‘স্বাস্থ্যসচেতন’ মিষ্টির সন্ধানে
বারের পুজোয় মিষ্টি যদি একটু অন্য রকমের খেতে লাগে? যদি আরও একটু ‘স্বাস্থ্যসচেতন’ মিষ্টির দিকে নজর ফেরানো যায়, মন্দ কী? আর এই উৎসবের মরসুম থেকেই না হয় শুরু হোক সেই প্রচেষ্টা।
এই ‘স্বাস্থ্য সচেতন’ মিষ্টি ঠিক কী রকম?
ধরুন, ভেজিটেবল চপ যদি হতে পারে তা হলে ভেজিটেবল রসগোল্লা নয় কেন?
শুধুই কি ভেজিটেবল রসগোল্লা! পেপটিন রসগোল্লা, গাজরের রসগোল্লা, কুলেখাড়া সন্দেশ, ব্রাহ্মী সন্দেশ, বিট-রুট সন্দেশ, তুলসি সন্দেশ, বানানা জামুন, টোম্যাটো সন্দেশ, গাজরের সন্দেশ, গ্রিন অ্যাপল দই— মিষ্টির হালফিল বাজারে এমন সব নামই ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রথাগত মিষ্টির পাশাপাশি চুটিয়ে ব্যাট করে যাচ্ছে ‘হার্বাল মিষ্টি’। তবে আঞ্চলিক ভাবে এই ভেষজ মিষ্টির বাজার তৈরি হলেও সেই অর্থে পুরোপুরি ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে উঠতে পারেনি ‘হার্বাল সুইটস’।
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ যেখানে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মিষ্টি বর্জন করছেন, সেখানে হার্বাল মিষ্টি কতটা গ্রহণযোগ্য? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান উৎপল রায়চৌধুরী বলছেন, “মিষ্টি তো শুধু খেলেই হবে না, তার খাদ্যগুণের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সে দিক থেকে এই ভেষজ মিষ্টি প্রথাগত মিষ্টির থেকে কয়েক গুণ এগিয়ে। মিষ্টি খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যগুণ সম্বলিত বেশ কিছু উপকরণও এই ধরনের মিষ্টিতে পাওয়া যায়।” বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় মিষ্টি ভীষণই পুষ্টিকর। তাঁর মতে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি চলার সময় ভারী খাবার সাধারণত খেতে পারেন না। সেই সময় যদি মিষ্টির মোড়কে এই জাতীয় পরিপূরক খাবার তাঁদের দেওয়া হয়, তবে তা স্বাস্থ্যোদ্ধারের কাজে আসবে।

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে প্রথাগত মিষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মিষ্টি তৈরি করছেন কমল সাহা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ ম্যানেজমেন্ট’ পাশ করে পারিবারিক মিষ্টির দোকানেই তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রথম দিকে এ ধরনের মিষ্টির ক্রেতা ছিল মোট ক্রেতার মাত্র ২ শতাংশ। এখন সংখ্যাটা প্রায় ৪০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। গাজর, বিটের পাশাপাশি তাঁর দোকানের ‘ভেজিটেবল রসগোল্লা’য় বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা হয়।
এ জন্যই ভেষজ মিষ্টি বাড়িতে নিয়মিত নিয়ে যান তরুণ প্রজন্মের সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। বাড়িতে বাবা-মা দু’জনেই সুগারের রোগী। মিষ্টি খাওয়া তাঁদের একেবারেই নিষেধ। তবে পরিমিত ভেষজ মিষ্টিতে ডাক্তারের আপত্তি নেই। সুদীপবাবুর কথায়: “গত দু’বছর ধরে বাড়িতে শুধু হার্বাল মিষ্টিই খাওয়া হয়। তবে সব জায়গাতে এই মিষ্টি পাওয়া যায় না, সেটা বেশ সমস্যার।” সুগারের রোগীদের জন্য কমলবাবু মিষ্টিতে চিনি ব্যবহার করেন না। সে ক্ষেত্রে মিষ্টি বানানো হয় অ্যাসপাটেম জাতীয় ‘সুগার ফ্রি’ দিয়ে। প্রতি দিন তাঁর কারখানায় ছ’শো রসগোল্লা বানানো হয়। যার মধ্যে অর্ধেকই ভেজিটেবল রসগোল্লা।

গাজরের সন্দেশ

ভেজিটেবল রসগোল্লা
কী আছে এই হার্বাল মিষ্টিতে? উৎপলবাবু বলেন, “শাকসব্জি থেকে পাওয়া সেলুলোজ, ক্যারোটিন, প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড ও বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাদ্যগুণ রয়েছে এই মিষ্টিতে। এতে কোনও কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয় না। সবই প্রাকৃতিক।” কী রকম? গাজর, বিটের মধ্যে থাকে বিটা ক্যারোটিন নামের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। চিনির বদলে ফ্রুক্টোজ, সুক্রালোজ বা ল্যাক্টুলোজ ব্যবহার হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে না। এ ছাড়া ছানায় ক্যাসিন ও হোয়ে প্রোটিন থাকে। স্বাস্থ্যের পক্ষে এই জাতীয় প্রোটিন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সয়াবিন থেকে পাওয়া সয়া প্রোটিনও ব্যবহার করা হয় ভেষজ মিষ্টিতে। আর রং? তরমুজ, বিট ও জবা ফুল থেকে নেওয়া হয় লাল জাতীয় রং। সবুজ রং নেওয়া হয় পালং শাক থেকে।

কিন্তু এই শাকসব্জির বাড়াবাড়ি রকমের প্রভাব তো মিষ্টির স্বাদকেই নষ্ট করে দিতে পারে! উত্তর ২৪ পরগনার আর এক ভেষজ মিষ্টি প্রস্তুতকর্তা উজ্জ্বল মিত্র বললেন, “গাজর, বিট বা তুলসি যা-ই ব্যবহার করি না কেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সে সবের গন্ধকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। কাজেই খাওয়ার সময় কোনও ভাবেই এই শাকসব্জির গন্ধ মিষ্টির স্বাদকে পাল্টে দেয় না।” উজ্জ্বলবাবুর বানানো ‘ভিটামিন সন্দেশ’ তৈরি হয় ব্রাহ্মী শাক, অঙ্কুরিত ছোলা, গাজর ও ছানা দিয়ে। তুলসি দই ও তুলসি সন্দেশও তিনি নিয়মিত বানান। তবে যাদবপুরের প্রাক্তনী উজ্জ্বলবাবুর স্বীকারোক্তি: “স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই শুধু এই মিষ্টির খোঁজ করছেন।”
এই মিষ্টির ভবিষ্যৎ কী?
উৎপলবাবুর মতে, মানুষ ধীরে ধীরে এই জাতীয় স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টির দিকে ঝুঁকছেন। বিক্রিও বাড়ছে। তবে তা তৈরির ক্ষেত্রে গুণমানের দিকে আরও নজর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। ভেষজ মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা অবশ্য সকলেই আশাবাদী এই মিষ্টির বাণিজ্যকরণে। কিন্তু বিপণনের ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ভেষজ মিষ্টি। বাংলাদেশের কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে উজ্জ্বলবাবুর পাঠানো ‘গাজরের রসগোল্লা’ ও ‘ভিটামিন সন্দেশ’ বেশ প্রশংশিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগের দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে নিজের বানানো ‘ভেজিটেবল রসগোল্লা’ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন কমলবাবু। কিন্তু, ভেষজ মিষ্টির বাজার আটকে আছে আঞ্চলিক স্তরে।

ভেজিটেবল মিষ্টির সঙ্গে এই ক্ষীরের তৈরি
মমতা-পুতুল মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল।
তবে, স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতার কাছে ভেষজ মিষ্টি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হবে, এই আশায় আপাতত বুক বাঁধছেন এই মিষ্টির প্রস্তুতকারীরা।

বিট-রুট সন্দেশ

উপকরণ


বিট ১০০ গ্রাম সুগার সিরাপ/ সুইটেক্স/ অ্যাসপাটেম ৪০ গ্রাম
দুধ ১ লিটার ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা লেবুর রস (ছানা কাটতে)

প্রণালী

প্রথমে বিটটাকে খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে কুরানি দিয়ে কুরিয়ে নিতে হবে।
আভেনে জল গরম করে তার ভিতর কুরানো
বিট দিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করে ব্ল্যাঞ্চিং করতে হবে।
ব্ল্যাঞ্চিংটাকে চিনির রসে ভাল করে মিশিয়ে ফোটাতে হবে।
মিশ্রণটি জেলির মতো হয়ে আসলে নামিয়ে নিন আভেন থেকে।
৫০০ মিলিলিটার দুধ গরম করে নিয়ে তার ভিতর ছানাকাটা
পাউডার বা লেবুর রস দিয়ে ছানা কেটে নিতে হবে।
এর পর ছানা থেকে ভাল করে জল ঝরিয়ে নিন।
বাকি দুধ একটা পাত্রে অনেক ক্ষণ ধরে জ্বাল দিয়ে ক্ষীর বানিয়ে নিতে হবে।
এ বার ছানাটা এই ক্ষীরের মধ্যে মিশিয়ে ভাল করে কাঠের হাতা দিয়ে পিষে নিন।
মিশ্রণটা মিহি হয়ে এলে এর ভিতর ওই বিটের জেলিটাও মিশিয়ে দিতে হবে।
এ বার একটা বড় ট্রে জাতীয় পাত্রে মিশ্রণটি ঢেলে নিয়ে
বরফি বা কালাকাঁদের মতো করে টুকরো করে নিন।
ঠান্ডা হয়ে গেলে পরিবশন করুন বিট-রুট সন্দেশ।
ছবি: শান্তনু হালদার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.