বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শীতেও নরওয়ের শহরে আলো
ছড়াবে তিন আয়না
নন্ত আঁধার নয়, শীতকালেও এ বার আলো-ছায়ার খেলা দেখতে পাবেন নরওয়ের জুকন শহরের বাসিন্দারা। উঁচু পাহাড়ের বাধা টপকে শীতকালেও তাঁদের কাছে পৌঁছবে সূর্যের আলো। তবে সরাসরি নয়, প্রতিফলিত হয়ে। সে জন্য প্রায় ১৫ মিটার দীর্ঘ তিনটি আয়না তৈরি করা হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে সেগুলিকে বসানো হয়েছে জুকন-সংলগ্ন পর্বতের গায়ে। উদ্দেশ্য একটাই। ওই উচ্চতায় শীতকালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত যতটুকু সূর্যের আলো আসে, তা যেন আয়নাগুলিতে প্রতিফলিত হয়ে জুকনে এসে পৌঁছয়। শীতকালেও যেন সূর্যের উষ্ণতায় ঝকঝক করে ওঠে জুকন।
ভাবনাটি অবশ্য প্রায় একশো বছর পুরনো। নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে প্রায় একশো মাইল পশ্চিমে পর্বতঘেরা জনশূন্য উপত্যকায় যখন প্রথম জুকন শহরটি তৈরি করেন নরওয়ের ব্যবসায়ী স্যাম আইদ, তখন থেকেই তিনি চেষ্টা করেছিলেন, প্রতিফলনের বিজ্ঞানের ফায়দা তোলার। কিন্তু সে সময়ে গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রযুক্তি তৈরি ছিল না। বিকল্প হিসেবে তিনি এমন একটি ‘কেবল গাড়ি’ তৈরি করেন, যেটিতে চড়ে শীতকালে উঁচু পাহাড়ে উঠতেন জুকনের বাসিন্দারা। ভ্রমণসুখ পেতে নয়, সূর্যের উত্তাপ গায়ে মাখতে। জলপ্রপাতের টানেই জুকনে আসা আইদের। নিজের হাতে তৈরি করেন গোটা শহর। জলপ্রপাতের শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে সার উৎপাদন করে বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছে দিতেন এই ব্যবসায়ী। জনমানবহীন এই উপত্যকা দুনিয়ার কাছে পরিচিতি পায় সেই সময় থেকেই। শহরটাকে গড়ে তুললেও আলো-আঁধারি থেকে মুক্তির বন্দোবস্ত অবশ্য করে যেতে পারেননি স্যাম আইদ।
নরওয়ের বেশিরভাগ অঞ্চলের মতোই এখানে শীতের সময় সূর্যের আলো পৌঁছয় খুব অল্প। তার উপরে বড় বাধা ভূ-প্রকৃতি। আসলে উপত্যকা-শহর জুকনের চার দিকই পাহাড়ে ঘেরা। ফলে শীতকালে যেটুকু আলোও বরাদ্দ ছিল, বিশাল বিশাল পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তা আটকে যেত পাহাড়ের চুড়াতেই। শীতকালে আলোর সন্ধান পেতে কেবল-গাড়িতে করে পর্বতে চড়তে হত বাসিন্দাদের। আর ভাবনাটা সেখানেই।
আপাত ‘উন্মাদ’ ওই গোটা পরিকল্পনার যিনি হোতা, সেই মার্টিন অ্যান্ডারসন বছর দশেক আগে নিয়ে এলেন আইদেরই ভাবনা। আলো মাখতে পাহাড়ে না চড়ে যদি আলোকেই নিজেদের দিকে ঘোরানো যায়, যদি কোনও ভাবে সূর্যের আলোকেই প্রতিফলিত করা যায় জুকনের দিকে। অ্যান্ডারসনের কথায়, উদ্ভট এই মতলবে সঙ্গী জুটতে চায়নি প্রথম দিকে। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রতি পদে। তাও হাল ছাড়েননি অ্যান্ডারসন। ৪০০ মিটার উঁচু পাহাড় চুড়োয় স্বপ্নের শার্সি বসিয়েই ছেড়েছেন। সূর্য যে দিকে ঢলবে, আয়নাও বেঁকে যাবে সেই অনুযায়ী। আর পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করবে কম্পিউটার। আবহাওয়া ভাল থাকলে আয়নার উপর থেকে পর্দা সরে যাবে সামনের সপ্তাহেই।
শুধু একটু রোদ্দুরের জন্য এত উন্মাদনা! অ্যান্ডারসন কিন্তু এক মত নন। তাঁর দাবি, গা-হাত-পা আলোয় সেঁকাই কেবল নয়, মনের জন্যও দরকার হয় উষ্ণ ছোঁয়া। নিকষ অন্ধকারের সঙ্গে মনখারাপের সম্পর্ক মেনে নেন মনস্তত্ত্ববিদেরাও। ফলে অ্যান্ডারসনের স্বপ্নের প্রকল্প ঘিরে জুকনে এখন উৎসাহ তুঙ্গে। আলোর ছোঁয়ায় নতুন ভাবে বাঁচতে, আলোর উন্মাদনা বুঝতে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.