|
|
|
|
|
পান-তাম্বুলে বরণ
রিনা নাগ
(টরোন্টো, কানাডা) |
দিন গুনতে গুনতে চলেই এলো আরও একটা দুর্গাপুজো। টরোন্টোর আকাশেও তুলোর মত মেঘের ছোটাছুটি। গাছের পাতায় রঙের ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে সাগরপারের বাঙালিরাও মেতে উঠেছে মায়ের আগমনী বার্তায়। এখানে বসে একটা কথাই মনে হয়, বাঙালিরা যেখানেই থাক, বাংলার গান-আড্ডা-ভুরিভোজ, সাজের মাঞ্জা, শারদীয়া পত্রিকা— সব জায়গাতেই তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম! লেক অন্টারিওর ঠাণ্ডা হওয়া উপেক্ষা করে, যে কোনও পুজো প্রাঙ্গনে দেখা পাওয়া যায় কলকাতার বাঙালিরা কী মন-প্রাণ ঢেলে এখানে দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে।
রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, টরোন্টো কালীবাড়ি, ধর্মাশ্রমের মতো জায়গা ছাড়াও আমার পুজো— কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ টরোন্টো, প্রবাসী কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, দুর্গাবাড়ি ও বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি-র তরফ থেকে আয়োজন করা হয় দুর্গাপুজোর। বাঁধা ধরা নির্ঘণ্টের মধ্যেই সু-সম্পন্ন হয় পুজোর আচার অনুষ্ঠান। এই সব পুজোর মধ্যে, বয়সে সব থেকে কনিষ্ঠ পুজো ‘আমার পুজো— কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ টরোন্টো’। মা দুর্গা তিন বছর আগে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে, আকাশ পথে পাড়ি দিয়েছিলেন টরোন্টোর উদ্দেশে। পুজোবাড়ির মেয়েরা নিজেরাই তৈরি করেন নানা রকমের মিষ্টি ও নিমকি, ভোগের অঙ্গ হিসেবে। আমিষ খাবারের সঙ্গে কলকাতার ফুচকা-ঘুগনির ও ব্যবস্থা করা হয়। |
|
এখনে প্রত্যেকটা পুজোতে বাচ্চাদের আগ্রহ দেখার মতো। নিজের দেশের বাইরে বড় হওয়া ছেলেমেয়েরা এই সময়ে মেতে ওঠে নানান ধরনের গান, আবৃত্তি, নাচ এবং নাটক পরিবেশনে। বেশ কিছু মাস ধরে চলে তার প্রস্তুতি। শুধু বাচ্চারাই নয়, বড়দের মধ্যেও চলে অনুষ্ঠানের মহড়া। কলকাতার মতোই এখানেও, গানের জগতের বিখ্যাত কলাকুশলীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমার পুজো এ বছর স্থানীয় প্রতিভা ছাড়াও আপ্যায়ন করেছে আমেরিকা থেকে আসা কলাকুশলীদের। বহিরাগত কলাকুশলীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন দুর্গা বাড়ি আর বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি। আমার পুজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তারা প্রত্যেক বছর নতুন এক চিন্তাকে স্বাগত জানায়। কারণ, বাঙালি সদস্য বাদ দিয়েও এখানে আসেন অন্যান্য কমিউনিটির বন্ধু-বান্ধব। নিজেদের সংস্কৃতি তাদের সঙ্গে ভাগ করতে এবং তাদেরও নিজেদের মধ্যে সামিল করানোর জন্য গত বছর ডান্ডিয়া নাচের আয়োজন করা হয়েছিল। তথাকথিত বাঙালি ভাসান নাচের তালে, মিলে গিয়েছিল সেই সুর।
বাঙালি ভুরিভোজের সঙ্গে আয়োজন থাকে নানান রকম প্রতিযোগিতারও। যেমন মোমবাতি জ্বালানো, শঙ্খ বাজানো, আলপনা দেওয়া, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। এর পরে থাকে পুজো কমিটির সপরিবারে সিঁদুর খেলার পর্ব। সে দিন সবার পোশাকে থাকে বাঙ্গালিয়ানার ছোঁয়া— মেয়েদের লাল পাড় সাদা শাড়ি এবং ছেলেদের ধুতি পাঞ্জাবি।
এই বছরও বড়দের ধুতি-পাঞ্জাবি, শাড়ি-গয়নার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে লেহেঙ্গা আর সালওয়ারের ঝলক। কলকাতার মতো না হলেও, টরোন্টোর ভারতীয় দর্জিরাও খুব ব্যস্ত থাকেন এই সময়। অবশ্য কলকাতার ফ্যাশানের হাওয়া পৌঁছে গেছে সাগরপারেও।
কলকাতার নিয়ম মেনে ৫ দিনের পুজো হয় এখানে মোটামোটি সব জায়গায়। আমার পুজো-র আয়োজন হয় সপ্তাহ শেষে। ঠাকুরের মণ্ডপ তৈরির কাজও শেষের পথে। শেষ পর্যায়ের রং, পালিশে ব্যস্ত কারিগররা। ফাইনাল রিহার্সালে ব্যস্ত বাড়ির মা এবং মেয়েরা। এখন খালি দিন গোনার পালা। |
|
টরোন্টোর প্রত্যেকটা পুজোতে বাড়ির পুজোর একটা আমেজ পাওয়া যায়। সব কমিটি চেষ্টা করেন, ঘরোয়া আমেজ বজায়ে রাখার। এখানের পুজোবাড়িগুলিতে গেলে টের পাওয়া যায়, বহু বছর আগে বিদেশে আসা বাঙালিরা কতখানি ‘মিস’ করে বাংলাকে। বাংলা গান, বাংলা ছায়াছবি প্রদর্শন সব কিছুই করা হয় টরোন্টোর পুজোতে! দুর্গাবাড়ি ও বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি-র পুজো প্রাঙ্গনে গেলে পান-তাম্বুলের ব্যবস্থাও পাওয়া যায়। লেবু পাতার খিচুড়ি, কুমড়ো ফুল ভাজাও পেয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। এই ভাবেই, মিলেমিশে আনন্দে কেটে যায়ে কয়েকটা দিন। |
|
|
|
|
|
|