বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কম্পিউটারের হাত ধরে ঝাঁপ
রসায়নের গভীরে, জয় নোবেল

যেন ‘হ্যামলেট’ নাটকের মঞ্চায়ন। প্রথমে দর্শক সব অভিনেতাকে এক ঝলক দেখলেন। তার পরই তাঁদের শেষ দৃশ্যে নিয়ে যাওয়া হল, সেখানে সব চরিত্রই প্রায় মৃত। মাঝখানে কী ঘটল?
২০১৩ সালের রসায়নে নোবেল ঘোষণা করতে গিয়ে নোবেল সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান সোয়েন লিডিন ঠিক এই উদাহরণটাই দিয়েছেন। আর বলেছেন, নাটকের মাঝখানে কী ঘটে গেল সেটা জানান দেওয়ার রাস্তা যাঁরা দেখিয়েছেন, তাঁরাই এ বারের পুরস্কারবিজেতা।
মার্টিন করপ্লাস, মাইকেল লেভিট এবং এরি ওয়ারশেল। তিন মার্কিন বিজ্ঞানী। রসায়ন আর কম্পিউটার বিজ্ঞানকে মিলিয়ে দিয়েছেন ওঁরা। এমন একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেছেন, যা দেখিয়ে দেয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ঘটে চলা সমস্ত খুঁটিনাটি ধাপ!
রসায়নে এ বারের নোবেল কুর্নিশ করল এমন তিন জনকে যাঁদের হাতে টেস্ট টিউব নেই, গায়ে ল্যাব-কোট নেই। পদার্থবিদ্যায় হিগস-এঙ্গলার্টের নোবেল যদি হয় মৌলিক গবেষণার স্বীকৃতি, রসায়নের পদক গবেষণা-প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পুরস্কার।
মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রসায়নের জটিল অঙ্ক কষে ফেলে ঝটাপট উত্তর জানিয়ে দেওয়া প্রখর বুদ্ধিধর কম্পিউটার মডেলটি করপ্লাস-লেভিট-ওয়ারশেল বানিয়েছিলেন সেই ১৯৭০-এর দশকে। পরবর্তী কালে যা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে ওষুধ-শিল্প থেকে সৌরবিজ্ঞানে। এ বছর নোবেল জিতে নিলেন ওই তিন জনই। ৮০ লক্ষ ক্রাউন (১২.৫ লক্ষ ডলার) পুরস্কারমূল্য তুলে দেওয়া হবে তাঁদের হাতে। ‘দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-র তরফে বলা হয়েছে, “রসায়নে টেস্ট টিউব যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই এই কম্পিউটার।” এ হল রসায়ন দুনিয়ায় সাইবার-বিপ্লব।
মাইকেল লেভিট
এরি ওয়ারশেল মার্টিন করপ্লাস
কী রকম? প্রায় আলোর গতিবেগে ঘটে যায় এক-একটা রাসায়নিক বিক্রিয়া। পরমাণুর অন্দরে নিমেষে নিজের জায়গা বদলে ফেলে ইলেকট্রন। রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তৈরি হয় নতুন এক বা একাধিক পদার্থ। কিন্তু মাঝখানের অণু-পরমাণুর গতি-প্রকৃতি অধরাই থেকে যায় বিজ্ঞানীদের চোখে। সেই জটিল প্রক্রিয়ার প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলে ধরে মার্টিন করপ্লাসদের কম্পিউটার প্রোগ্রামটি। আরও সহজে বললে, যে কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় নতুন এক বা একাধিক পদার্থ তৈরি হয়। কিন্তু কী ভাবে তৈরি হয়, সেই পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের কৌতূহলী নজরে ধরা পড়ে না। নতুন মডেলটি ধাপে ধাপে প্রতিটি অণু-পরমাণুর পরিবর্তন ছবির মতো তুলে ধরে কম্পিউটারের পর্দায়।
১৯৭০-এর দশকে মডেলটি যখন বানিয়েছিলেন করপ্লাস-লেভিট-ওয়ারশেল, গুরুত্বটা বুঝতে পারেনি গবেষক-মহল। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল করপ্লাসদের এই আবিষ্কার। শিক্ষা থেকে শিল্প হাজার হাজার গবেষকের অন্যতম ভরসা।
সেটাই বা কী রকম? একটি ওষুধ বাজারে আসার আগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। গবেষণা করে দেখা হয়, মানুষের শরীরে তার প্রভাবই বা কী। সেই দীর্ঘ প্রক্রিয়াকে স্বল্প সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলেছেন করপ্লাস-লেভিট-ওয়ারশেল। তা ছাড়া পরীক্ষামূলক ওষুধটির সঙ্গে শরীরে একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের বিক্রিয়া হলে, তার ফল কী হবে তা-ও বলে দেয় নিমেষে। ব্রিটেনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি’-র প্রেসিডেন্ট ডমিনিক টিল্ডসলে বলেন, “নতুন ওষুধের নকশা তৈরিতে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে কম্পিউটেশনাল মডেলিং।”
বর্তমানে যে কোনও ওষুধ মানুষ কিংবা কোনও প্রাণীর দেহে পরীক্ষা করে দেখার আগে কম্পিউটার মডেলে ফেলে দেখা হয়, তার কোনও ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে কি না। বিশেষ করে যখন বায়োটেকনোলজির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গেই ক্যানসার-রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস রুখতে নিত্যনতুন ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কেরস্টি হারম্যানসন বলেন, “কম্পিউটারেই যখন রাসায়নিক সমীকরণগুলোর সমাধান হয়ে যাবে, তথ্যগুলো বিশদ চলে আসবে হাতের মুঠোয়। অন্য কোনও উপায়ে যা অসম্ভব।” বলে চললেন তিনি “একেবারে ফিল্মের মতো। অসাধারণ ... কেন, কী হচ্ছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে দ্রুত।”
বছর তিরাশির করপ্লাস মার্কিন নাগরিক হলেও জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ার। গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন হার্ভার্ড ও স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। লেভিট ব্রিটেনের। গবেষণা করতেন স্ট্যানফোর্ডে। আর ওয়ারশেল ইজরায়েলের মানুষ। নোবেল জয়ের পরে ওয়ারশেল বলছিলেন, পথটা মোটেই সহজ ছিল না। “জানতাম আমি ঠিক। কিন্তু বহু বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার এমন একটা পেপারও নেই, যেটা প্রকাশ হওয়ার আগে প্রত্যাখ্যাত হয়নি।
সেই ১৯৭৫ থেকেই জানতাম, এক দিন বায়োফিজিক্সে সবচেয়ে শক্তিশালী পদ্ধতি হয়ে উঠবে আমার মডেলটা। কিন্তু আমি দেখে যেতে পারব, আশা করিনি।”
আর লেভিট... নিজেই বললেন, “আমি আসলে কম্পিউটার পাগল!” সালটা ১৯৬০। তখন কারও নিজের কম্পিউটার ছিল না। যন্ত্রটা হাতে পেতাম কাজের ফাঁকে অফিসে। গবেষণা শুরু করেছিলেন সে ভাবেই। লেভিট বললেন, “কম্পিউটার নিয়ে খেলতে খেলতেই যে এত কিছু করে ফেললাম, বললে ভুল বলা হবে।
তবে যে কোনও সৃষ্টিশীল কাজ সহজ হয়ে যায়, যখন খেলাচ্ছলে কাজটা সেরে ফেলা হয়। সবটাই আসলে নিষ্ঠা। কে কী ভাবছে ভুলে নিজের কাজে ডুব দাও!”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.