সাপের কোপে মৃত একই পরিবারের দু’জন
ত বৃষ্টি চলছে ততই সাপের উপদ্রবে বিপন্ন হয়ে পড়ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা।
বসিরহাট স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বর্ষায় গত এক মাসে ৩২ জন সাপে কাটা রোগী মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে দেরিতে আসায় মারা গিয়েছেন সাত জন। হাসপাতালে আসার পথেই যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের তো কোনও হিসেবই নেই।
হাসনাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম খেজুরবেড়িয়ার শ্যামলী মুন্ডা দাসের পরিবারের কথাই ধরা যাক।
তিন সপ্তাহ আগেই সাপের ছোবলে মারা যায় শ্যামলীর ভাইপো। এর পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মাকে সাপে কাটে। তিনি যখন মাঠ-ঘাট, পথ-নদী পেরিয়ে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, তখনই তাঁদের বাড়িতে সাপে কাটে বছর ছয়েকের ভাইঝিকে। সময় মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় শেষমেশ সে বেঁচে যায়। কিন্তু মাকে বাঁচাতে পারেননি শ্যামলী। ডাক্তারবাবুরা যখন জবাব দিয়ে দিলেন, ময়না-তদন্তের কাগজপত্র জোগাড় করতে বসিরহাট থানায় ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি। হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া মরা সাপ। কী ব্যাপার? শ্যামলী বলেন, “আগের বার সাপ নিয়ে আসতে পারিনি। ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, থাকলে ভাল হত। পুরো চিকিৎসা হল না। মারা গেল ভাইপো। আজ আবার মাকে কেটেছে। তাই একেবারে মেরে এনেছিলাম। যাতে আবার ডাক্তারবাবুর অসুবিধা না হয়। কিন্তু হলে কী হবে? মা মরেই গেল।”
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার ওই গ্রামে গত মাসখানেকের মধ্যে সাপে কেটেছে অন্তত ২০ জনকে। শ্যামলীর পরিবারের চার জন। মারা গিয়েছেন দু’জন। খেজুরবেড়িয়া থেকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনেকটা পথ। বহু রাস্তা উজিয়ে, ইছামতী পেরিয়ে সেখানে পৌঁছতে-পৌঁছতেই নেতিয়ে পড়েন বেশির ভাগ রোগী। বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামলীর মা, ষাটোর্ধ্ব তারামনি মুন্ডাকে সাপে কাটে। তাঁকে বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে আসতে-আসতে শুক্রবার সকাল হয়ে যায়। তখন আর চিকিৎসায় সাড়া দেবার ক্ষমতাই ছিল না তারামনির।
শ্যামলীর কথায়, “বাড়ির লোক তখন গ্রামে যাত্রা শুনতে গিয়েছিল। বাড়িতে শুধু আমি আর মা ছিলাম। মা শুয়ে ছিল। হঠাৎ দেখি, মা ব্যথায় ছটফট করছে। মশারি তুলে দেখি, ভিতরে কালাচ সাপ।” চিৎকার করে তিনি লোক জড়ো করেন। অবস্থা দেখেই তাঁদের মনে হয়েছিল, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে সোজা বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভাল।
অতএব ভ্যানরিকশায় মাকে চাপিয়ে শ্যামলী রওনা দেন বসিরহাটের দিকে। সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন আত্মীয়-পড়শি। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা ভ্যানে গিয়ে, সেখান থেকে অটো ধরে হাসনাবাদ ফেরিঘাট। তখনই প্রায় ভোর হয়-হয়। ঘাটে এলেও পেরোনোর তো উপায় নেই। অত ভোরে নৌকা ছিল না। সেতুর কাজও বন্ধ। নৌকা জোগাড় করতে চলে যায় আরও সময়।
নদী পেরিয়ে সামান্য গেলেই টাকি হাসপাতাল। কিন্তু ‘বড় হাসপাতালে’ যাওয়ার তাগিদে শ্যামলীরা সেখানে না থেমে আরও আট কিলোমিটার উজিয়ে বসিরহাটে পৌঁছন। তাঁর আক্ষেপ, “বসিরহাট হাসপাতালে যখন পৌঁছলাম, মা নেতিয়ে পড়েছে। ডাক্তারবাবুরা অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন। ইঞ্জেকশন দিলেন, ওষুধ দিলেন। কিন্তু লাভ হল না।”
এটা যে শুধু একটি পরিবারেরই গল্প তা নয়। গত এক মাসে বাদুড়িয়ার উত্তর যদুরআটি এবং পুঞ্জি-মামুদপুর গ্রামে অন্তত কুড়ি জনকে সাপে কেটেছে। জেলায়-জেলায় এ রকম বহু প্রত্যন্ত এলাকাতেই এখনও বিষধর সাপের ছোবল মানে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সামিল।
বসিরহাট মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত পাণ্ডে বলছেন, “জেলা, মহকুমা বা গ্রামীণ হাসপাতাল, ব্লক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব সময়ে ৪০টি করে ‘অ্যান্টিভেনাম সিরাম’ ইঞ্জেকশন রাখা থাকে। সময় মতো রোগীকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে এলে ভয়ের কোনও কারণ নেই।”
বাদুড়িয়ায় হয়তো কয়েক দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘এভিএস’ থাকার প্রচার হয়েছিল। কিন্তু তা-ই বা কোথায় ধারাবাহিক ভাবে করা হয়? তাই কখনও বড় হাসপাতালে যেতে গিয়ে, কখনও ওঝা ডাকতে গিয়ে আজও উজাড় হয়ে যায় এক একটি পরিবার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.