|
|
|
|
|
আঢ্যবাড়ির দুর্গোত্সব
(চেতলা, কলকাতা) |
আদতে হুগলি জেলার ওবিদপুর গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ আঢ্য আদিগঙ্গার পাড়ে এই চেতলাতেই জমি কিনে বসতভিটে নির্মাণ করেন। কলকাতার চেতলা অঞ্চল তখনও গ্রাম। আঢ্যবাড়ির ঠিকানা ছিল ৮ মায়েরপুর রোড। গ্রামের বাড়িতে তাঁর মায়ের প্রতিষ্ঠিত শালগ্রাম শিলা শ্রী শ্রী ঈশ্বর শ্রীধর ঠাকুর জিউ নিয়ে এসে গোবিন্দ আঢ্য প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতার ঠাকুর দালানে। ১৮৮০ সালে গোবিন্দ আঢ্যের চার পুত্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র রামালদাস আঢ্য এই দেবদালানেই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। |
|
• মূর্তির বৈশিষ্ট্য— পারিবারিক দেবদালানেই তৈরি হয় প্রতি বছরের মাতৃমূর্তি, ডাকের সাজের একচালা ঠাকুর। তবে দেবীমূর্তির দু’দিকে চামর হাতে থাকে তাঁর দুই সহচরী জয়া-বিজয়া।
• পুজোর রীতি— প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো দিয়ে এ বাড়ির দুর্গোত্সব শুরু হয়। পালা হিসেবে নয়, পরিবারের সকলে একত্রে পুজো পালন করেন। গ্রামীণ রীতি মেনে ঠাকুরদালানে মায়ের বেদীর পুরোটাই মাটির তৈরি।
সন্ধিপুজোয় ১০৮ মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের আরতি করা হয়। সকাল থেকে উপোস করে কেবলমাত্র পরিবারের লোকেরাই এই প্রদীপ জ্বালতে পারে। বাড়ির সব মহিলারাই ধুনো পোড়ানো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। মাথায় একটি ও দু’হাতে একটি করে মাটির খুরিতে ধুনো পোড়ানো নিয়ম এ বাড়ির। আঢ্যবাড়িতে পশুবলি হয় না। তবে সন্ধিপুজোর সময় বাড়িতে তৈরি নারকেল নাড়ু বলি দেওয়া হয়। সময় মেনে দশমীর দিন দেবীমূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয় আদিগঙ্গার পারিবারিক ‘আঢ্যঘাট’-এ। বাংলার ১২৯০ সালে এই ঘাট নির্মাণ করেন গোবিন্দ আঢ্য। ঘাটের পাশেই আছে পারিবারিক গোপেশ্বর শিব ঠাকুর জিউর মন্দির।
• ভোগের তালিকা— প্রতি দিনই নিরামিষ ভোগের আয়োজন করা হয়। তবে সপ্তমী ও নবমীর সকালে ন’টা মাটির হাঁড়িতে মুড়কির সঙ্গে দেওয়া হয় বাড়িতে বানানো তার রকমের নাড়ু— নারকেল, তিল, চাল, পোস্ত। সব কিছুই তৈরি হয় কাঠের উনুনে। এ ছাড়া, রোজ রাতে লুচি ও রাবড়ি ভোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে একটা বড় বাটিতে দুধ।
• বিশেষ দ্রষ্টব্য— পরবর্তীকালে চেতলা অঞ্চলের এই রাস্তা গোবিন্দ আঢ্য ও পুত্র রাখাল দাস আঢ্যর নামে করে দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে। |
|
• দিকনির্দেশ— রাসবিহারী মোড় থেকে চেতলার দিকে যেতে কেওড়াতলা ব্রিজ পেরিয়েই ডান দিকের রাস্তায় দ্বিতীয় বাড়ি, যার বর্তমান ঠিকানা ৮৪, রাখাল দাস আঢ্য রোড।
|
প্রতিবেদন: শেলী মিত্র
ছবি: পারিবারিক সূত্রে |
|
|
|
|
|
|