|
|
|
|
|
|
|
সিএলটি-র গৌরব ফেরাতে উদ্যোগ |
শিশু রঙ্গমঞ্চ |
গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের সঙ্গে এসে বছর তেরোর মেয়েটি নাচল চিলড্রেন্স লিটল থিয়েটার-এ (সিএলটি)। সেটা পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক। সিএলটি’র অনুষ্ঠানেই কলকাতা প্রথম দেখল ওড়িশি নাচ! সেই ছোট্ট মেয়েটিই সংযুক্তা পাণিগ্রাহী। এখানে ওড়িশি নাচের প্রথম প্রশিক্ষণ শুরু করে সিএলটি, এ জন্য কেলুচরণ পাঠান ছাত্র মুরলীধর মাঝিকে। তাঁর কাছেই নাচ শিখতেন সুতপা তালুকদার। সিএলটি’র অনুষ্ঠানে নেচেছেন শর্মিলা ঠাকুরও (সঙ্গে বাঁ দিকের ছবি)।
১৯৫২-য় সমর চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত নাচ-গান-আঁকা শেখার এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ছিল ছোটদের জনপ্রিয় রঙ্গমঞ্চ। শুরুটা বিপিন পাল রোডে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাবা-মা’কেও একাত্ম করে নিতেন সমরবাবু। সংস্থাটি ছিল পরিবারের মতো। সমরবাবুর লেখা ও প্রিয়লাল চৌধুরীর সুরে তৈরি হত ছোটদের জন্য নৃত্যনাট্য। |
|
সমরবাবুই কস্টিউম ডিজাইন করতেন। ঢাকুরিয়ায় জমি পাওয়ার পর তৈরি হয় সিএলটি’র নিজস্ব মঞ্চ ‘অবন মহল’। বিদেশেও অনুষ্ঠান করেছে এই সংস্থা। এখানে ছোটদের নাচে প্লেব্যাক করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পী। সংস্থার তিলক রোডের বাড়িতে নিয়মিত রিহার্সালে এসেছেন রবিশংকর (সঙ্গে ডান দিকের ছবি)। ’৬৫-তে সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই সংস্থাই প্রথম স্কেটিং-এর সাহায্যে ব্যালেতে মঞ্চস্থ করে অবনীন্দ্রনাথের ‘বুড়ো আংলা’। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধী, বিধান রায়, অতুল্য ঘোষ, আরও অনেকে পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
সমরবাবুর মৃত্যুর পর সিএলটি-র কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। এ বার প্রাক্তনীরা উদ্যোগী পুরনো গৌরব ফেরাতে। আবৃত্তি ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে এখন স্কেটিং, দাবা, টেবলটেনিস শেখানো হয়। বর্তমান সভাপতি প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকে থাকাকালীন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে অনুদানের ব্যবস্থা করেন। সেই টাকায় রঙ্গমঞ্চটি আধুনিক হচ্ছে। ২০-২৪ ডিসেম্বর ‘অবন মহল’-এ সংস্থার বাৎসরিক অনুষ্ঠান। জহর সরকারের উদ্যোগে এ বছর ছোটদের জন্য একটি চলচ্চিত্র উৎসবেরও আয়োজন করা হয়েছে।
|
স্মরণ |
শান্ত নির্ভার মানুষ, নিশ্চয়ই কোনও সাহিত্যের দায় নেই, ঢিলেঢালা ভালমানুষ চেহারা নিয়ে হেঁটে চলেছেন পথে, আর কারুর সঙ্গে দেখা হলেই কথা বলছেন সহমর্মিতায়— নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের (জন্ম ১৯৩৭, মৃত্যু: ১৮ অক্টোবর ২০১৩) কথা উঠলে এই ছবিটাই ভেসে আসবে প্রথমে। আমাদের মধ্যে ছিলেন তিনি, যুক্তির বিচার যার কাছে ছিল জীবনেরই অন্য এক নাম। তিনি মানতেন না বয়স আর মতের কোনও অসমতা, শিশুর কৌতূহল নিয়ে সবারই কাছে এগিয়ে যেতে জানতেন জানার গরজে, তার মনের সামীপ্যে এসে বসতে পারা মানেই ছিল যেন জীবনকে আরও একটু ভালবাসতে শেখা। চারপাশের বৃহৎ সব প্রকল্পচিন্তা থেকে সরে এসে এক সময় গড়ে তুলেছিলেন নির্জন ভুবন— আর সেখান থেকেই রচনা করে গিয়েছেন আশ্চর্য সব কবিতা, গদ্য, আত্মকথা, যা ধীরে ধীরে তৈরি করেছে সম্ভ্রান্ত এক নির্বাচিত পাঠকবৃত্ত। অনুরাগীরা বেদনার্ত মন নিয়েই সম্প্রতি আয়োজন করেছিলেন পরিপূর্ণ অথচ পরিচ্ছন্ন এক স্মৃতিসভার। পারমিতা ভট্টাচার্যের রবীন্দ্রগান, গুণমুগ্ধদের নিঃশব্দ ‘শব্দচিহ্নে’ সৌন্দর্যময় এক জীবনের ছবি ফুটে উঠল। কালীকৃষ্ণ গুহ, সেলিম মল্লিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল তাঁর নির্বাচিত রচনা সংকলনও।
|
অসম্পূর্ণ |
স্বপ্ন ছিল ক্যামেরার পিছনে দাঁড়ানোর। নন্দন-এর আড্ডার ভেতর থেকে উঠে আসছিল যে স্বপ্ন তা থেকেই জন্ম নিল ‘প্রতিচ্ছবি’। এই সংগঠনেরই সদস্য ছিলেন শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (লালু)। গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয় করতে করতেই পাড়ি পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে পড়তে। ১৯৯২-এ বম্বে শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত থার্ড থিয়েটার নিয়ে ‘পাখিরা’ এবং সোমনাথ হোরের কাজের উপর ‘দ্য উন্ডস’-এর ক্যামেরার জন্য প্রশংসিত হন। এর পর অশোক বিশ্বনাথন-এর পূর্ণ দৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র ‘কিছু সংলাপ কিছু প্রলাপ’-এ ক্যামেরায়। তবু কোথাও একটা অতৃপ্তি কুরে কুরে খাচ্ছিল লালুকে। যুক্ত হয়েছিলেন ‘প্রতিচ্ছবি’-কে কেন্দ্র করে তথ্যচিত্র নির্মাণে। ৪ ডিসেম্বর চলে গেলেন লালু, অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রেখে।
|
নির্যাতন রুখতে |
প্রগতিশীলতার পায়ে পায়ে খাঁচার পাখি আকাশে উড়বেই। কিন্তু সেই আকাশই যদি হয় পাখির ডানা ছেঁটে ফেলার মস্ত পরিসর, তবে তো পাখিটিকে রক্ষা করার উপায় আকাশেই তৈরি হতে হবে জীবনের নিয়মে। মহিলা সংগঠন ‘স্বয়ম’ নারীকে তার নিজস্ব পরিসরে নির্যাতন থেকে রেহাই দেওয়ার লক্ষ্যে কর্মিষ্ঠ। এদের সহায়তা কেন্দ্রে সামগ্রিক পরিষেবার মধ্যে আছে মানসিক স্বাস্থ্য, ড্রপ-ইন-সেন্টারের সুবিধা, আইনি পরামর্শ ও অনুদান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, আরও নানা কিছু। তাদেরই মুখপত্র ‘প্রয়াস’-এর পঞ্চাশতম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে। যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত নতুন আইন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা ‘প্রয়াস’কে সমৃদ্ধ করেছে। ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর স্বয়ম পালন করল ‘আন্তর্জাতিক নারী ও কন্যা নির্যাতন বিরোধী পক্ষকাল’। ২৬ নভেম্বর পণ-বিরোধী দিবসে মেটিয়াবুরুজে পণবিরোধী প্রচারের পাশাপাশি পণ না-দেওয়া ও না-নেওয়ার শপথ নেওয়া হয়। এ দিকে সারা দেশে যে ভাবে নারী নির্যাতন চলছে তা নিয়ে ছবি করেছেন উদয়ন নামবুদ্রি, ‘দ্য গার্ল হু লস্ট হার নেম’, হালে দেখানো হল ম্যাক্সমুলার ভবনে। প্রযোজক অরোরা-র পক্ষ থেকে অঞ্জন বসু জানালেন: আধুনিক ভারতে আর কতদিন পুরুষের এই ঘৃণ্য আদিম অপরাধ চলবে, সে প্রশ্নই তোলা হয়েছে ছবিটিতে।
|
কলাক্রান্তি |
থিয়েটারের প্রতি ভালবাসা থেকেই আশির দশকের প্রথম দিকে তৈরি হয়েছিল কলাক্রান্তি। উদ্যোক্তাদের অনেকেই অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। বিদেশি সিনেমা দেখানো বা সেমিনারের পাশাপাশি মঞ্চস্থ হত নাটক। পণপ্রথার বিরুদ্ধে নাটক ‘গৃহবধূ’ দারুণ জনপ্রিয় হয়। ইতিমধ্যে ‘শাহজাহান’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর মতো ২৮টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে ‘কলাক্রান্তি’। পাশাপাশি নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে গৌরীকণা দেবীর স্মৃতিতে শুরু হয় নানা ভাষার নাটকের প্রতিযোগিতা। গোড়ায় উপদেষ্টা ও বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন এন বিশ্বনাথন। এ বার কুড়ি-তম প্রতিযোগিতাটি হবে ২১-২২ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ে। নয়টি নাটকের মধ্যে বাংলা ছাড়া থাকবে ইংরেজি, মালয়ালম, ওড়িয়া ও তেলুগু ভাষার নাটক। সম্মান জানানো হবে প্রবীণ অভিনেতা চপল ভাদুড়িকে। এ বছর বিনোদিনী-র জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সম্প্রতি কলাক্রান্তি মঞ্চস্থ করেছিল ‘শ্রীমতী বিনোদিনী’।
|
কল্যাণী নাট্যোৎসব |
|
‘টিন এজ’ শেষ করে যুবক হতে চলেছে কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের নাট্যোৎসব, এ বছর ১৯তম। ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় কল্যাণীর ঋত্বিক সদনে শুরু হচ্ছে, ২৬ অবধি চলবে। প্রথম দিন কাউন্টার খুলেই বিক্রি ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার টিকিট, টিকিটের দাম ৬০-এর বেশি নয়, উল্লেখটা দর্শকরা এ-উৎসবে কতটা যুক্ত তা বোঝানোর জন্যে। নিজেদের প্রযোজনা ছাড়া সায়ক, উদয়ন, অন্য থিয়েটার, নান্দীপট, সংস্তব, রঙরূপ, স্বপ্নসন্ধানী, নয়ে নাটুয়া, প্রাচ্য, বহুরূপী, নান্দীকার... সব মিলিয়ে এক ডজনের ওপর নাটক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতা থেকে ৫০ কিমি দূরের এই এলাকা ছিল মিত্রশক্তির অন্যতম বিমানঘাঁটি, নাম ছিল রুজভেল্ট টাউনশিপ। তার পর বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্ন বেয়ে নতুন শহরের জন্ম। সেই শহরে এই নাট্যগোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রায় দুই দশক ধরে নাটকের উড়ান! এ বারে ওদের নতুন নাটক ‘গোড়ায় গলদ’, সঙ্গে তারই দৃশ্যে সুপর্ণা মৈত্র।
|
উদ্ধার |
যৌন ব্যবসার জন্য পাচার হওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার সময় কেন ‘উদ্ধার’ হয়েছে বলা হবে? সে তো পতিত হয়নি! ‘সংলাপ’ আয়োজিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর ভারতে বাণিজ্যিক যৌন ব্যবসার উদ্দেশ্যে নারী পাচার প্রতিরোধ’ বিষয়ক আলোচনাচক্রে যথার্থ প্রশ্ন তুললেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা তুলে ধরলেন সীমান্তে কী কী চ্যালেঞ্জের সামনে তাঁদের পড়তে হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অভিযোগের কিছুটা তাঁরা পরোক্ষে মেনেও নিলেন।
|
শ্রদ্ধার্ঘ্য |
|
গানের জগতে তিনি অবিসংবাদী শচীনকত্তা। তাঁর সুর আজও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কিন্তু তাঁর হিন্দি সিনেমার গান নিয়ে যত চর্চা বাংলা গান নিয়ে তার প্রায় কিছুই নেই। সম্প্রতি শচীন দেববর্মনের গাওয়া আটটি লোকসঙ্গীত নতুন করে রেকর্ড করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রাণেশ সোম। সিডিটি প্রকাশিত হয়েছে হিন্দুস্থান রেকর্ড থেকে। পাশাপাশি শচীন দেব ও রাহুল দেব দুই বর্মনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের সুর দেওয়া গান নিয়ে যন্ত্রসঙ্গীতের একটি অনুষ্ঠান করছে ‘সেন্টারস্টেজ এন্টারটেনমেন্ট’। ২২ তারিখ সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে সেই অনুষ্ঠান, সন্ধে সাড়ে ছ’টায়।
|
স্রোতের বিরুদ্ধে |
পাভলভপন্থী ডাক্তার ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু চিকিৎসক ও মনোরোগবিদ ছিলেন না, সংস্কৃতি ও মননজগতে তাঁর ছিল অনায়াস চলাফেরা। বিচ্ছিন্নতা-পীড়িত এই সমাজ থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সুস্থ এক সমাজ গঠন নিয়ে অনেক ভেবেছিলেন তিনি। অনেক বিষয়েই স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতরাবার হিম্মত ছিল তাঁর। ‘মানবমন’ পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলি ছিল তার উজ্জ্বল বাহন। সংগত কারণেই তাই পাভলভ ইনস্টিটিউট ও ‘মানবমন’ পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত এ বারের ডাক্তার ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতার বিষয় ‘কমিউনিস্ট পার্টিতে বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা’। বক্তা মানিক মুখোপাধ্যায়, ২০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে।
|
মুদ্রা উৎসব |
|
স্বামীজির সার্ধশতজন্মবর্ষ উপলক্ষে দিল্লিতে প্রকাশ পেল ৫ টাকা (সঙ্গের ছবি) ও ১৫০ টাকার স্মারক মুদ্রা। এর নকশা করেছেন কলকাতা টাঁকশালের শিল্পীরা। অথচ মুম্বই-হায়দরাবাদ মিন্ট থেকে এই মুদ্রা পাওয়া গেলেও সেটি এখনও অমিল কলকাতায়। ২০ ডিসেম্বর বালিগঞ্জ পার্কের হলদিরাম ব্যাঙ্কোয়েটে শুরু হচ্ছে ‘মুদ্রা উৎসব ২০১৩’, সেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্টলে পাওয়া যাবে এই স্মারক মুদ্রা। স্বামী বিবেকানন্দের স্মরণে কলকাতা মুদ্রা পরিষৎ আয়োজিত এই ১৭তম বার্ষিক উৎসব ও আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দ, সকাল ১০টায়। থাকছে দুষ্প্রাপ্য মুদ্রার প্রদর্শনী, ২২ পর্যন্ত, ১০-৬টা। ওদিকে বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহশালায় আগামী কাল সকাল ১১টায় শুরু হচ্ছে বিবেকানন্দের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী। সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিবেকানন্দ-কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা। চলবে ১৯ তারিখ পর্যন্ত।
|
দিনগুলি মোর |
পাশ করবে বিকম/সে কি চাট্টিখানি কথা/পরীক্ষাটি দিতে হলে ছোটো কলিকাতা...’ নিজেরই লেখা নানা ছড়াকে পরিচ্ছেদে পরিচ্ছেদে শিরোধার্য করেছেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ১৩ ডিসেম্বর আশি পেরোলেন বাংলা গানের এই কিছুটা আড়ালে থাকা শিল্পী। সে দিনই সন্ধেয় তাঁর বাড়িতে ঘরোয়া আসরে প্রকাশিত হল তাঁর আত্মজীবনী দিনগুলি মোর (প্রতিভাস, ৩০০.০০)। তাতে সুখপাঠ্য গদ্যে নিজের জীবন, গানের জীবন। লাট্টু আর ডাংগুলি খেলতে মাঠে ভিড় জমানোর দিন হঠাৎ বদলে গেল গ্রামোফোন রেকর্ডের গৃহকোণে। চুঁচুড়ার ডাফ মিশন হাইস্কুলের ছাত্রটির রবিবার তখন বড়দার কিনে আনা গ্রামোফোন রেকর্ডে কাটে। কলেজে ঢুকে টুকটাক গান গাওয়া শুরু। প্রথাগত শিক্ষার শুরু ১৯৫৩-য় সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে এই শহরেই, একডালিয়া প্লেসে। কলেজ স্ট্রিটের মেসে বিকেলের আড্ডাধারী দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দিনেন চৌধুরী। তখনই লেখা, ‘বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায়, বিনা কারণে’। জটিলেশ্বর বললেই অধিকাংশের মনে পড়ে ওই গানটা। কিন্তু বাংলা গানের ভুবনে ওঁর আরও অনেক উপহার আছে। ‘বনের পাখি মনের মতো হয় না’, ‘কৃষ্ণকুমারী’র নৃত্যগীতিনাট্যরূপ দিতে গিয়ে লেখা অনেক গান। সুধীন দাশগুপ্তের সুরে গেয়েছেন বহু জনপ্রিয় গান। তবে খুব বেশি রেকর্ড করেননি বাংলা কাব্যসঙ্গীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র।
|
|
|
|
|
ভাষাবিজ্ঞানী |
সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকের জীবন শুরু করেন পরেশচন্দ্র মজুমদার। ১৯৭৪-এ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগে যুক্ত হন। অবসর পর্যন্ত পড়িয়েছেন সেখানেই। কিন্তু আজীবন তাঁর মূল চর্চা ছিল ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সুকুমার সেনের কাছে যে প্রথাগত চর্চার শুরু তাই ক্রমে গিয়েছে নিজের পথে, নতুন গবেষণায়। বঙ্গভাষা ও সাহিত্য এবং তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব দুই বিষয়েই স্নাতকোত্তর এই ভাষাবিজ্ঞানবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকও পান। আ হিস্টরিক্যাল ফোনোলজি অব ওড়িয়া গ্রন্থের জন্য ডি লিট পেয়েছেন। বাংলায় সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার ক্রমবিকাশ বইয়ের জন্য রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার পান। লিখেছেন বাংলা ভাষা পরিক্রমা, আধুনিক ভারতীয় ভাষা প্রসঙ্গে, পৃথিবীর ভাষা, ইন্দো-ইউরোপীয় প্রসঙ্গ, বাংলা বানানবিধি-র মতো বহুচর্চিত বই। সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার সময়েই ফুলব্রাইট বৃত্তি পান, কিন্তু পারিবারিক কারণে নিতে পারেননি। যুক্ত ছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা আকাদেমি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিষদ, বাংলা বানান সমিতি-র সঙ্গে। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ‘নব চর্যাপদ’ আবিষ্কার করলেন তখন তার ভাষাবিচার করেন তিনি। শুধু ভাষাতত্ত্ব নয়, বাংলা সাহিত্যের শৈলীবিজ্ঞানগত বিচারের কাজ করেছেন পুত্র অভিজিৎ-এর সঙ্গে। জার্মান গল্প অনুবাদে ব্যস্ত ছিলেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। লিখছিলেন আত্মজীবনীও, তা আর শেষ হল না। |
|
|
|
|
|
|