বয়স হলেই বানপ্রস্থে যেতে হবে? পুরাণের এই পুরনো নিয়ম আধুনিক মানুষ আর মানতে রাজি নন। জীবনের এই তৃতীয় অধ্যায়টি মানুষ এখন আরও বেশি করে উপভোগ করতে চান।
তার অবশ্য কয়েকটি পূর্বশর্ত আছে। যেমন: সুস্থ শরীর, সবার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক, সমাজে সম্মান এবং অবশ্যই নিয়মিত আয়। এদের মধ্যে প্রথম এবং শেষটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শেষ শর্তটি সবার অনুকূলে থাকে না। এর ফলে প্রথম শর্তটিও অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ে। পশ্চিমের অনেক দেশে নানা রকম সামাজিক সুরক্ষা আছে প্রবীণদের জন্য। এ ব্যাপারে আমরা এখনও শৈশবেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ সুবিধার ব্যবস্থা হলেও সেগুলি না-জানা থাকায় এ থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে। আজ আমাদের চেষ্টা হবে সবগুলো সুবিধাকে এক জায়গায় এনে দেখার।
করছাড়
আয়কর আইন অনুযায়ী একজন মানুষ প্রবীণের সম্মান পান বয়স ৬০ হলে। তিনি করের ব্যাপারে যে-সব সুবিধা পেতে পারেন, সেগুলি হল:
১) প্রবীণদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে যাঁদের বয়স (সিনিয়র সিটিজেন) তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথম ২.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় পুরোপুরি করমুক্ত। অতি প্রবীণ নাগরিক (সুপার সিনিয়র সিটিজেন) অর্থাৎ যাঁদের বয়স ৮০ বা তার বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লক্ষ টাকা।
২) যে-সব প্রবীণের করযোগ্য আয় নেই, তাঁরা সময় মতো ১৫ এইচ ফর্ম দাখিল করলে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্য সুদ বাবদ আয় থেকে উৎসমূলে কোনও কর কাটা হয় না।
৩) একজন প্রবীণ নিজে স্বাস্থ্যবিমা কিনলে ৮০ডি ধারা অনুযায়ী প্রিমিয়াম বাবদ তিনি সর্বাধিক ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেতে পারেন। এই ছাড়ের অঙ্ক বাদ দেওয়া হবে তাঁর করযোগ্য আয় থেকে। একজন করদাতা যদি তাঁর প্রবীণ বাবা-মায়ের জন্য স্বাস্থ্যবিমা কেনেন, তবে তিনি নিজের পরিবারের স্বাস্থ্যবিমা বাবদ ১৫,০০০ টাকা ছাড়াও বাবা-মায়ের প্রিমিয়াম বাবদ ছাড় পাবেন আরও ২০,০০০ টাকা। করদাতা নিজেও প্রবীণ হলে তিনি মোট ছাড় পেতে পারেন ৪০,০০০ টাকা।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যবিমা প্রিমিয়াম জমা করার ব্যাপারে বিশেষ সজাগ থাকতে হবে। সময় থাকতে রিনিউ করা না-হলে পলিসি বাতিল হতে পারে। বয়স নির্দিষ্ট গণ্ডি পেরোলে নতুন পলিসি করা সম্ভব না-ও হতে পারে। যদিও বা হয়, পুরনো অসুখ পলিসির আওতা থেকে বাদ যাবে। সবথেকে ভাল হয়, যদি ৬০ পেরোনোর আগেই মেডিক্লেম পলিসি করিয়ে তা প্রতি বছর রিনিউ করে যাওয়া যায়।
বাড়তি সুদ
প্রবীণদের কাছে সুদ যেন শেষ জীবনের সহধর্মিণী। একে ছাড়া জীবন অচল। সুদের সামান্য হেরফের প্রভাব ফেলে অবসর নেওয়া মানুষের উপর। সুদ মাত্র ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়লেও পুরনো আমানত ভেঙে নতুন আমানত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এঁদের অনেকেই। পাড়ি দেন অন্য ব্যাঙ্কেও। ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের বারান্দায় চলে সুদ নিয়ে সুখ-দুঃখের আলোচনা। সব ব্যাঙ্কই এখন মেয়াদি আমানতে প্রবীণদের ২৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ দেয়। বয়স্করা ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিদের বলতে পারেন ওয়েবসাইট ঘেঁটে বলে দিতেকোন ব্যাঙ্ক সবথেকে বেশি সুদ দিচ্ছে। কোনও কোনও কোম্পানিও জমা প্রকল্পে প্রবীণদের বেশি সুদের ব্যবস্থা রেখেছে।
সঞ্চয় প্রকল্প
প্রবীণদের জন্য বিশেষ প্রকল্প আছে ডাকঘরে। নাম ‘সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম অ্যাকাউন্ট’। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এর বৈশিষ্ট্যগুলি।
• ৬০ বা তার বেশি বয়সের নাগরিক একক বা যুগ্ম নামে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ৫৫ বা তার বেশি বয়সে স্বেচ্ছাবসর নিলেও তা খোলা যাবে।
• ১,০০০ টাকার গুণিতকে এক বা একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা যায় একই ব্যক্তির নামে। সর্বাধিক জমা ১০ লক্ষ টাকা।
• প্রাথমিক মেয়াদ ৫ বছর হলেও তা আরও ৩ বছর বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
• মেয়াদ শেষের আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার ব্যবস্থা আছে শর্তসাপেক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু মাসুল গুনতে হবে।
• সুদের বর্তমান হার ৯.২%। দেওয়া হয় ৩ মাস অন্তর। নমিনেশনের ব্যবস্থা আছে।
• ৮০সি ধারায় মেলে করছাড়।
• প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসমূলে সুদ থেকে কর কেটে নেওয়া হয়।
• প্রকল্পটি অনাবাসীদের জন্য নয়।
• ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলে সুদ সেখানে জমা পড়তে পারে।
কম খরচে রেলভ্রমণ
চুল পাকুক আর না-ই পাকুক, প্রবীণরা কম ভাড়ায় রেলভ্রমণের সুবিধা পেয়ে থাকেন। ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের পুরুষেরা টিকিট কিনতে পারবেন ৪০% কম দামে। তবে মহিলারা প্রবীণের মর্যাদা পান ২ বছর আগে, ৫৮ হলেই। মহিলারা টিকিটের দামেও ছাড় পান ৫০%। সাধারণ সব ট্রেন ছাড়াও সুবিধা পাবেন রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত এক্সপ্রেসেও। প্রবীণদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে বড় সুবিধা।
|
নিজেদের নামে ভুয়ো ই-মেল নিয়ে সতর্ক করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক |
আরবিআইয়ের নামে ভুয়ো ই-মেল পাঠিয়ে তথ্য চুরির ফাঁদ পাতা হচ্ছে বলে সাবধান করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মেলটি <no-reply@rbi.com> থেকে পাঠিয়ে বলা হচ্ছে, অনলাইনে গ্রাহকের তথ্য যাতে চুরি না-যায়, সে জন্য নয়া ব্যবস্থা এনেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। রঘুরাম রাজনের জবানিতে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতিও থাকছে। এ রকম মেল না-খোলার পরামর্শ দিয়েছে তারা। |