তাঁদের সম্পর্ক ঘিরে বিতর্ক আজকের নয়। যুগের পরে যুগ পেরিয়েও তাঁদের প্রেম জাগিয়ে রেখেছে অদম্য কৌতূহল।
আর সেই আগ্রহ থেকেই নেহরু-এডুইনার প্রেম নিয়ে কখনও লেখা হয়েছে বই। সেই রসায়ন ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে ফিল্মেও। যদিও সে প্রয়াস সফল হয়নি। আর এ বার সেই দুই ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে আলো ফেলতে লন্ডনের নাট্যকার হাওয়ার্ড ব্রেনটন বেছে নিয়েছেন থিয়েটারের মঞ্চকে।
দেশভাগ নিয়ে তাঁর নতুন নাটক ‘ড্রয়িং দ্য লাইন’ হ্যাম্পস্টেড থিয়েটারে দেখানো শুরু হয়েছে গত কাল থেকে। চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শেষ ভাগ এবং ভারত ভাগ নিয়ে লেখা আলেক্স ফন তুনজেলমানের ‘ইন্ডিয়ান সামার: দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব দি এন্ড অব অ্যান এম্পায়ার’ বইটি কিছুটা ছুঁয়ে গিয়েছিল ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আর এডুইনা মাউন্টব্যাটেনের প্রেমের দিনগুলো। |
নেহরু ও এডুইনার ভূমিকায় সিলাস কার্সন এবং লুসি ব্ল্যাক। ছবি: ক্যাথরিন অ্যাশমোর। |
যার উপরে ভিত্তি করে হলিউড পরিচালক জো রাইট তৈরি করতে চেয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সামার’। অভিনয় করার কথা ছিল কেট ব্লশেঁ এবং হিউ গ্রান্টের। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে ভারত সরকারের আপত্তি ছিল ফিল্মে নেহরু-এডুইনার চরিত্রের ঘনিষ্ঠ কিছু দৃশ্য নিয়ে। ২০০৯ সালে অবশ্য সেই দৃশ্য বাদ দেওয়ার শর্তে ভারত অনুমতি দেয় ছবি করার। এর পরে বাধা হয়ে দাঁড়ায় খরচ। ঝুলেই থাকে ছবির ভবিষ্যৎ। একটি সূত্রের খবর, খরচের ধাক্কা সামলে আগামী বছর শু্যটিং শুরু হতে পারে ‘ইন্ডিয়ান সামার’-এর।
তার আগে ব্রেনটন ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন সেই প্রেমের স্মৃতি। তাঁর নাটকেরও মূল প্রতিপাদ্য দেশভাগ। তারই পরতে পরতে জড়িয়ে নেহরু-এডুইনার ঘনিষ্ঠতার কথা। আর এখানেই তো আপত্তি সবার। বলছেন ব্রেনটন। তাঁর কথায়, “নাট্যকার হিসেবে আমি জানি দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। তা সত্ত্বেও কি আমি ভাবতে বসব যে ওঁদের যৌন ঘনিষ্ঠতা দেখানো উচিত হবে, নাকি হবে না?” ব্রেনটন এই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। পড়েছেন প্রচুর চিঠি। তাঁর দাবি, সনিয়া গাঁধী বা নেহরুর পরিবার সেই ইতিহাসের অনেক কিছুই প্রকাশ হতে দেননি। ব্রেনটনের তাই নিজের কাছেই প্রশ্ন ছিল, “এডুইনা কি নেহরুর শয্যাসঙ্গিনী ছিলেন?” নিজের গবেষণা থেকে ব্রিটিশ নাট্যকারের ধারণা হয়েছে, “নেহরু এবং এডুইনার মধ্যে অবশ্যই ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তাঁদের সেই সম্পর্ক রক্ষা করার মতো যথেষ্ট সুযোগও ছিল। নেহরু ছিলেন বিপত্নীক। আর লেডি মাউন্টব্যাটেনের তো অনেক প্রেমিক, একাধিক সম্পর্ক।” ব্রেনটন তাঁর নাটকে দেখিয়েছেন নেহরু-এডুইনার প্রেমলীলার সাক্ষী দিল্লির ভাইসরেগাল প্যালেসের বিভিন্ন ঘর। ছাড় পায়নি সেখানকার ‘ব্রুম কাবার্ড’টাও!
শুধু প্রেম নয়, দেশভাগের নানা সঙ্কটময় মুহূর্তও তুলে ধরেছে এই নাটক। ব্রেনটন জানাচ্ছেন, “আমার নাটকটা ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি। গাঁধী, নেহরু আর জিন্না হচ্ছেন তিনটি মূল চরিত্র।” বিচারক সিরিল র্যাডক্লিফকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ভারতে পাঠিয়েছিলেন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত ঠিক করার দায়িত্ব দিয়ে। র্যাডক্লিফ কখনও ভারতে আসেননি। তিনি কোনও মানচিত্র নির্ণায়ক ছিলেন না, হাতে ছিল মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময়। এই সময়টাই নাটকের বিষয়। সীমান্ত তৈরির উত্তেজনা, নেতাদের পারস্পরিক টানাপোড়েন, র্যাডক্লিফের অভিজ্ঞতার মধ্যে থেকেই ব্রেনটন মঞ্চে এনেছেন তাঁর নেহরু আর এডুইনাকে।
বছর চারেক আগে স্ত্রীর সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন ব্রেনটন। দেশভাগের স্মৃতি এখনও যাঁদের তাড়া করে বেড়ায়, এমন অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছিলেন তাঁরা। ভারতের এক জন জানিয়েছিলেন, লাহৌরের বাড়ির চাবি এখনও তাঁর কাছে রয়েছে। লন্ডনে ফিরে এসে ব্রেটন খুঁজতে শুরু করেন দু’দেশের সীমান্ত তৈরির যন্ত্রণাদায়ক অধ্যায়ের শুরুটা কোথায়? সেই সূত্রেই র্যাডক্লিফের হাত ধরে তাঁর নাটকের ভাবনা।
ব্রেনটন দেখিয়েছেন, জিন্নার বিশ্বাস ছিল ব্রিটিশরা সব বড়, উন্নত শহর ভারতের জন্যই রাখবে। আর বঞ্চিত হবে পাকিস্তান। মঞ্চে চিন্তিত জিন্নাকে দেখা যায় হুইস্কি খেতে খেতে শব্দছক সমাধানে মাথা ঘামাচ্ছেন। আর এডুইনার সঙ্গে রঙিন মুহূর্তে উজ্জ্বল নেহরু। এর মাঝখানে গাঁধী সব কিছু থেকে দূরে অনশন নিয়ে ব্যস্ত। আর সীমান্ত তৈরি করতে র্যাডক্লিফের একটি খসড়ায় ফিরোজপুর ছিল ভারতের অংশ। পরে তিনি সেটির সংশোধন করে পাকিস্তানকে দেন ফিরোজপুর। এর মধ্যে কলকাঠি নাড়েন লেডি মাউন্টব্যাটেন। স্বামীকে চাপ দিয়ে র্যাডক্লিফের সঙ্গে দেখা করে বলেন ফিরোজপুর যেন ভারতেই থাকে। হয়েছিলও তা-ই। ব্রেনটন তাঁর নাটক নিয়ে শেষে বলেন, “এটা সুন্দর কোনও গল্প নয়। কিন্তু এই গল্পটা থেকেই আমার দেশটাও তৈরি হয়েছে। সেই ইতিহাসটা যেন আমাদের মনে থাকে।” |
শহরে সানি লিওন। নিজের অভিনীত একটি
ছবির প্রচারে। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
একটি পত্রিকার প্রচার অনুষ্ঠানে
ইয়ামি গৌতম। মুম্বইয়ে। ছবি: এএফপি। |
|