দিন তিনেক আগেই তিনি কাটোয়ায় কংগ্রেস কর্মীদের হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। শনিবার সেই কাটোয়াতেই কংগ্রেস অফিস থেকে সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে রাতে বাড়িতে চড়াও হওয়ার হুমকি দিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
গত বৃহস্পতিবার বর্ধমানে কংগ্রেসের অন্যতম ঘাঁটি কাটোয়ার উপ-পুরপ্রধান অমর রাম-সহ বেশ কয়েক জন নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। সেই উপলক্ষে এ দিন স্টেশন বাজার চৌরাস্তায় দলীয় সভায় এসে সরাসরি কংগ্রেসের নাম না করেও অনুব্রত বলেন, “চোখ রাঙাবেন না।... ভয় দেখালে রাতের বেলা চড়াও হব।” বলেই সামান্য থেমে যোগ করেন, “সাধারণ মানুষ চড়াও হবে।”
অনুব্রত ছাড়াও ওই সভায় এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
বীরভূম, নদিয়া ও বর্ধমানের বেশ কয়েক জন বিধায়কও হাজির ছিলেন। যদিও অনুব্রত যখন বক্তৃতা করতে উঠে হুমকি দিচ্ছেন, তখনও মুকুলবাবু এসে পৌঁছননি। পরে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতীকী ব্যাপার নিয়ে হয়তো মন্তব্য করেছে অনুব্রত। আমরা তো কাউকে কাটতেও যাচ্ছি না, মারতেও যাচ্ছি না।” সভা শেষে অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েই তাঁর ব্যাখ্যা, “আমাদের আগে আক্রমণ করলে আমরা তো চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। প্রতিবাদ তো করতে হবে।” গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূমের পাড়ুই এলাকার কসবায় নির্দল প্রার্থীদের (আসলে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার এবং পুলিশ-প্রশাসনকে বোমা মারার ফতোয়া দিয়েই সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন অনুব্রত। |
ভোটের আগেই কসবায় খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। কিন্তু অনুব্রতর বিরুদ্ধে প্রায় কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। উল্টে এর পরেও তাঁর বিরুদ্ধে বারবার বিরোধীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার ছিঁড়লে কব্জি কেটে নেবেন বলে বুধবারই তিনি কংগ্রেস কর্মীদের হুমকি দিয়েছিলেন। তার পরে ফের এ দিনের হুমকি।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বিরক্তির সঙ্গে বলেন, “ও তো রোজই এ রকম কিছু না কিছু বলছে। এ সব কথা নিয়ে কিচ্ছু বলতে চাই না।” দীর্ঘদিন ধরেই কাটোয়া যাঁর খাসতালুক বলে পরিচিত সেই বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “হিংসা ছড়িয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে চাইছে তৃণমূল। আমরা আলোচনা করে ফের ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হব।” কব্জি কাটার হুমকির পরেই শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় এসডিপিও (কাটোয়া) এবং কাটোয়া থানাকে চিঠি দিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন কাটোয়া শহর কংগ্রেসের সভাপতি দেবকুমার বৈরাগ্য। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, শুক্রবার তারা কংগ্রেসের অভিযোগ পায়। এসডিপিও-কে তা তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
তবে শুধু অনুব্রতই নন। বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অনেকটা হুমকির সুরেই বলেন, “স্টেশন বাজারে কয়েক জনের দাপটে আমাদের কেউ মাথা তুলতে পারত না। এ বার অমর, তমালরা এসেছেন। ওরা না পারলে কেষ্টদা (অনুব্রত মণ্ডলকে দলের নেতা-কর্মীরা এই নামেই ডাকেন) আছে। আমি কেষ্টদার মতো বলতে পারব না। তবে দুষ্টের দমন করতে যা করার তাই করব।”
বর্ধমানের কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোট ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আসায় শহরে ঢোকার এক মাত্র রাস্তা বর্ধমান-কাটোয়া রোড কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। অমর রামকে তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি ঘোষণা করা হয়। প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বলে ঘোষণা করেন মুকুলবাবু। সভায় প্রত্যেক বক্তাই ২০১৫ সালে কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া ও দাঁইহাট পুরসভায় ‘পরিবর্তন’ করার ডাক দেন।
|
পাঁচ মাসের শিশুপুত্রকে খুনের অভিযোগ উঠল তারই মায়ের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে বর্ধমানের কালনা থানার ন’পাড়া গ্রামের ঘটনা। পুলিশ ওই ঘটনায় শিশুটির মা মাজেরা বিবি এবং তার দেওর আসাদুলকে ধরেছে। পুলিশের দাবি, দেওরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের জেরে শিশুটিকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এক গ্রামবাসী গ্রামেরই একটি পুকুরে শিশুটির মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় পুলিশ স্বতোঃপ্রণোদিত হয়ে একটি খুনের মামলা রুজু করেছে। পুলিশের দাবি, মহিলার স্বামী কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকেন। তারই সুযোগে দেওরের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুলিশের দাবি তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল শিশুটি। তারই জেরে তারা শিশুটিকে খুন করে পুকুরে দেহ ফেলে দেন। |