বিনোদন জনপ্রিয়তার জোয়ারেই সামাজিক বার্তা পারির
গে খাওয়া-দাওয়া সারতে বেজে যেত রাত এগারোটা। এখন সাড়ে ন’টার আগেই সেই পাট চুকিয়ে টিভির সামনে বসে পড়েন মণি চট্টোপাধ্যায়। গৃহবধূ। যতই কাজ থাক, ওই সময় টিভির সামনে বসা চাই অর্পিতা ঘোষেরও। তিনি কর্মরত এক তরুণী।
কিন্তু দু’জনেরই আকর্ষণের কেন্দ্রে টেলি ধারাবাহিকের একটি অটিস্টিক চরিত্র!
মেয়েটি রেগে গেলেই চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলে। মুখে কুকথার স্রোত। আবার সে-ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। অন্যের কষ্টে চোখে জল টলটল। পার্শ্বচরিত্র হিসেবে শুরু হলেও এই ‘পারি পাগলি’ এখন জনপ্রিয়তায় কয়েক কদম পিছনে ফেলে দিয়েছে ধারাবাহিকের মূল চরিত্রগুলিকেও।
শুধু টিভি ধারাবাহিক কেন! এই ধরনের মানসিক ও শারীরিক ভাবে ‘অন্য’ রকম চরিত্র যখন বড় পর্দাতেও এসেছে, বেশির ভাগ সময়েই তারা সুপারহিট। ‘সাদমা’, ‘কোই মিল গয়া’, ‘তারে জমিন পর’, ‘পা’ বা ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মতো বাজারসফল ছবির কেন্দ্রে রয়েছেন এই সব ভিন ধারার চরিত্রই। তবে এই জাতীয় বেশির ভাগ ছবিতে এই চরিত্রগুলোই কেন্দ্রে থাকে। পারি কিন্তু পার্শ্বচরিত্র।
পারির চরিত্রে অপরাজিতা আঢ্য।
তার সঙ্গে অনেক বেশি মিল রয়েছে ‘পারমিতার একদিন’ ছবির খুকুর। মানসিক ভাবে ‘অন্য’ রকম খুকুর চরিত্রে অভিনয় করেই সেরা সহ-অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার ঝুলিতে পুরে ফেলেছিলেন সোহিনী সেনগুপ্ত।
কেন এত হিট এই চরিত্ররা?
পর্দার এই চরিত্রদের দেখে তথাকথিত অন্য রকম মানুষের প্রতি দর্শকের সচেতনতা বাড়ে এবং তার জেরেই চরিত্রগুলি জনপ্রিয় হয় বলে জানাচ্ছেন মনোবিদরা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন বললেন, “বছর দশেক আগেও বাবা-মায়েরা তাঁদের ১২-১৩ বছরের ছেলেমেয়েদের দেখাতে আনতেন। এখন আনেন দু’-তিন বছর বয়সেই। আগে ওঁরা ভাবতেন, বড় হলে সমস্যা মিটে যাবে। তাঁরা এখন এই ভুল করেন না। এই সচেতনতা বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে পারির মতো চরিত্র।” মানুষের কাছে ‘পারি পাগলি’ বা ‘তারে জমিন পর’-এর সদর্থক ভূমিকা রয়েছে বলে মানছেন মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও। তবে তাঁর অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। তিনি বলেন, “মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে এই সচেতনতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। উচ্চবিত্তরা কিন্তু এই ধরনের আত্মীয়দের কথা প্রকাশ্যে বলতে লজ্জা পান। রোগীকে কাজের লোকের সঙ্গে চেম্বারে পাঠিয়ে নিজে গাড়িতে বসে রয়েছেন, এমনও দেখেছি।”
মণি বা অর্পিতার মতো দর্শকরা কবুল করছেন, পারিকে দেখে তাঁরা অনেক কিছু নতুন করে ভাবছেন। অনেক ধারণা বদলে যাচ্ছে। ধারবাহিকটির লেখক তথা পারির স্রষ্টা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ রকম অটিস্টিক একটি চরিত্র তৈরি করার সময়ে সামাজিক বার্তা দেওয়ার কথাই ভেবেছিলেন তিনি।
তবে পারির চরিত্রটি কি বাস্তবের অটিস্টিক রোগীর সঙ্গে মেলে? নীলাঞ্জনা, মল্লিকা দু’জনের কেউই কিন্তু তা মনে করেন না। নীলাঞ্জনা বলেন, “অটিস্টিকদের প্রধান সমস্যা হল নিজেকে প্রকাশ করতে না পারা এবং কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে না পারা। এর একটি লক্ষণও পারির মধ্যে নেই।” মল্লিকার কথায়, “কোনও অটিস্টিক রোগী পারির মতো আচরণ করতে পারে না। পারি যে রকম সূক্ষ্ম ভাবে ন্যায়-অন্যায় বিচার করছে, তা অটিস্টিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।” তাই দুই মনোবিদের পরামর্শ, পারির মতো চরিত্র মানুষের মনে প্রভাব ফেলে বলেই যথেষ্ট পড়াশোনা করে তবে এ ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করা উচিত। না হলে মানুষের কাছে ভুল বার্তাও যেতে পারে।
সাধারণ দর্শক অবশ্য পারিতেই মজে রয়েছেন। তাঁদের মতে অপরাজিতা আঢ্যর অভিনয়ই চরিত্রটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। অপরাজিতার নিজের কথায়, “বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে পারির মতো মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের অনেকের বাড়িতেই এই রকম মানুষ আছেন। তাই পারিকেও দর্শক ভালবেসে ফেলেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.