পুজো মাতাচ্ছে বড় কল্কার রঙিন তাঁত
সারা বছর হাল ফ্যাশানের জামাকাপড় কিনলেও, পুজোর ক’টা দিন সব বাঙালিই বোধ হয় ঝোঁকেন তাঁতের শাড়ি কেনার দিকে। আর তাই সুতো, তাঁত শ্রমিকের মজুরি-সহ নানা আনুষঙ্গিক জিনিষের দাম বাড়লেও, তাঁতের শাড়ি কেনাতে খামতি দেখা যায় না।
কালনা মহকুমার সমুদ্রগড় এবং ধাত্রীগ্রামের তাঁতের শাড়ির চাহিদা জেলা তো বটেই ভিন জেলাতেও রয়েছে। প্রতি বারের মতো এ বারও ওই এলাকার তাঁতিরা শাড়িতে এনেছেন বৈচিত্র্য। তাঁতিদের দাবি, নানা রঙের বড় বুটি ও কল্কার কাজ করা শাড়িই এ বছর চোখ ক্রেতাদের।
চলছে এই শাড়িই।—নিজস্ব চিত্র।
কালনায় মহকুমায় তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ। তাঁত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র এলাকার শিল্পীরাই নন, উত্তরবঙ্গ থেকেও বহু তাঁত শিল্পী কাপড় বোনার কাজে ওই দুই এলাকায় আসেন। সারা বছর তাঁতিদের ব্যস্ততা লেগেই থাকে। কিন্তু পুজোর কয়েকটা দিন ব্যস্ততা বাড়ে আরও বেশি। তাঁতিদের পুজোর মরসুম শুরু হয় বৈশাখ মাস থেকে। ওই সময় থেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁতের শাড়ি ট্রাক ভর্তি করে পাঠাতে শুরু করেন কলকাতা, আসানসোল, হাওড়া, দুর্গাপুরের বড় বাজারগুলিতে। পাইকারি ব্যবসা চলে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত। পুজো শুরু না হওয়া পর্যন্ত চলে খুচরো বাজারে বিক্রি। মূলত মহকুমার গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা ক্রেতারাই খুচরো বাজার থেকে শাড়ি কেনেন। তাঁত ব্যবসায়ীদের দাবি, খুচরো বাজারে বিক্রি অনেকটাই নির্ভর করে কৃষিজাত পণ্যের দামের উপর।
পুজোয় প্রতি বছরই শাড়িতে থাকে নানা চমক। এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়। অতীতে কোনও বছর ছ’পাড়, কোনও বছর মিসড্কল, আবার কোনও বার আমকল্কার মতো রকমারি নামের শাড়ি বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ বার নির্দিষ্ট কোনও নাম না থাকলেও, নানা রঙের বড় বুটির কাজ করা শাড়ি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। মূলত দু’ধরনের সুতো দিয়ে বোনা হয়েছে এই শাড়ি। একটি তাঁত, অন্যটি সিল্ক। প্রতি কাপড়েই ব্যবহার করা হয়েছে ১০০ কাউন্টের সুতো। ওজন তিনশো থেকে চারশো গ্রামের মধ্যে। এই শাড়ি কী ভাবে অন্য শাড়ির থেকে আলাদা? সব বয়সী মহিলারাই পছন্দ করেন গোটা শাড়িতে নানা কারুকার্য। তাঁতিরা জানিয়েছেন, এই কারণেই এ বারের পুজো স্পেশ্যাল শাড়ি বড় বুটি ও নানা কারুকার্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। শাড়িতে রাখা হয়েছে নানা রঙের বুটি। নকশাতেও রয়েছে নতুনত্ব। বেশির ভাগ শাড়ি তৈরি হয়েছে পাতা, ফুলের নকশায়। শাড়িকে আকর্ষণীয় করে তুলতে আঁচল এবং পাড়ে ব্যবহার করা হয়েছে জরির কাজ।
শাড়ির বিশেষত্ব
• সিল্কের সুতো ও তাঁতের মিশেলে তৈরি শাড়ি।
• আঁচল ও পাড়ে জরির কাজ।
• ওজন তিনশো থেকে চারশো গ্রাম।
• একটার দাম মোটামুটি সাতশো থেকে বারোশো।
সমুদ্রগড় তাঁত টাঙ্গাইল বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য কার্তিক ঘোষ জানান, পাইকারি বাজারে সিল্কের এই ধরনের শাড়ি বিক্রি করা হয়েছে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায়। তাঁতের শাড়ি বিক্রি করা হয়েছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকায়। তাঁর দাবি, এ বার বড় বুটির শাড়ি মানুষ বেশি কিনছেন। স্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর চাহিদা রয়েছে সিল্ক জামদানি শাড়িরও। এই শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
এক সময় হাতে বোনা জামদানি সমুদ্রগড়ে বিখ্যাত ছিল। বর্তমানে শিল্পী কমে গিয়েছে। কিন্তু তবুও রয়ে গিয়েছে এর জনপ্রিয়তা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নদিয়ার বেথুয়ার কিছু শিল্পী এই ধরনের শাড়ি তৈরি করেন। তাঁদের থেকে শাড়ি কিনে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হয়। তবে খুশির মরসুমে ব্যবসায়ীদের মনে রয়েছে আশঙ্কাও। তাঁত ব্যবসায়ী সুরেশ বসাকের দাবি, “সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কালনা শহর এবং কাটোয়া এলাকায় পাওয়া যায় উন্নত মানের ঢাকাই জামদানি। এলাকায় এই শাড়ি তৈরি হয় সিল্কের সুতো দিয়ে। আক্ষেপের বিষয় এক শ্রেণির অসাধু লোকজন পলিস্টার সুতো দিয়ে নকল করে তৈরি করছে এই শাড়ি। যাতে ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দুর্নাম হচ্ছে এলাকারও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.