সকাল থেকে কোহরা, হাতিকুলি এলাকায় যেন অষ্টমী নিশির ভিড়। পর্দার নায়ককে চাক্ষুষ করতে যোরহাট, গোলাঘাট, নগাঁও থেকে রাত থাকতেই সপরিবার পাড়ি দিয়েছেন মানুষ। কোথাও তারে জমিন পরের গান বাজছে, তো কোথাও চলছে জয়ধ্বনি! তেজপুর থেকে একে একে গাড়িগুলি কাজিরাঙা এসে পৌঁছতেই বাঁধ ভাঙল। আর গাড়ি থেকে শরীরটা বের করে যখন তিনি হাত নাড়লেন, তখন জাতীয় উদ্যানের অতি চেনা নিঃশব্দতা চুরমার করে দিল সম্মিলিত শব্দব্রহ্ম। যা আমির খানের পিছু পিছু দৌড়ে চলল বাগোরি, মিহিমুখ অবধি।
গত কাল তেজপুর জয়ের পরে আজ কাজিরাঙায় তাঁকে ঘিরে উন্মাদনার বহর দেখে অবাক আমির। কথা দিয়ে গেলেন, কাজিরাঙার জন্য যা সম্ভব হবে, তিনি করবেন। আমিরের কথায়, “স্ত্রীর জন্মদিনে ‘সারপ্রাইজ গিফট’ ছিল এই অসম ভ্রমণ। প্রথম যখন আসি, তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। কিচ্ছু মনে নেই। সেই অর্থে এ বার আমারও প্রথম অসমে আসা।” জন্মদিনের পার্টি গত কালই পালন করেছেন সপরিবার আমির। পরিচালক কর্ণ জোহর, সেলিম মার্চেন্ট, বাবা-মা ও সঙ্গীদের নিয়ে জিয়াভরালি নদীর তীরবর্তী ঢারিকাটি গ্রামে আনন্দ করেন তাঁরা। মিসিং গ্রামের চাং ঘরে ঢুকে, মেয়েদের হেঁশেলে উঁকি মারেন আমির-পত্নী কিরণ রাও। গ্রামবাসীদের সঙ্গে গালগল্পে মেতে থাকা, ফুটবল খেলা, কখনও বা ‘তারে জমিন পর’-এর গানের সঙ্গে নাচে পা মেলানো ‘মাটির মানুষ’ আমিরকে দেখে গ্রামবাসীরাও অবাক। অসমীয় খাবার আলু পিটিকা, বেঙেনা পোড়া, জিয়াভরালির মাছের ঝোল ও টক আমিরদের মেনুর অন্যতম আকর্ষণ। |
আজ সকাল সকাল কাজিরাঙায় হাজির হন আমির। আশপাশের স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা তখন চীৎকার করে গান ধরেছে— ‘পরদেশি, পরদেশি, যানা নেহি।’ জিপ সাফারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুলসি বরদলৈ জানান, অ্যাসোসিয়েশনের দুটি ও বন বিভাগের আটটি জিপে আমির ও তাঁর দলবল বাগোরি রেঞ্জ হয়ে জঙ্গলে ঢোকেন। এমনিতে বাগোরি ও কোহরায় পৃথক সাফারি হয়। কিন্তু আমিরদের জন্যই বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে বাগোরি দিয়ে ঢুকে কোহরা হয়ে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে বনবিভাগ। বাগোরি রেঞ্জের জিপসি চালক দীপ বরা এখনও মুগ্ধতা কাটাতে পারছেন না। কারণ তাঁর জিপেই যে সওয়ার হন স-পুত্র আমির। তিনি জানান: ছাই রঙা টি শার্ট, ব্যাগিজ, মাথায় কালো পানামা টুপি পরা আমিরের কপালে ব্যাঘ্রদর্শন ছিল না। তবে জঙ্গলে গন্ডার, বারাশিঙা, বুনো শুয়োর, হাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখে আমিররা মুগ্ধ। তিনি আমিরদের যথাসাধ্য ঘুরিয়েছেন। বহু জায়গায় থেমে ছবি তুলেছেন আমির। দীপ বলেন, “উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে ধুম-৩ নিয়েও ওঁকে জিজ্ঞেস করি। আমির বলেন, দু’বছর ধরে ছবিটা তৈরি হয়েছে। অবশ্যই দেখ।”
কাজিরাঙা ঘোরা শেষ করে বেজায় খুশি আমির সাংবাদিকদের বলেন, “কাজিরাঙায় এক সময় গন্ডার কমে এসেছিল। বনকর্মীদের অনলস প্রয়াসে এখানে এখন ২৩০০ গন্ডার রয়েছে। ওঁদের অনেক অভিনন্দন। আমি কাজিরাঙা নিয়ে কিছু একটা তৈরি করার কথা ভেবে দেখছি।” মুখ্যমন্ত্রীর দূত হয়ে বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন আজ কোহরায় আমিরকে জাপি, মুগা জ্যাকেট, এণ্ডির শাল, সেলেং চাদর ও গামোসা দিয়ে সম্বর্ধনা জানান। এক সময় জাপি ও ফুলাম গামোসায় ঢেকে গিয়েছিলেন আমির। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমির বলেন, “অসম যে ভাবে আমায় ভালবাসায় ভরিয়ে দিল, তা ভুলব না।” পাশে দাঁড়ানো কর্ণ জোহর বলেন, “হয়ত শীঘ্রই মুভি ক্যামেরা নিয়ে ফের কাজিরাঙায় আসব।” রকিবুল বলেন, “আমি আমিরকে অসম ও কাজিরাঙা নিয়ে কিছু একটা তথ্যচিত্র বা ছবি তৈরি করতে বলেছি। আমির এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।”
কোহরার হাতিকুলি চা বাগানের বাংলোয় মধ্যাহ্নভোজের পরে তাঁরা ফের তেজপুর রওনা হয়ে যান। |
|
‘কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর সূচনা অনুষ্ঠানের মহড়ায়
সুকল্যাণ ভট্টাচার্য এবং সহশিল্পীরা। শুক্রবার। ছবি: প্রদীপ আদক।
|
এমন ভাবে নাচলে কমতে পারে ডায়াবেটিস। শুক্রবার মুম্বইয়ে
এক অনুষ্ঠানে সেটাই দেখাচ্ছেন মাধুরী দীক্ষিত। ছবি: এ এফ পি। |
|
|