বাড়ি থেকে এক অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের গলায় ফাঁস দেওয়া দেহ শনিবার উদ্ধার করল পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মৃত সমীর দাসের (৪৬) বাড়ি নবদ্বীপে। পরিবারের দাবি, সংশ্লিষ্ট লগ্নি সংস্থা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নবদ্বীপে তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে টাকা ফেরত চাওয়া লগ্নিকারী এবং সাব-এজেন্টদের চাপ বাড়ছিল সমীরবাবুর উপরে। এই ঘটনা তারই পরিণতি। নদিয়ার ডিএসপি রবিউল আলাওল সর্দার বলেন, “মানসিক অবসাদে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি। তবে এ ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি।”
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সারদা-কাণ্ডের পরে এ রাজ্যে ভুঁইফোঁড় লগ্নি সংস্থার একাধিক এজেন্ট আত্মঘাতী হন। সে সব ক্ষেত্রেও পরিবারের দাবি ছিল, আমানতকারীদের চাপেই তেমন হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় জীবনবিমার বড় এজেন্ট সমীরবাবু এলাকায় ‘ভরসার লোক’ বলে পরিচিত ছিলেন। ২০০৭-০৮ আর্থিক বছরে নবদ্বীপে ব্যবসা শুরু করা লগ্নি সংস্থাটি খোঁজ পেতেই সমীরবাবুকে কার্যত লুফে নিয়েছিল। তাঁর হাত ধরেই নবদ্বীপ এলাকায় রমরমিয়ে ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে ওই সংস্থা। সমীরবাবুর অধীনে কয়েকশো সাব-এজেন্ট কাজ করতেন। এ পর্যন্ত ওই সংস্থা নবদ্বীপে প্রায় ১৭ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
সমস্যা দেখা দেয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নবদ্বীপে লগ্নি সংস্থার অফিস বন্ধ হওয়ার পরে। পরিবারের দাবি, বেশ কিছু লগ্নিকারী ও সাব-এজেন্ট টাকার তাগাদা করতে বাড়িতে এসে কয়েকবার সমীরবাবুকে হুমকি দেন। ধাক্কাধাক্কির মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লগ্নিকারীর বক্তব্য, “মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই লগ্নি সংস্থায় জমা রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। হাতের কাছে সমীরবাবুকে পেয়ে তাঁকেই ধরেছিলাম।” শনিবার ওই লগ্নি সংস্থার একাধিক অফিসে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি। লগ্নি সংস্থাটির কর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
মৃতের দাদা বাবলু দাস জানান, বাড়িতে আমানতকারীদের ‘ঝামেলা’ শুরু হওয়ার পর থেকেই সমীরবাবু চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই থাকতেন। এ দিন অনেক বেলা পর্যন্ত তিনি ঘর থেকে না বেরনোয় বাড়ির পরিচারিকা ডাকাডাকি করেন। তাতেও সাড়া না মেলায় ঘরের দরজা ভাঙতে দেখা যায়, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় বিছানার চাদরের ফাঁস দেওয়া অবস্থায় সমীরবাবুর দেহ ঝুলছে। বাবলুবাবুর ক্ষোভ, “সাব-এজেন্ট ও লগ্নিকারীদের চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছিল। লগ্নি সংস্থাটিরও খবর নেই। এই পরিস্থিতি না হলে হয়তো ভাইকে হারাতে হত না!” |