সাহাবাড়ির দেবীবন্দনা
(খিদিরপুর, কলকাতা)
র্তমানে খিদিরপুর অঞ্চল বললে যে ছবি কলকাতাবাসীর চোখে ফুটে ওঠে, এক সময় তা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। তা সত্ত্বেও একশো বছরের ধারা বজায় রেখে চলেছে ভোলানাথ সাহা প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক দুর্গাপুজো। ১৯১১ সালে শুরু হওয়া এই পুজো প্রথমে অনুষ্ঠিত হতো ৩৭, হেমচন্দ্র স্ট্রিটের বাড়িতে। ১৯২৪ সাল থেকে সে আয়োজন হয় মোহনচাঁদ রোডের বাসভবনে। নিরবচ্ছিন্ন এই পুজোর আয়োজন ১৯৪৬-র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ও অব্যাহত ছিল।

আদতে শান্তিপুরের বাসিন্দা, ভোলানাথের আগের প্রজন্মই কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করে। তাঁর আমলে ব্যবসা যখন বেশ উন্নত, তখন স্ত্রীর অনুরোধে বাড়িতে দুর্গাপুজো আরম্ভ হয়।

বর্তমানে ভোলানাথের তৃতীয় প্রজন্মের পাঁচ জ্ঞাতিভাই পালা করে এই পারিবারিক পুজোর দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছর জ্যেষ্ঠ সুনীলকুমার সাহা রয়েছেন পুজোর তত্ত্বাবধানে। বাকি চার ভাই সুশান্ত, অমিত, সৌমেন ও অপূর্ব আছেন সহযোগিতায়।
• মূর্তির বৈশিষ্ট্য— প্রথম বছর থেকেই, দুর্গামূর্তি গড়া হয় বাড়ির ঠাকুরদালানে। চার প্রজন্ম ধরে একই পরিবার ঠাকুর গড়ার কাজ করছেন এই পরিবারে। বর্তমানে মায়ের রূপদান করেন অমর পাল।

সাবেক একচালা ঠাকুরের ডাকের সাজ হলেও প্রতি দিন মাকে দেওয়া হয় নতুন বসন। মাতৃমূর্তির দু’পাশে চামর হাতে থাকে জয়া-বিজয়া। এ বাড়িতে সিংহের পাথরের চোখ পরানো হয় প্রতি বছর। আরও এক বিশেষত্ব হল, দেবী ও তাঁর সন্তানদের না পরিয়ে মহিষাসুর ও সিংহকে পরানো হয় গিণির মালা!

• পুজোর রীতি— প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে সাহাবাড়ির দুর্গোত্সবের কাঠামো পুজো হয়। মহালয়ার পরের প্রতিপদে পুজোর ঘট বসানো হয়। এবং সেই দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর রীতিনীতি।

অষ্টমীর সকালে কুমারী পুজোর প্রথা আছে। আর সন্ধিপুজোয় হয় ধুনো পোড়ানো। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়, তাই পশুবলি হয় না এ বাড়িতে। তবে মন্ত্রে বলির রীতি আছে।

এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় বংশপরম্পরায় পৌরোহিত্য করছেন শ্রীকৃষ্ণ চক্রবর্তী।
• ভোগের তালিকা— প্রতিপদ থেকে দশমী পর্যন্ত মোট ন’ মণ চালের ভোগ ও নৈবেদ্য দেওয়া হয় মাকে। প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী অবধি প্রতি দিন মাকে দেওয়া হয় এক লিটার দুধ। এ বাড়িতে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। থাকে চিনির লুচি, ফল, বাড়িতে তৈরি নারকেল নাড়ু। রোজ ১৮টি নৈবেদ্য সাজানো হয়। সন্ধিপুজোর নৈবেদ্য হয় এক মণ চাল ও এক মণ চিনির।

সময় মেনে দশমীর দিনই বিসর্জন হয় সাহাবাড়ির মাতৃমূর্তির। প্রথা মেনে এখনও কাঁধে করে গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয় মৃণ্ময়ী মাকে। বিসর্জন হয় খিদিরপুরের দইঘাটে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজোর সময় যে ঢুলি-সানাইবাদক থাকেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়েই মহা আড়ম্বরে বিসর্জনের শোভাযাত্রা বেরোয় প্রতি বছর। পুরনো দিনের মতো হ্যাজাক জ্বালিয়ে পথ দেখানো হয় মাকে। ৩০-৩৫ বছর আগেও জোড়া নৌকায় মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হতো, বললেন সুনীলকুমার সাহা।

• বিশেষ দ্রষ্টব্য— ‘মা খুব জাগ্রত’, বললেন এ বাড়ির মেয়ে সত্তরোর্ধ্ব শোভা সাহা। প্রতি বছর ‘উমা’ আসার কয়েক দিন আগেই তিনি চলে আসেন বাপের বাড়িতে। বললেন, এক বছর খুব বৃষ্টি-বন্যার জন্য তত্কালীন মৃত্ শিল্পী রাম পাল গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আর কলকাতায় আসেননি। বাড়ির কর্তারা যখন অন্যত্র ব্যবস্থা করছেন সেই সময় হঠাতই একদিন তিনি উপস্থিত হলেন। তখন পুজোর বাকি মাত্র ১৫ দিন। পরিবারের বিশ্বাস, মায়ের স্বপ্নাদেশেই তিনি তড়িঘড়ি চলে আসেন সাহাবাড়িতে।

• দিক নির্দেশ— খিদিরপুর মোড় থেকে ডান দিকে গিয়েই বাঁ দিকের শিবমন্দিরের পাশ দিয়ে সোজা যেতে হবে। কিছুটা যাওয়ার পর বাঁ দিকে একটি মসজিদের গা ঘেঁষে রাস্তায় ঢুকেই সাহাবাড়ি, ৮ মোহনচাঁদ রোড।

প্রতিবেদন ও ছবি: শেলী মিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.