টিম টিম করে টিকে আছে ঐতিহ্য
গঙ্গাস্নান
ক কালে কলকাতার ঘুম ভাঙত ভোরের গঙ্গাস্নান যাত্রীদের কলরবে। তখন গঙ্গাস্নান অনেকেরই নিত্যকর্মের অঙ্গ ছিল। অমৃতলাল বসুর আত্মস্মৃতিতে আছে শ্যামবাজারের জনৈক বাসিন্দার কথা। অন্ধকার থাকতেই তিনি গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে পড়ে ক্রমাগত আওড়াতেন ‘শিব ধন্য কাশী’! ‘‘পার্শ্বের শয্যায় পিতামহ শয়ন করেছিলেন, ডেকে বল্লেম ‘দাদা, শিব ধন্য কাশী ফিরচে, তা হ’লে ফরসা হ’তে দেরী নেই...।’’ দলবেঁধে স্নান করতে গিয়েই মহিলাদের মধ্যে গড়ে উঠত সখ্য। বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিতেও একই গল্প। ‘‘ছেলেবেলায় ঘুম ভাঙত কীর্তনের আওয়াজে। ভোরের প্রথম ট্রামে কীর্তন করতে করতে অনেকেই যেতেন গঙ্গাস্নানে। ট্রামটা স্ট্র্যান্ড রোড থেকে এখনকার নতুন অর্ডন্যান্স বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়াত।”
আহিরিটোলা ঘাটের ছবি শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা।
সে কালে কলকাতায় পুজোর সওদা করতে এসেও অনেকে গঙ্গাস্নান সেরে যেতেন। কালের প্রবাহে গঙ্গাস্নান এখন পাঁজি-নির্ভর। মহালয়ার মতো বিশেষ কিছু তিথিতেই স্নানার্থীদের দেখা যায়। যুগের হাওয়া আর গঙ্গার দূষিত জল তো দায়ী নিশ্চয়ই, তার সঙ্গে অনেক ট্রাম ও বাসের রুট বদলে যাওয়ায় স্নানযাত্রীর সংখ্যা কমেছে। তবু কিছু মানুষ টিকিয়ে রেখেছেন সেই ঐতিহ্য। যেমন উত্তর কলকাতার তিমির সাহা। ছোটবেলায় আসতেন বাবার সঙ্গে। আটান্ন বছর হল, এখনও রোজ গঙ্গাস্নানে আসেন। সারা দিন তরতাজা থাকতে বাগবাজার থেকে আহিরিটোলা ঘাট সাঁতার কাটেন শান্তনু বড়াল। কয়েক বছর আগেও কাকভোরে দক্ষিণের বাঘা যতীন থেকে প্রথম বাসে গঙ্গাস্নানে যেতেন বীণাপাণি দেবী। শরীর জবাব দেওয়ায় আর পারেন না। এখনও ভোরে ঘাটগুলোতে কিছু মানুষকে পাওয়া যাবে, রোদ-বৃষ্টি-কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে গঙ্গাস্নান যাঁদের চাই-ই চাই। আহিরিটোলা ঘাটে তিরিশ বছরের পুরোহিত শ্রীকান্ত জানালেন, পিতৃপক্ষ থেকে দেবীপক্ষ পর্যন্ত গঙ্গাস্নানের ভিড় থাকে। সে সময় তাঁরা গঙ্গার জলের ওপরই বেঞ্চ পেতে বসে পড়েন। পুরনো কলকাতার গঙ্গাস্নানের ঐতিহ্য এঁদের মাধ্যমেই শিবরাত্রির সলতের মতো বেঁচে আছে।

গোড়ার কথা
তিন বছর প্রতীক্ষার শেষে, বুধবার পঞ্চমীর সন্ধ্যা ৭টায় হো চি মিন সরণির আইসিসিআর-এ প্রকাশিত হচ্ছে রামচন্দ্র গুহ-র গাঁধী বিফোর ইন্ডিয়া (পেঙ্গুইন)। লেখকের গাঁধী-জীবনীর প্রথম খণ্ড। প্রায় সাতশো পাতার এই বইতে আছে গাঁধীর জন্ম থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা-পর্ব। এরিক এরিকসন বা রাজমোহন গাঁধীর মোহনদাস-এর পর এই ঢাউস জীবনীর দরকার ছিল? গুহ জানাচ্ছেন, এত দিন সকলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গাঁধীর প্রস্তুতিপর্ব হিসেবেই দেখেছেন। কিন্তু সেটি ঠিক নয়। গাঁধীর তিরিশ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা যান প্রথম গুজরাতি ব্যবসায়ী আবুবকর জাভেরি। জাভেরির আত্মীয় দাদা আবদুল্লাই পরে গাঁধীকে দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার ব্রিফ দেন। ডারবান আদালতে তাঁদের মামলায় এমন এক আইনজীবীর দরকার ছিল, যিনি গুজরাতি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই নথি পড়তে পারবেন। কাথিয়াবাড় স্কুলে গাঁধীর রেজাল্টও খুঁজে বের করেছেন লেখক। পাটিগণিত, গুজরাতি, ইতিহাস, ভূগোল ও ইংরেজিতে গড়ে ৫৮ শতাংশ নম্বর। পরে কেনিয়ার জোমো কেনিয়াট্টা, জাম্বিয়ার কেনেথ কাউন্ডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা অনেকেই গাঁধীর আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটান। হরেক খুঁটিনাটিসহ আফ্রো-এশীয় সংহতিতে এই বইটি তাই দিকচিহ্ন হয়ে থাকবে।

ব্যতিক্রমী
দুর্গাপ্রতিমার রূপবৈচিত্রে আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। প্রথমে দুর্গার কাটআউট ছবি দিয়ে পুজো শুরু বাড়িতে। ক্রমে বাবা-মা আর বন্ধুদের উৎসাহে পূর্ণাঙ্গ মৃন্ময়ী রূপ পায় হ্যালি গোস্বামীর হাতে। উপাদান আসে বাংলার টেরাকোটা মন্দির, লিথোগ্রাফ এবং কাঠের ভাস্কর্য থেকে। পেশায় আইনজীবী হ্যালি সারা বছর ধরে এ সবই খোঁজেন। রথের দিন কাঠামো পুজো করে একটু একটু করে গড়েন প্রতিমা। মাটি চাপানো, রঙ, সাজসজ্জা পুরোটাই নিজের হাতে, এমনকী চালচিত্রও। তার পর নিজেই পুরোহিত। আলিপুর গোপালনগর রোডে হ্যালির পুজো এ শহরে ব্যতিক্রমী। অন্য দিকে, নিউটাউন উত্তরা আবাসনের (প্রথমা-দ্বিতীয়া) পুজোয় প্রতি বছরই থাকে লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান। এ বারেও আসছেন পুরুলিয়ার ছো-নাচের শিল্পীরা।

ব্রাত্যজন
মহালয়ার আগেই হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদে বিপুল কলেবরে বেরিয়েছে ব্রাত্যজন নাট্যপত্র (প্রধান সম্পাদক: ব্রাত্য বসু)। সম্পাদকীয়তে স্বীকারোক্তি: ‘শিল্পচর্চা, বাঁচা আর টিকে থাকা এই তিন শব্দের মাঝে রয়েছে যোজন যোজন অতলান্তিক দূরত্ব।’ সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় অশোক মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘থিয়েটার আমার কাছে এখনও সবচেয়ে রোমাঞ্চকর আহ্বান’! তাঁকে নিয়ে ক্রোড়পত্র এ-সংখ্যায়। অপর এক ক্রোড়পত্রে ব্রাত্য-কৃত ‘সিনেমার মতো’ নিয়ে প্রকাশিত সব রচনা, নাটকটিও আছে অন্য বিভাগে। দেবশঙ্কর হালদার প্রদত্ত ‘বিষ্ণু বসু স্মারক বক্তৃতা’য় প্রকাশ পেয়েছে তাঁর অভিনয়ের মনন। রতন থিয়াম আর ইতালির অভিনেত্রী ক্রিস্তিনা দোনাদিয়ে-র সাক্ষাৎকার। সঙ্গে প্রবন্ধ, সমালোচনা, মৌলিক নাটক, অনুবাদ-নাটক ও চিত্রনাট্য।

পুজোর নোটবুক
মোটামুটি ১২০০ বারোয়ারি পুজো হয় কলকাতায়। কিন্তু এ শহরে থিমমেকার কত জন? বলা কঠিন। কোন বছর কারা কী থিম করেছিল, শিল্পী কে ছিলেন, কে কবে কোন সম্মান পান এমন নানা খুঁটিনাটি তথ্য দু’মলাটে একত্র হয়নি কোনও দিন। এ বার এ সব নিয়েই দুর্গাপুজোর নোটবুক (সম্পা: সম্রাট চট্টোপাধ্যায়, দীপ প্রকাশন) প্রকাশিত হল। তবে কেবল তথ্য সংকলনেই দায়িত্ব শেষ করেননি সম্রাট, আছে বেশ কয়েকটি লেখাও। বনেদি বাড়ির পুজো, কালের রথে কলকাতার দুর্গাপুজো, থিম পুজোর বিবর্তন, সেরা পুজোর সন্ধানে, পুজোর বাণিজ্যকরণ ইত্যাদি নিয়ে লিখেছেন কণাদ দাশগুপ্ত, সত্যম রায়চৌধুরী, দেবাশীষ কুমার, কৌশিক দত্ত প্রমুখ। আছে অতনু পাল ও কণাদ সান্যালের তোলা বহু ছবি।

চিদানন্দ-স্মরণ
চিদানন্দ দাশগুপ্ত সিনেমার সেই ঐতিহাসিক যিনি সত্যজিৎ-সৌমিত্রর মধ্যে পরিচালক-অভিনেতার বুদ্ধিমার্গী বিনিময়ের কথা প্রথম আবিষ্কার করেন। পরে সত্তর দশকে তাঁর প্রথম কাহিনিচিত্র ‘বিলেত ফেরত’-এরও অন্যতম প্রধান চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এ বারে তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক-বক্তৃতা দিলেন সৌমিত্র। ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি তাঁদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত চিদানন্দের স্মৃতিতে এই বক্তৃতার আয়োজন করছে গত বছর থেকে। ৫ অক্টোবর সন্ধেয় বিড়লা তারামণ্ডলের সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হল এ বারের বক্তৃতা। এ দিন ছিল সি এফ এস-এর ৬৭তম জন্মদিন, জানালেন সভাপতি প্রদীপ্তশঙ্কর সেন। এ দেশের শিল্পসম্মত সিনেমা নিয়ে চিদানন্দের নিরন্তর চর্চা এবং তাঁর সঙ্গে জড়ানো নিজের নানা স্মৃতি নিয়ে বললেন সৌমিত্র। তাঁকে সারা জীবনের কাজের সম্মানেও ভূষিত করল সি এফ এস। চিদানন্দ-কন্যা অপর্ণা সহ ছিলেন অনেকেই।

যারা পরিযায়ী
আন্তর্জাতিক ‘ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক ট্র্যাভেলার’ হাতে নিয়ে যদি ভ্রমণপিপাসু বাঙালি পাঠকের হীনমন্যতা জাগে, তবে তা সযত্নে মুছে দিতে পারে যারা পরিযায়ী (সম্পা: অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়)। ঝকঝকে আর্টপ্লেটে লেখা ও ছবির তীব্র মাদকতায় মনে মনে এক নিমেষেই পৌঁছে দেয় ‘শরৎ রঙের রেকাব— দাচিগ্রাম’ (দেবল সেন), অথবা ‘ফিরোজা দ্বীপ। হলুদ ফুল। ডানা মেলা স্বপ্নের সীগাল’ (অভিজিৎ চক্রবর্তী), ‘সপ্তসঙ্গমে ভাওঠায়’ (প্রদীপ বরাই)। শতবর্ষে পক্ষী-প্রেমিক অজয় হোমের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য (হীরক নন্দী, দেবব্রত ঘোষ)। রসনাতৃপ্তিতে ইতিহাস ও বর্তমানের সরস মিশেল (‘ঘরকুনো জিভ, পরিযায়ী স্বাদ’) ঘটিয়েছেন শুদ্ধব্রত দেব। সঙ্গে প্রচ্ছদ: নেপালের বালিকাদেবী (জয়দীপ মিত্র)।

পুজোর পোস্টকার্ড
দিদিমার কাঁপা কাঁপা হাতে লেখা ‘স্নেহের দাদুভাই’ জীবন থেকে মুছে গিয়েছে অনেক আগেই। এখন শুধু মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে শুভেচ্ছাবার্তা: ‘হ্যাপি মহালয়া’ বা ‘শুভ বিজয়া’। পোস্টকার্ডে ‘বিজয়ার প্রণাম নিও’ এখন অচল। সাবেকিয়ানার গণ্ডি ছাড়িয়ে ‘থিম সঙ’ থেকে শুরু করে মহাতারকার ভিড় মহানগরের থিম পুজোর প্রতিযোগিতায়। তার মধ্যেই আদ্যিকালের পুজোর সেই সব পোস্টকার্ডের স্মৃতি উস্কে দিল জয়দীপ ও সুচন্দ্রা কুণ্ডুর ‘দুর্গা’। এই অভিনব প্রচেষ্টা কলকাতার মাত্র পাঁচ বছরের এক বাড়ির পুজোর (৭এ ক্ষুদিরাম বোস রোড, কল-৬)। পোস্টকার্ডের এক পিঠে দুর্গাকে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা ছবি। অন্য পিঠে পুজো নিয়ে কবিতা কিংবা লেখা। পুজোয় প্রিয়জনকে অবাক করার চমৎকার সুযোগ।

লক্ষ্মীর পা-চালি
লক্ষ্মীর শাস্ত্রীয় ও লৌকিক বিবরণ বৈচিত্রে ভরা। হিন্দু ব্রাহ্মণ্য ও পৌরাণিক ধর্মীয় ধারায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম সহ তন্ত্রশাস্ত্রেও লক্ষ্মীর মূর্তিরূপের তথ্য পাওয়া যায়। পুজো-আচার-ব্রত-আলপনায় যুগ যুগ ধরে লক্ষ্মী বাংলার জনসমাজ ও সংস্কৃতির অঙ্গ। বাংলার ঘরের আঙিনা ছাড়িয়ে লক্ষ্মী বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আলোচ্য। বাংলারই নানা অঞ্চলে পূজার্চনায় তারতম্য আছে। এই সার্বিক তথ্য অন্বেষণই সুচারু রূপ পেয়েছে শিবেন্দু মান্নার লক্ষ্মীর পা-চালি (বাঙলার মুখ, ১৭০.০০) বইয়ে। মুখবন্ধ মলয়শংকর ভট্টাচার্য।

নাটক নিয়ে
দুই পর্বে ভাগ করা প্রচুর প্রবন্ধ নাটক নিয়ে, তাতে ভারতের নাট্যসাহিত্য মূলত মঞ্চায়নের তাগিদে কী ভাবে পৌঁছে গিয়েছে কাল থেকে কালান্তরে তা নিয়েই লেখা। কোরক-এর (সম্পা: তাপস ভৌমিক) শারদ সংখ্যা: ‘বাংলা নাটক ও নাট্যমঞ্চ’। থিয়েটার-রসিকদের কাছে জরুরি এই সংখ্যার ‘সম্পাদকের নিবেদন’ বলছে: ‘নাট্যসাহিত্য যে তার বিকাশ ও বৈচিত্রায়নের জন্য নাট্যমঞ্চ, নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত সেই পারস্পরিক সম্পর্কসূত্র সন্ধান করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ স্যাস নাট্যপত্র-এ (সম্পা: সত্য ভাদুড়ি) নাট্য-সমালোচনা, রচিত নাটকের সঙ্গে মনস্ক প্রবন্ধ দেবাশিস রায়চৌধুরীর ‘রোমান্সপ্রিয় নাটককার ক্ষীরোদপ্রসাদ’, বা তূর্ণা দাশের ‘প্রাচীন ভারতীয় নাট্যে মেয়েরা’। পূর্ব পশ্চিম-এ (সম্পা: সৌমিত্র মিত্র) উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় সৌমিত্র বসু শেখর সমাদ্দার দেবাশিস মজুমদারের নাটক। বিভাস চক্রবর্তীকে নিয়ে তৈরি ছবির চিত্রনাট্য। বিনোদিনী-র সার্ধশতজন্মবর্ষ স্মরণ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে ক্রোড়পত্র। এবং স্বয়ং সম্পাদক-কৃত দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার।

মনন-সঙ্গী
এ বার পুজোয় বারোমাস (সম্পা: অশোক সেন) প্রকাশিত হল না। বেরোবে ডিসেম্বরে, বড়দিন সংখ্যা হয়ে, কাজ চলছে পুরো দমে। বারোমাস-এর মতোই পুজোয় আর যে-পত্রিকাটির অপেক্ষায় থাকে মনস্ক বাঙালি, সেই অনুষ্টুপ (সম্পা: অনিল আচার্য) বেরিয়েছে। ‘অন্যরা চিনতে পারবে বাইরে থেকে আমার মুখ দেখে, অন্ধ হলে আমাকে স্পর্শ করে, আমার গলার স্বরে, এই প্রত্যাশাময় কল্পনা কিন্তু আমাদের অহংনির্মিতির অন্যতম ভিত্তি।’ অরিন্দম চক্রবর্তী লিখেছেন তাঁর ‘কল্পনার রাজনীতি এবং ত্বকের আমি’তে। ক্রোড়পত্রে ‘গণেশ পাইন’, ‘আহোমরাজের খোঁজে’, ‘বিস্মরণের কামাক্ষীপ্রসাদ’, ‘রাজস্থানী বনাম মারোয়াড়ী’। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিসমস্যা নিয়ে প্রণব বর্ধনের ‘সমর সেন স্মারক বক্তৃতা’, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা, কথোপকথন সহ। ‘ভব্যতায়, অ-ভক্তিতে ও অতীত চর্চায় ইংরেজ’ লিখেছেন দীপেশ চক্রবর্তী। শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘গীতা ২/ ৪৭ ইতিহাসকথা: সূত্রাকারে’। মৈত্রীশ ঘটক ও অমিতাভ গুপ্ত: ‘একা নায়ক ভালো একনায়কের সন্ধানে’। এ ভাবেই সমাজ-ব্যবচ্ছেদে ব্রতী সৌরীন ভট্টাচার্য, প্রদীপ বসু, দীপেন্দু চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, শাশ্বতী ঘোষ, অনিতা অগ্নিহোত্রী, স্বাতী ভট্টাচার্য, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, আরও অনেক বিশিষ্ট গদ্যকার।

শতবর্ষে বলরাজ
‘যে মা আমার জন্মদাত্রী আর যে মা আমাকে লালন করেছেন, এঁদের দুজনের মধ্যে আমি আমার সেই মা’র পক্ষে দাঁড়াচ্ছি যিনি আমাকে লালন করেছেন। আমি পাকিস্তানি আগ্রাসন আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষের পক্ষে।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছিলেন বলরাজ সাহনি। ’৭১-এর সেপ্টেম্বরে, মহারাষ্ট্রের নিখিল ভারত যুব ফেডারেশন-এর উদ্যোগে এই আন্দোলন-সংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর (শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় অঙ্কিত ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ শিক্ষক সহায়ক সমিতি কৃত) উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি বলরাজ (সঙ্গের ছবিতে ডান দিকে)। রাওয়ালপিন্ডির মানুষটি (১৯১৩-’৭৩) সাহিত্য চর্চা, সাংবাদিকতা, অভিনয়ের সঙ্গে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেন। সক্রিয় ছিলেন ব্রিটিশ-বিরোধিতায়, বামপন্থী আন্দোলনে, গণনাট্য সঙ্ঘে। সৌমিত্র আর নাসিরুদ্দিন তাঁদের অভিনয়ের ‘গুরু’ মানেন তাঁকে। জন্মশতবর্ষে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব ৩-৮ অক্টোবর গোর্কি সদনে দেখাচ্ছে তাঁর অভিনীত ছবি পরদেশী, দো বিঘা জমিন, কাবুলিওয়ালা ও গরম হাওয়া।

সৃষ্টিসুখ
ফেলে দেওয়া জিনিস কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তাই ভাবতেন নিজের ছোট্ট পানের দোকানে বসে। এ বার নারকেলের ছোবড়া দিয়ে দেড় ফুটের দুর্গা বানিয়েছেন যাদবপুরের নারায়ণচন্দ্র দত্ত ওরফে সুনুদা (সঙ্গে বাঁ দিকের ছবি)। এর আগেও গড়েছেন বাঁশ, সুপুরির খোল বা গাছের শেকড় দিয়ে। পুজোয় শিল্পীর হাতের কাজ থাকবে সুকান্ত সেতু সংলগ্ন শ্যামা কলোনি শ্যামাসংঘের মণ্ডপে। অন্য দিকে পদ্ম, টগর, চাঁপা, গোলাপ, অপরাজিতা, সূর্যমুখী, নয়নতারা সহ নানা ফুলের পাপড়ি সাত মাস ধরে শুকিয়েছেন বছর চুয়ান্নর হরিসাধন বিশ্বাস। সেই শুকনো পাপড়ি দিয়ে তৈরি করেছেন দুর্গা (ডান দিকে)। আগেও বানিয়েছেন গেঞ্জির কাপড়, রবারের পাইপ, তেজপাতা, ফলের বীজ, ইলেকট্রিক তার, খবরের কাগজের টুকরোর প্রতিমা। গত নয় বছর ধরেই এই ভাবে দুর্গা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন হরিসাধনবাবু। বরানগর ন’পাড়ার পুলিশ কোয়ার্টারের পুজোমণ্ডপে দেখা যাবে তাঁর সৃষ্টি।

বনেদি পুজো
কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে আড়াইশো বছর পেরোনো পথ-পরিক্রমায় কত না ঐতিহ্যবাহী পুজো, তার উত্থানপতনের কত বিচিত্র ইতিহাস। পুরনো বাড়ির শ’খানেক পুজো এখনও খুঁজে পাওয়া যাবে এ শহরে, তার অর্ধেকেরও বেশির বিবরণ এ বার একত্র করেছেন গৌতম বসুমল্লিক (কলকাতার পারিবারিক দুর্গাপুজো, ছবি: দেবাশিস সাউ, কারিগর, ৬০০.০০)। আছে পারিবারিক পরিচয়, ঠাকুরদালানের স্থাপত্য, প্রতিমার বৈশিষ্ট্য, এমনকী পুজোর রীতি ও উপচারের খুঁটিনাটিও (সঙ্গে দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ির প্রতিমা)। শহরের দুর্গাপুজোর ইতিহাস, কুমোরটুলির বিবর্তন, পুজো নিয়ে হলওয়েল, ফ্যানি পার্কস থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা, থাকছে সবই। অন্য দিকে, বীরভূমের ‘প্রগতি’ পত্রিকা-র ‘বিষয়: দুর্গা’ (সম্পা: দেবাশিস সাহা) সংখ্যায় প্রায় তিরিশটি নিবন্ধে দুর্গার পৌরাণিক ঐতিহ্য থেকে বিবর্তন, বিস্তার, মন্দির-ভাস্কর্য, পটদুর্গার বিস্তারিত বিবরণ। দেবাশিস সাহা ও আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় দেবী দুর্গা/ স্বরূপ ও সন্ধান (নন্দিতা, কল-৯) শীর্ষকে বই আকারেও প্রবন্ধ সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছে। আছে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ ছবি।

সিংহবাহিনী
শারদীয় পুজোর পাশাপাশি সম্বৎসরের আরাধনা। চার শতাব্দী ধরে বাংলার এক প্রাচীন পরিবার, (দে) মল্লিকদের কুলদেবী সিংহবাহিনী। বৈদ্যনাথ মল্লিক চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের এক গুহায় গোপনে পূজিত এই দেবীমূর্তি নিয়ে এসে সপ্তগ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই মূর্তির ইতিহাস আরও প্রাচীন। একদা বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র সপ্তগ্রাম গুরুত্ব হারায় সরস্বতী নদী মজে যাওয়ায়। মল্লিক পরিবারও কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে ব্যবসা এবং ভদ্রাসন সরিয়ে আনেন। তাদেরই বিভিন্ন শাখায় সিংহবাহিনীর পূজা আজও অক্ষুণ্ণ আছে। এ বার ৩৯ যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের হেমেন্দ্র মল্লিকের বাড়িতে ৪০০ বছর পূর্তি উৎসব উদ্যাপন, প্রকাশিত হবে স্মারক পুস্তিকাও।

সঙ্গীত চিকিৎসা
দু-বেলা দুটো করে অ্যান্টিবায়োটিক, সঙ্গে ভিটামিন আর ৪৫ মিনিট করে পুরিয়া-ধানেশ্রী। এমন প্রেসক্রিপশন হয় নাকি? ঠিক এমনটাই না হলেও, রোগ সারাতে যে কাজ দেয় গান, তা হাতে-কলমে পরখ করছেন হাড়ের ডাক্তার সুমন্ত ঠাকুর। বাগুইআটিতে তাঁর নিজস্ব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি উদ্বোধন হল ‘মিউজিক মুভমেন্ট থেরাপি সেন্টার’-এর। অপারেশনের সময়ে ও পরে গান শোনালে রোগীদের ব্যথা, মানসিক চাপ কমছে, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। এ বার হবে আরও পোক্ত গবেষণা। জন্মগত মানসিক প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলায়, কিংবা দীর্ঘ দিনের ব্যথা থেকে জন্মানো অবসাদ কাটাতে সঙ্গীত ‘থেরাপি’ হিসেবে কতটা কার্যকর, তা দেখতে তৈরি হয়েছে নানা ধারার চিকিৎসক, দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ দল। ‘‘সঙ্গীত চিকিৎসার বিকল্প নয়, সহযোগী,” জানালেন সুমন্তবাবু।

শিল্পী
শোভাবাজার নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের বাড়ির প্রতিমাশিল্পী হারাধন (হারু) পাল। বয়স ৭৫। আদতে তিনি মৃৎশিল্পের আঁতুড়ঘর কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির বাসিন্দা। তারাপদ ও বিমলা পালের তিন সন্তানের কনিষ্ঠ হারুর জন্ম কুমোরটুলিতে। বাবার সঙ্গে শোভাবাজার রাজবাড়ির ছোট তরফেরও মূর্তি গড়তেন। এক বার প্রতিমা গড়তে গিয়ে কাঠামো পড়ে বাবার মাথা ফেটে যায়। সেই থেকে ছোট তরফের কাজে ইতি। কাকা দুর্গাচরণের কাছেই মৃৎশিল্পে অনুপ্রেরণা। তাই গুরু বলে মানেন তাঁকেই। ’৭১-এ নকশাল আন্দোলনের সময় নিজস্ব স্টুডিয়ো অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়। সেই থেকে শোভাবাজার রাজবাড়ি ও কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বাড়ির দুর্গাপুজোয় মূর্তি তৈরির কাজ জোটে এই দুই পরিবারের সৌজন্যে। বর্তমানে ষোলোটির মতো বনেদি বাড়ির প্রতিমা তৈরি করেন। কাজের পাশাপাশি বাড়িতে রামায়ণ, মহাভারত, গীতা, বাইবেল, পড়েই দিন গুজরান শিল্পীর। সঙ্গে নিয়মিত পুজোআচ্চা বাড়ির অন্দরমহলেই। “সংযমী জীবন শারীরিক কাঠামো বাইরে থেকে মজবুত লাগলেও ভেতরে ধরেছে ঘুণপোকা। ইচ্ছে ছিল ভাল একটা স্টুডিয়ো করব, যাতে নিজের শিল্পসত্তাকে নিজের জায়গাতেই আরও আন্তরিকতায় ফুটিয়ে তুলতে পারি। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তা-ও বুঝি আর এ জীবনে সম্ভব হল না।” কাজের মধ্যেই চাপা বেদনার কথা জানালেন শিল্পী।

মস্কোয় দুর্গা
খাস মস্কোয় কিনা একেবারে দিনক্ষণ মেনে দুর্গাপুজো! হ্যাঁ, সেটাই সম্ভব করে আসছে মস্কো দুর্গাপুজো কমিটি, আর সেই বিপুল কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে এই শহরেরই মেয়ে দেবস্মিতা মৌলিকের। চব্বিশ বছর আগে প্রথম দুর্গাপুজো উদ্বোধন করেছিলেন স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, তার পর থেকে মস্কো রামকৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী জ্যোতিরূপানন্দই পুজো পরিচালনা করেন। তিরিশ বছর মস্কোয় আছেন দেবস্মিতা, পড়াশোনা শান্তিনিকেতনে, তার পর চাকরি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থায়। মাঝে মাঝে কলকাতায় আসেন। প্রথম থেকেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত দেবস্মিতা, জড়িয়ে আছেন এক দিকে উচ্চাঙ্গ সংগীত সহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে, অন্য দিকে শীতকালীন অলিম্পিক্স নিয়ে। মস্কো থেকে ফোনে জানালেন, এখন পুজোর আয়তন বেড়েছে, গোটা কুড়ি বাঙালি পরিবারের সঙ্গে মেতে ওঠেন স্থানীয় ভারতীয় এবং বহু রুশ পরিবার, পুজোর দিনে ভিড় পৌঁছয় হাজারেও। ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় প্রতিমা যায় কুমোরটুলি থেকেই, বছর তিন অন্তর। মণ্ডপ সাজান এক কলম্বিয়ান, আর প্রসাদ বিতরণ করেন রুশ ইলিনা বৌদি। দেবস্মিতা সম্পাদনা করেন ওদের ইংরেজি-রুশ-বাংলা ত্রিভাষিক বার্ষিক পত্রিকা ‘আরাত্রিকা’— উস্তাদ আমজাদ আলি খান আর তাঁর দুই ছেলে আমন-আয়ান নিয়মিত লেখেন, প্রচ্ছদ এঁকেছেন যোগেন চৌধুরী, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘আরাত্রিকা’ বিশেষ করে দূতাবাস স্কুলের ছোটদের আত্মপ্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠেছে, জানালেন দেবস্মিতা।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.