকে পরিণত হয়েছে।”
কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় খবর নিলেই জানা যায়, এখনও ‘চাঁদের পাহাড়’ বইয়ের বিক্রি সারা বছরই খুব ভাল। বিভূতিভূষণের বইয়ে যে হেতু কপিরাইট নেই, তাই অনেক প্রকাশকই ‘চাঁদের পাহাড়’ ছেপেছেন। কিন্তু আসল সিগনেট সংস্করণ যেখানে সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদ আর শ্যামলকৃষ্ণ বসুর অলঙ্করণ রয়েছে সেটা রয়েছে আনন্দ পাবলিশার্সের কাছে। সংস্থার তরফে সুবীর মিত্র বলছেন, “অনেকেই এখন বইটা কিনেই বলছেন, দেখি সিনেমার শঙ্করের সঙ্গে বইয়ের শঙ্করের কতটা মিল।” |
চাঁদের পাহাড় ছবির একটি দৃশ্য। ইন্দ্রনীল রায়ের তোলা ছবি। |
‘চাঁদের পাহাড়’ থেকে ছবি করার ইচ্ছেটা বস্তুত সত্যজিৎ রায়েরই ছিল। প্রচ্ছদ আঁকার সময় থেকেই গল্পটা খুব প্রিয় ছিল ওঁর। পুত্র সন্দীপ রায় জানাচ্ছেন, প্রধানত বাজেটের অভাবেই হয়ে ওঠেনি সে ছবি। এত দিনে সেই বাধা কাটল। ‘চাঁদের পাহাড়’-এর আগে বাংলায় সব চেয়ে ব্যয়বহুল ছবি ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ‘মিশর রহস্য’। সাত কোটি টাকার মিশরের চেয়ে ‘চাঁদের পাহাড়ে’র বাজেট দ্বিগুণেরও বেশি। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় অবশ্য তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। ছবির ফাইনাল মিক্সিং ও কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ সারতে সারতে মুম্বই থেকেই বললেন, “পনেরোর পর ক’টা শূন্য বসালে পনেরো কোটি হয়, সেটাই গুলিয়ে যায় আমার। ওটার টেনশন প্রযোজকরা নিয়েছেন।” প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা বলছেন, “আমি রিকভারি নিয়ে ভাবছি না। আমরা শুধু বাংলা ছবির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা বদলে দিলাম।”
এত বড় বাজি ‘চাঁদের পাহাড়’ নিয়েই কেন? উত্তর সেই নস্টালজিয়া! সেই শঙ্কর, সেই আফ্রিকা, সেই বিভূতিভূষণ, সেই সত্যজিৎ...। যার টানে সব্যসাচী চক্রবর্তী এক সময় সন্দীপকে বলেছিলেন, “আপনি ছবিটা করলে আমাকে অভিনয়ে নেবেন না, কিন্তু অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর রাখবেন।” ছোট বেলা থেকেই কল্পনায় শঙ্করের পিছু পিছু উগান্ডার রেললাইনের ধারে চলে যেতেন সব্যসাচী। এখনও প্রত্যেক বছর ক্যামেরা নিয়ে ওয়াইল্ড লাইফের ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়েন। কখনও দেশে, কখনও বিদেশে। ওয়াইল্ড লাইফের এনথুজিয়াস্টের কাছে ‘চাঁদের পাহাড়’ আর একটা অন্য আকর্ষণ। “সিংহ, হাতি, চিতা, ব্ল্যাক মাম্বা নিয়ে এটা একটা স্পেকট্যাকল হবে বুঝতে পারছি। আই অ্যাম ইগারলি ওয়েটিং ফর দ্য ফিল্ম!” |
|
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতো লেখকও টিভি আর কাগজ খুললেই দেখতে পাচ্ছেন আফ্রিকা আর দেবের কাহিনি। প্রচারের এই দাপট তাঁর মধ্যেও একটা কৌতূহল তৈরি করেছে ছবিটা নিয়ে। দেবের কোনও ছবি এখনও দেখেননি। কিন্তু দেবের জনপ্রিয়তার কথা তাঁর কানেও পৌঁছেছে। “শুনেছি এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে ও নাকি তুমুল জনপ্রিয়। সিনেমা দেখে যদি লোকে বইটা পড়ে, তা হলে খুব খুশি হব,” বলছেন শীর্ষেন্দু।
হ্যাঁ, প্রবীণদের নস্টালজিয়ার পাশাপাশি নবীনদের জন্য বড় আকর্ষণ অবশ্যই ‘দেব’-শঙ্কর। তবে এত দিন দেব মানেই ছিল মফস্সলের নায়ক। বালিগঞ্জ বা সাউথ সিটি-র ড্রইংরুমে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ছিল। কলকাতা ও মফস্সল-এর দুই পৃথিবীকে মেলানোটাই এ বার দেবের চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে রয়েছেন মুম্বইয়ে, মন পড়ে আছে কলকাতায় আর আফ্রিকায়। “এটা এমন একটা গল্প যার কথা জানে না এমন বাঙালি পৃথিবীতে নেই। বেশ টেনশন আর এক্সাইটমেন্টের মধ্যে রয়েছি। আমার ২০০ পার্সেন্ট দিয়েছি ছবিটায়!”
সাধে কি আর প্রযোজকরা দাবি করছেন, ‘চাঁদের পাহাড়’ বাংলা ছবির সমীকরণটাই পাল্টে দেবে! নস্টালজিয়ার কালো ঘোড়া, ১৫ কোটির বাজেট...তার পাশে “দেবের ট্র্যাডিশনাল বাজারের সঙ্গে যদি কলকাতার দর্শকদেরও ছবিটা ভাল লেগে যায়, তা হলে এটাই হবে মফস্সল ও কলকাতার প্রথম ক্রসওভার ফিল্ম,” বলছেন শ্রীকান্ত। সেই অঙ্ক মাথায় রেখেই এই প্রথম ২৫০-রও বেশি হলে মুক্তি পাচ্ছে কোনও বাংলা ছবি। দেবের ‘পাগলু’-‘খোকা’ ঘরানার ছবির ক্ষেত্রে ২৫০টি হলের ২২৫টিই হত মফস্সলের। কিন্তু এ বারে কলকাতারই প্রায় ৯০টি হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘চাঁদের পাহাড়’। তার মধ্যে মাল্টিপ্লেক্সও থাকছে। ১০ জানুয়ারি আমেরিকার নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি-সহ ইস্ট কোস্টের বিভিন্ন শহরেও মুক্তি পাবে ছবিটা।
বাজার এতটাই গরম যে, কলকাতায় নবীনার মতো কিছু হল-এ আমিরের ‘ধুম থ্রি’ মুক্তিই পাচ্ছে না। “ধুম থ্রি বড় ছবি, কিন্তু ‘চাঁদের পাহাড়’ বাংলা ছবির একটা ইতিহাস। আমরা সেই ইতিহাসকে সঠিক মর্যাদা দিতে চাই বলেই ‘ধুম থ্রি’ চালাচ্ছি না,” বলছেন হলের মালিক নবীন চৌখানি। বলিউডও এই লড়াইটা নিয়ে চিন্তিত। ট্রেড বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ কবুল করছেন, “বাংলায় ‘চাঁদের পাহাড়’ যে ‘ধুম থ্রি’র সঙ্গে রিলিজ করছে সেই ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। বাংলার ফাইটের দিকে নজর থাকবে!” |
|
‘ফাইট’টা বেশ কিছু বছর ধরেই হচ্ছে। আগেও সলমনের ‘বডিগার্ড’, ‘রেডি’, ‘দবাং ২’-এর মুক্তির সময় দেব-জিত বলিউডের অশ্বমেধ ঘোড়া আটকে দিয়েছিলেন। এ বার কী হয়, সে দিকে নজর থাকছে দুই ইন্ডাস্ট্রিরই।
ডিসেম্বর আমিরের অত্যন্ত পয়া মাস। ২০০৮ ডিসেম্বরে ‘গজনি’ ও ২০০৯ ডিসেম্বরে ‘থ্রি ইডিয়টস’ বলিউড বক্স অফিসের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। ‘ধুম থ্রি’ নিয়েও অনেকেই আগাম বলছেন, এ ছবি ৩০০ কোটির ব্যবসা করবে! গত ন’বছর ধরে ‘ধুম’ বলিউডের অন্যতম হট প্রপার্টি। ‘ধুম’-এর ভিলেন সাজতে সব বড় নায়কই এক পায়ে খাড়া। ২০০৪-এ জন আব্রাহাম, ২০০৬-এ হৃতিক রোশনের পর এ বার সেই চরিত্রে আমির। ৯০ কোটির ‘ধুম থ্রি’ বাংলায় মুক্তি পাচ্ছে ২০০টি হল-এ, সারা পৃথিবীতে ৩৫০০-রও বেশি হল-এ।
এ রাজ্যে ‘ধুম থ্রি’-র রিলিজের দায়িত্বে প্রীতম জালান। তাঁর কাছে এই শুক্রবারের গল্পটা এয়ারপোর্টে দাঁড়ানো দুটো বিমানের মতো। “ধুম থ্রি আর চাঁদের পাহাড়, একটা বোয়িং অন্যটা এয়ারবাস। এ বার দেখার- দর্শক কোন দিকে যান। আফ্রিকা না আমেরিকা!”
|
অনুষ্ঠানের আগে আশীর্বাদ। গুরু থাঙ্কমণি কুট্টির সঙ্গে ঝিনুক মুখোপাধ্যায় সিংহ।
সোমবার, রবীন্দ্র সদনে ‘উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসব’-এ। ছবিটি তুলেছেন দেবস্মিতা চক্রবর্তী। |
|
|
|
|
|