|
|
|
|
|
|
কুবের উবাচ |
ঋতুপর্ণা মুখোপাধ্যায় (৩০) • স্বামী (৩৫) • ছেলে (৩)
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী • স্বামীও কেন্দ্রীয় সংস্থায় • অফিসে পিএফ আছে • রয়েছে নিউ পেনশন স্কিমের সুবিধা
• চান ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে • ইচ্ছে, সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি • লক্ষ্য, সচ্ছল অবসর |
|
মাসে নিট আয় |
• বেতন
২২,০০০
|
|
সম্পদ |
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৫০,০০০
• এনএসসি (৬টি) ২,০৮,৪২১
(২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত)
• স্থায়ী আমানত ৬৪,৭৯৫ (২০১৫-য় পাবেন)
• স্থায়ী আমানত ৭৮,৯৮৫ (২০১৭-য় পাবেন)
• পিপিএফ ২,০০,০০০ |
খরচ (মাসে) |
• সংসারে খরচ ১০,০০০
• ব্যাঙ্ক লকার ভাড়া ৬৩.৬৭
• স্বাস্থ্যবিমা ১২৫ (বিমা মূল্য ১.২৫ লক্ষ) |
সঞ্চয় (মাসে) |
• জিপিএফ
১,৭০০
• পিপিএফ
৩,০০০
• জীবন সরল
২,০৪১ (মেয়াদ ২০২৯, বিমা মূল্য ৫ লক্ষ) |
|
|
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
শৈবাল বিশ্বাস |
|
ধৈর্য, পরিশ্রম, পরিকল্পনা— এই সব নিয়েই বিশ্বের ক্রিকেটে জায়গা করে নিয়েছেন সচিন। তবে সবচেয়ে আগে যদি কোনও গুণের কথা বলতে হয়, তা হল তাঁর শৃঙ্খলা। ভাবছেন, সঞ্চয়ের কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ সচিন প্রসঙ্গ টানলাম কেন? কারণ, সঞ্চয় বা সচিন সাফল্যের মূল মন্ত্রই হল শৃঙ্খলা।
ঠিক যে-ভাবে পরিবেশ, পরিস্থিতি বুঝে কঠোর পরিশ্রম করে রান সংগ্রহ করেছেন সচিন। প্রয়োজনে নিয়েছেন ঝুঁকিও। সে ভাবেই লগ্নির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রেখে সঠিক পরিকল্পনা করতে না-পারলে তা প্রত্যাশিত ফল দেবে না। আর ঝুঁকি নিতে হলে আগে নিজের লক্ষ্যগুলি সাজিয়ে নিতে ও সেই অনুসারে এগোতে হবে।
এ বার আসি আজকের প্রোফাইলে। ঋতুপর্ণা এবং তাঁর স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। ঋতুপর্ণার অনুরোধ মেনে এখানে তাঁর প্রোফাইল নিয়েই আলোচনা করব। দেখব তিনি কী ভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। |
গৃহঋণের শর্ত |
ঋতুপর্ণা একটি ফ্ল্যাট কিনতে চান। তার জন্য তিনি ও তাঁর স্বামী আলাদা ঋণের আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে আমরা তাঁর বেতন ধরেই সেই হিসাব করব। সাধারণ ভাবে ব্যাঙ্কগুলি মাসের নিট বেতনের ৫০% কিস্তি মঞ্জুর করে। তবে প্রত্যেকটি ব্যাঙ্কের নিজস্ব মাপকাঠি থাকে, যার ভিত্তিতে তারা ঋণ দেয়। এ জন্য তারা গ্রাহকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও সংসারের দায় যাচাই করে থাকে। ফলে এ জন্য বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলুন।
মাসের শেষে তাঁর হাতে ৫,০০০ টাকা থাকে। সেই টাকা দিয়ে তিনি ঋণের কিস্তি মেটাতে পারবেন। ২০ বছরের মেয়াদে ৫ লক্ষ টাকার মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ৪,৯৯১ টাকা (১০.৫% সুদ ধরে)। অনেক ব্যাঙ্ক গ্রাহকের বয়সের উপর ভিত্তি করে ২৫ বা তার বেশি মেয়াদেও ঋণ দেয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য ঋণের অঙ্ক ৫ লক্ষের থেকে বাড়তে পারে। |
ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্ট |
তৈরি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে ডাউনপেমেন্টের জন্য জমানো টাকা ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। সে জন্য তিনটি আলাদা লগ্নি থেকে কিছুটা টাকা তুলে বা ঋণ নিতে হবে। এর মধ্যে থাকছো—
১) সেভিংস অ্যাকাউন্টের টাকা।
২) স্থায়ী আমানতের টাকা
মেয়াদ শেষের আগে তুলে নেওয়া বা তা থেকে ঋণ নেওয়া।
৩) এলআইসি-র প্রকল্পটি থেকে কিছুটা পরিমাণ ঋণ নেওয়া।
স্থায়ী আমানত এবং এলআইসি-র ঋণ দু’টি এনএসসিগুলি থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে মেটাতে পারবেন।
আর ফ্ল্যাট যদি তৈরির পথে থাকে, সে ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এনএসসি-র টাকা কাজে লাগতে পারবেন। |
ভবিষ্যতের সঞ্চয় |
মাসিক কিস্তি দেওয়ার পর বর্তমান অবস্থায় তাঁর হাতে এমন কোনও খরচ নেই, যা কমানো যেতে পারে। ফলে আপাতত নতুন করে তাঁর লগ্নিরও জায়গা থাকছে না। তবে, কয়েকটি পরামর্শ দিয়ে রাখতে চাই—
১) বেতন বাড়লে প্রথমে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যবিমার অঙ্ক বাড়ান।
২) জীবনবিমার অঙ্ক বাড়াতে টার্ম পলিসি-র সাহায্য নিন। এই পলিসিতে আপনি টাকা ফেরত পাবেন না। কিন্তু জীবনের সুরক্ষা মেলে।
৩) এর পর অবশ্যই ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও ছেলের পড়াশোনার জন্য সঞ্চয় আরম্ভ করতে হবে। |
সুরক্ষা বনাম বেশি রিটার্ন |
ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, তিনি লগ্নির ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নন। যাতে তাঁর মূলধন সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু বর্তমান লগ্নি পরিকল্পনায় তাঁর মূলধন আদৌ সুরক্ষিত রয়েছে বলে আমি মনে করি না। তার কয়েকটি কারণ রয়েছে—
১) শাক-সব্জি, মাছ-মাংস সমেত সব পণ্যেরই দাম বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধি বাড়লে ঋতুপর্ণার সুরক্ষিত লগ্নি থেকে পাওয়া সুদের বেশির ভাগটাই তার পেটে চলে যাবে। ফলে নতুন করে লগ্নির জন্য হাতে টাকা থাকবে না। পাশাপাশি, খরচ বাড়ায় হাত দিতে হতে পারে মূলধনেও। তাই শুধুমাত্র সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নির মাধ্যমে সচ্ছল ভবিষ্যৎ আশা করা উচিত নয়।
২) বিভিন্ন বেতন কমিশনের সুপারিশ করা বেতনও মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না।
৩) সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে অনেক সময়েই আমরা নিজেদের জীবনযাত্রার মান কমাতে রাজি হই না। ফলে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খরচও বেড়ে যায় অনেকটাই।
৪) চিকিৎসা এবং পড়াশোনার খরচ আগামী দিনে আরও বাড়বেই।
৫) এখন সুরক্ষিত লগ্নিতে ভাল সুদ মিললেও, ভবিষ্যতে ব্যাঙ্ক বা এই ধরনের লগ্নির সুদ কমবে।
৬) সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক লগ্নি পরিকল্পনার অভাব দেখা যায়। ফলে তাঁদের রিটার্নও মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় কম।
এই সব কারণের জন্যই ঋতুপর্ণাকে আমি বলব, শেয়ার ভিত্তিক কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির কথা ভেবে দেখুন। আপনি ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নন, তাই খুব বেশি টাকা সেখানে রাখতে হবে না। কিন্তু এমন ভাবে লগ্নি ছড়িয়ে দিন, যাতে মূল্যবৃদ্ধি ছাপিয়ে মূলধন বাড়তে পারে।
এর পর ভবিষ্যতে বেতন বাড়লে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে লগ্নির প্রকল্প স্থির করুন। |
|
|
|
|
|