|
বিনোদন |
বাঙালি পাতে অচেনা মজা
সোমঋতা ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে...
আবরণটা তো একই। শুধু তেলে জবজবে ব্যাপারটা নেই। তবুও চেনা-চেনা লাগে বৈকি! শুখা ময়দার আস্তরণের ভিতরে পরতে পরতে কত যে মণিমুক্তো মুড়িয়ে রাখা! কামড়ের পর কামড়ে সেই রহস্য ভেদ করতে করতে চলা।
আর হেঁয়ালি করে লাভ নেই, বলছিলাম সেই চিরকেলে চেনা রোলের কথা। সেই নিজামের আমল থেকেই কলকাতার একান্ত আপন এই রোল। প্রাজ্ঞদের কথায়, সাহেবদের হাত যাতে তেলে চটচটে না হয়ে যায়, সেই জন্যেই তাঁদের খাস খানসামারা নাকি এই অবিস্মরণীয় উদ্ভাবনটি করেছিলেন। এতে বাইরেটা থাকে নিটোল-পরিপাটি, ভিতরেই দেখানো যায় স্বাদের যত কেরামতি। তার পরে হুগলি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। এগ, চিকেন, এগ-চিকেন, মাটন থেকে হট কাটি রোলের ইতিহাস খুব একটা সংক্ষিপ্ত নয়।
এ শহরে বিকেলের জলখাবারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে এগ অথবা চিকেন রোলেই মজে আছে, তা নিয়ে বড় একটা দ্বিমত নেই। তবে আজকের এই বিশ্বায়নের কালে শুধু তাই নিয়ে খুশি থাকলে চলবে? রোলের রান্নাঘরে গোটা পৃথিবী এসে সেঁধোবে, তবেই না মজা। মহানগরের রেস্তোরাঁরা তাই কোমর বেঁধেছে বেশ কিছু দিন হল। নানাবিধ ‘বাঙালি’ রোলের পাশাপাশি লেবানিজ শাওয়ারমা রোলও বাঙালি রসনায় বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। শহরের লেবানিজ রেস্তোরাঁ ‘গো লেবানিজ’ বা শরৎ বসু রোডের ‘রয়্যাল লেবানিজ’ তাতে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। এই শাওয়ারমা সাধারণত হয় পিটা ব্রেড দিয়ে। তার ভিতরে থাকে আদা-পেঁয়াজ-রসুনে ম্যারিনেটেড মুরগি, সাওয়ার ক্রিম, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর স্যালাড। সঙ্গে থাকতেই হবে হুমুজ, যেটা আসলে এক রকমের পশ্চিম এশিয়ান ডিপ, পিটা ব্রেডের সঙ্গে খুব ভাল
লাগে খেতে। |
এ তো গেল লেবাননের কারিকুরি। কিন্তু মন যদি তাতে না ভরে? যদি ইচ্ছে করে মেক্সিকো বা তাইল্যান্ডের রোলের কথাও জানতে? হদিস দিচ্ছেন বিবি সরকার। ঢাকুরিয়ায় তাঁর নয়া রেস্তোরাঁ ‘বিবি অফ তাজাস’ সেই সাধ মেটাতে প্রস্তুত। সেখানে যেমন মিলবে নিখাদ ভারতীয় এগ-চিকেন রোল, লেবানিজ শাওয়ারমা, তেমনই আবার পাওয়া যাবে মেক্সিকান ফায়িটা বা কেজেডিয়া রোল ও তাই রোল আপ।
তবে রোল বলতেই যে তৈলাক্ত, পাকস্থলীর পক্ষে বেশ গুরুতর ছবিটা চোখে ভাসে, এ রোল সে রোল নয়। কারণ এতে তেল বা ডালডায় ভাজা পরোটার ব্যাপারই নেই। এখানে ফ্লাওয়ার টর্টিয়া নামক বস্তুটি দিয়ে মোটা রুটির মতো বানিয়ে তাওয়ায় সেঁকে নেওয়া হয়। কাজেই মোড়কটা বেশ স্বাস্থ্যসম্মত। ফ্লাওয়ার টর্টিয়ার মোড়কটা সব রোলেই এক। পার্থক্যটা শুধু অন্তরমহলে। ভারতীয় এগ-চিকেন রোলের হৃদ্মাঝারে থাকে স্টার ফ্রায়েড ম্যারিনেটেড বোনলেস চিকেন, সেদ্ধ করে জিরে দিয়ে নাড়াচাড়া করা আলু, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ, লেবু-লঙ্কা। শাওয়ারমার অন্দরে আবার ম্যারিনেটেড চিকেন ফিঙ্গারের আতিশয্য।
মশলাদার চটপটে স্বাদের জন্য মেক্সিকান ডিশ বরাবরই স্বনামধন্য। তাই ফায়িটা রোলে রোস্টেড চিকেনকে সঙ্গ দেয় সুইট-এন-স্পাইসি সালসা সস, সাওয়ার ক্রিম, রেড বেল পেপার আর গ্রেটেড চিজ। কেজেডিয়ায় আবার ফ্লাওয়ার টর্টিয়ার রুটিতে নুন-জলে ম্যারিনেট করা আচারি লঙ্কা জলেপেনো, ধনেপাতা আর লঙ্কার মিশ্রণে তৈরি সসের প্রলেপ দিয়ে তার উপরে রোস্টেড চিকেন বা হ্যাম, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ রেখে পুরো ব্যাপারটাকে গ্রিল করা হয়। শেষ বেলায় আসি তাই রোল আপের কথায়। সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ঠান্ডা রোল তাই পাপায়া স্যালাডের সঙ্গত থাকে যে! আর থাকে চিনেবাদাম-রসুনের মিশ্রণে তৈরি সস, গাজর, স্প্রিং অনিয়ন ও তাই লঙ্কা।
কাজেই আর বিলম্ব নয়। শহুরে পেটগুলোকে আদ্যন্ত রোল-মুখর করে তোলার এই তো সময়! |