জেলে ঢুকে মৃত্যু প্রেমিকের, ‘মৃত’ প্রেমিকাও
শ্যালিকার প্রেম ছিল বাড়ির অপছন্দের এক যুবকের সঙ্গে। অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ যুবককে পিটিয়ে বর্ধমানের একটি স্টেশন থেকে মালগাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন জামাইবাবু। হাওড়ায় বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে ধরা পড়ে তিনি জেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, যুবকের মৃত্যুসংবাদ গ্রামে এসে পৌঁছনোর পরেই জামাইবাবুর বাড়িতে গলায় দড়ি দেন যুবতী। কিন্তু রাতেই তড়িঘড়ি তাঁর মৃতদেহ কবর দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দুই বাড়ির তরফে অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ শনিবার রাত পর্যন্ত যুবতীর জামাইবাবু রবু শেখকে ধরতে পারেনি। আজ, রবিবার পুলিশ মৃতদেহের খোঁজে কবর খুঁড়বে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের ভাতারে এরুয়ার গ্রামে দুই যুবক-যুবতীর দীর্ঘদিন ধরেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ছেলেটির বয়স ২০ বছর, মেয়েটির ১৮। কিন্তু দুই বাড়ির লোক তাদের সম্পর্ক মানতে রাজি ছিলেন না। দিন ১০-১২ আগে দু’জনে বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে স্থানীয় রামপুর গ্রামে যুবকের পিসির বাড়িতে যান। কিন্তু তিনিও তাঁদের সম্পর্ক না মানায় সপ্তাহখানেক আগে আউশগ্রামের পিচকুড়ির ঢাল এলাকায় মেয়েটির পিসির বাড়িতে তাঁকে রেখে আসেন যুবক।
আলাদা থাকলেও পিচকুড়ির ঢাল স্টেশন এলাকায় দু’জনে নিয়মিত দেখা করতেন। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, তা জানতে পেরে যুবতীর জামাইবাবু, এরুয়ার গ্রামেরই বাসিন্দা রবু শেখ গত ৮ ডিসেম্বর কয়েক জন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হয়। দু’জনে দেখা করতে এলে তারা রড-লাঠি নিয়ে যুবকের উপরে চড়াও হয়। এক জন যুবতীর মুখ চেপে রাখায় তিনি চোখের সামনে যুবককে বেধড়ক মার খেতে দেখেও চিৎকার করতে পারেননি। আহত যুবককে পরে পিচকুড়ির ঢাল স্টেশনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা হাওড়াগামী মালগাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। শ্যালিকাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখে রবু।
হাওড়া রেলপুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিনই বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে হাওড়া স্টেশনে যুবকটিকে ধরে রেল রক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। জরিমানা দিতে না পারায় আরপিএফ তাঁকে গ্রেফতার করে হাওড়া আদালতে তোলে। তাঁকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। রেলপুলিশ সূত্রের দাবি, জেলেই তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও তার প্রমাণ মিলেছে। বুকে-মাথায়-ঘাড়ে ব্যথা ও শ্বাসের কষ্ট নিয়ে ১১ ডিসেম্বর, বুধবার বেলা সাড়ে ১১ নাগাদ তাঁকে হাওড়া জেলা সদর হাসপাতালে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করান জেল কর্তৃপক্ষ। দু’দিন পরে, শুক্রবার তিনি মারা যান। রেলপুলিশ ভাতার থানায় যুবকের ভর্তি থাকার খবর দিয়েছিল। পুলিশ বাড়িতে খবর দেয়। যুবকের বাড়ির লোকজন হাওড়া হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন, তিনি মারা গিয়েছেন। রবু শেখের বাড়িতেও সেই খবর পৌঁছয়। যুবতীর বাড়ির অভিযোগ, সন্ধ্যায় জামাইবাবুর বাড়িতেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। কিন্তু সেই খবর জানাজানি হওয়ার আগে রাতেই বাড়ির পাশে গর্ত খুঁড়ে রবু মৃতদেহ কবর দিয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও গ্রামে বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। শনিবার যুবক ও যুবতী, উভয়ের বাড়ির তরফেই রবু শেখের বিরুদ্ধে ভাতার থানায় মারধর ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন। রবুর স্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর বোন কোথায় তা তিনি জানেন না। কবর দেওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেননি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “রাত পর্যন্ত রবু শেখের খোঁজ মেলেনি। কবরে দেহ থাকলে রবিবার তা তুলে ময়না-তদন্তে পাঠানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.