১৮৪২ সালে এই পুজো শুরু করেন খেলাতচন্দ্র ঘোষ। সাবেক বাংলা রীতির প্রতিমার গায়ের রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। পরানো হয় ডাকের সাজ। আর প্রতিমার চালি সূর্যাকৃতি, তামার তৈরি। দেবীর বাহন এখানে পৌরাণিক সিংহ। ডান দিকে নারদ মুণি, বাঁ দিকে নীলকণ্ঠ ভৈরবের মূর্তি থাকে। এক দিনে তিনবার পুজো ছাড়াও রাজসিক ভাবে হয় সন্ধিপুজো। এক সময় বলিদানের প্রচলন থাকলেও এখন বাটা চিনির নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। এ ছাড়াএ পুজোয় হয় কুমারী পুজো ও কণকাঞ্জলি।
|
১৮০৬ সালে পুজো শুরু করেন রাধাকৃষ্ণ মিত্র। কাঠের সিংহাসনে দেবীর অধিষ্ঠান। দেবীর গায়ের রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। পরানো হয় ডাকের সাজ। পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী পুজোয় তীরকাঠি দিয়ে প্রতিমা ঘেরা, শ্রী, বরণডালা, কুলোর ব্যবহার এবং দেবীকে অর্ঘ্য নিবেদনের রীতি এখানে নেই। ঠাকুর সাজানো থেকে পুজোর কাজ কর্ম করেন বাড়ির লোকেরাই। আগে বলিদান হলেও এখন বলিদানের পরিবর্তে নতুন রেকাবিতে বাটা চিনির নৈবেদ্য দেওয়া হয়। বিশেষ উল্লেখযোগ্য দশমীতে বাড়ির মেয়ে-বউরা নয় দেবীকে বরণ করেন পুরহিত। |
দু’শো পেরনো এই পুজোর প্রতিমা সাবেক রীতির। পৌরাণিক সিংহ থাকে লম্বালম্বি বা সোজাসুজি ভাবে। পুজো শুরু করেন বিশ্বনাথ মতিলাল। পুজোয় দেবীকে অন্ন ভোগ নিবেদন করা হয়। এ ছাড়াও থাকে লাউচিংড়ি, খিচুড়ি, লুচি, নানা রকম ভাজা, মাছ, পায়েস ইত্যাদি। ধুনো পোড়ানো আর দশমীর দিন কণকাঞ্জলির ঐতিহ্য আজও অটুট।
|
প্রায় একশো আশি বছরের পুরনো এই পুজো শুরু করেন শ্রীনাথ দাস। সাবেক রীতির ডাকের সাজের প্রতিমার দু’পাশে থাকে জয়া বিজয়া। চালিতে থাকে একটি ঘড়ি, আর তার দু’পাশে থাকে দুটি মাটির শঙ্খচিল। তার ঠিক দু’পাশে থাকে দু’টি পরি। তাদের হাতে থাকে পতাকা। পারিবারিক রীতি অনুসারে প্রতি বছর বিসর্জনের সময় পরি দু’টি বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। সেগুলি পরের বছর বিসর্জন দেওয়া হয়। |
দু’শো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই পুজো শুরু করেন দুর্গাচরণ দত্ত। পুজোয় আজও তিন মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। থাকে বাড়িতে তৈরি নানা রকম মিষ্টি। ১৯৬৭ থেকে পশুবলির পরিবর্তে ফল বলি হলেও, বলিদানের কিছু বৈশিষ্ঠ্য আছে। বলিদান হয় পুজোর দিন গোধুলি লগ্নে। পুরনো রীতি মেনে আজও বলিদানের সময় বাড়ির সদর দরজা বন্ধ থাকে। এ ছাড়াও কুমারী পুজো হয়।
|
শোভাবাজার বেনিয়াটোলা অঞ্চলের দাঁ পরিবারের জটাধারী দাঁয়ের উত্তরপুরুষ কাঞ্চনকুমার দাঁ সাবেক বাহির-সিমলা অঞ্চলের ‘মণিকাঞ্চনে’ পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পুজো আরম্ভ করেন। রাজবাড়ির আদলে কাঠের সিংহাসনের উপর দেবীর অধিষ্ঠান। প্রতিমার গায়ের রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। দেবীকে পরানো হয় কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজ। চালচিত্র ধাতু নির্মিত। পুজো হয় তন্ত্রমতে। পুজোয় দেওয়া হয় লুচি, ভাজা, তরকারি, চাটনি ও রাবড়ি।
|
১৯০০ সালে, ৭৭ বেনিয়াটোলা স্ট্রিটের বাড়িতে পুজো শুরু করেন বটকৃষ্ণ পাল। প্রতিমাকে পরানো হয় ডাকের সাজ। তবে প্রচলিত ডাকের সাজের থেকে আলাদা। প্রতিমার চালি গালাকৃতি তাতে থাকে ফল ও পাতা। দু’পা মুড়ে দেবী এখানে অধিষ্ঠান করছেন সিংহের উপর। পরানো হয় বেনারসি শাড়ি ও হরেক অলঙ্কার। সিংহের গায়ে লাগানো হয় আকন্দ তুলোর কোয়া। দেবীর দু’পাশে থাকে চার জন সখী। এক দিনে তিন বার পুজো ছাড়াও হয় সন্ধিপুজো। এতে আজও ব্যবহার করা হয় রুপোর বাসন। বিশেষ উল্লেখযোগ্য সন্ধিপুজোয় থাকে আধ মণ চালের নৈবেদ্য, গোটা ফল, ১০৮টি পদ্ম ও প্রদীপ। পুজোর পাশাপাশি বিসর্জনের শোভাযাত্রাও এই পরিবারের বিশেষ ঐতিহ্য।
|