|
|
|
|
|
|
|
দুর্গা: কলকাতার তিন প্রতিষ্ঠানে তিনটি প্রদর্শনী |
পটে প্রতিমায় |
কৃষির বিকাশের সঙ্গেই পৃথ্বীমাতা একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন গর্ভধারিণী মায়ের সঙ্গে। প্রাচীন পৃথিবীর নানা মাতৃকামূর্তির মতো নিদর্শন হরপ্পাতেও পাওয়া গিয়েছে। গুপ্তযুগে মাতৃশক্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এক বিশিষ্ট সম্প্রদায়। প্রাণশক্তির আধার এই মহাদেব-ভার্যাই মহাদেবী বা দুর্গা। আবার লোকায়ত সংস্কৃতির অসংখ্য স্ত্রী-দেবতা এই মহা মাতৃ-দেবতায় মিশে তাঁর নাম ও রূপ বৈচিত্রকে বাড়িয়েছেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে ইতিহাসের নানা উপাদানে। ভারতীয় সংগ্রহশালার এমন সব সংগ্রহ নিয়েই আয়োজিত হয়েছে একটি প্রদর্শনী ‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’। গত সোমবার আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে এর উদ্বোধন করেন স্বামী সুনিশ্চিতানন্দজি। মৌর্য, শুঙ্গ, মথুরা, গুপ্ত বা পাল-সেন পর্বের বহু মূর্তি (সঙ্গে মাঝে তারই একটি) ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে মুখোশ, তরোয়াল-ঢাল বা খাঁড়ার মতো অস্ত্রশস্ত্র, কালীঘাট পট বা পাহাড়ি চিত্রকলা, সঙ্গে পুজোর বাসনপত্র এবং মুদ্রা। সংগ্রহশালার শিক্ষা বিভাগ আয়োজিত এই প্রদর্শনী উপলক্ষে মাতৃশক্তির নানা দিক নিয়ে বললেন শ্যামলকান্তি চক্রবর্তী, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়, তারণকুমার বিশ্বাস এবং স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ। আগামী বৃহস্পতিবার থাকছে একটি আন্তঃবিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা। |
|
প্রদর্শনী চলবে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত (১১-৫টা)। দুর্গাপুজোর সূচনায় পুজো হত হাতে আঁকা পটে, যে ধারাটি আজ ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় সংগৃহীত হয়েছে এমনই কিছু দুর্লভ পটচিত্র। এই সংগ্রহ থেকে বেছে নেওয়া বাংলার বিভিন্ন জেলার ত্রিশ জন পটুয়ার আঁকা পট নিয়ে মহালয়ার বিকেলে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী, ‘পটে দুর্গা: শক্তিরূপেণ’ (ডান দিকে মনিরুল চিত্রকরের আঁকা পট)। সঙ্গে থাকছে দশ জন আধুনিক শিল্পীর চিত্রায়িত দুর্গা। এতে প্রাচীন ধারার সঙ্গে নতুনের মেলবন্ধনের একটি সূত্র খুঁজে পাবেন দর্শকরা। প্রদর্শনী চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত (১২-৬টা, সোমবার ও ছুটির দিন বাদে)। শেষ দু’দিন থাকছে পটমেলা ও কর্মশিবির। ভারত শিল্পের বহু প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ রয়েছে গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সংগ্রহশালায়। দেবীর পুজো পদ্ধতির বিবরণ সহ প্রাচীন পুথি, তৈলচিত্র, লিথোচিত্র (সঙ্গে বাঁ দিকে তারই একটি: দশমহাবিদ্যার অন্যতম ‘ষোড়শী’), সরা পাটাচিত্র— ইত্যাদি নিয়েই এখানে চলছে প্রদর্শনী ‘জগজ্জননী মা’। রয়েছে পুজো উপকরণও। বড় আকর্ষণ ২০০৫-এ কীর্ণাহারের অমিয় মালাকারের তৈরি প্রমাণ আকারের শোলার দুর্গা। প্রদর্শনী চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত, ১১-৬টা।
|
পুজোর কলকাতা |
‘একান্নটা বছর কাটিয়ে দিলাম পুজোর কলকাতায়। তার মানে একান্নটা শরৎ পার হয়ে এসেছি। আমি খুব প্রবীণ নই। তবু এতগুলো বছর তো কম নয়। বৃদ্ধ হয়ে যাইনি। তবে ছেলেবেলাকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছি।’ ১৯৯৬-এর সপ্তমীতে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য। বিকাশ জন্মেছিলেন উত্তর কলকাতায়। স্বাধীনতার আগে-পরে কেমন করে দুর্গাপুজো বিবর্তিত হয়েছে, তা ধরা পড়েছিল তাঁর সেই লেখায়। নস্টালজিয়া, স্মৃতিচারণ, এবং শিল্পীর দেখা বর্ণনায় সেই সুখপাঠ্য পুজোর কলকাতা সুতানুটি বইমেলা কমিটির উদ্যোগে বই আকারে প্রকাশিত হবে ৫ অক্টোবর, শোভাবাজার নাটমন্দিরে। সঙ্গে থাকছে বিকাশের আঁকা দুর্গাপুজোর দুটি ছবিও (সঙ্গে তারই একটি)। প্রকাশ করবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে থাকবে বিকাশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণা ও আগমনী গান।
|
সাইকেলে আগমন |
|
এ বার পুজোয় দেবীর সাইকেলে আগমন! স্বয়ং শিব সাইকেল চালিয়ে মণ্ডপে পৌঁছে দিচ্ছেন স্ত্রী-পুত্রকন্যাদের! মণ্ডপে একটানা ঠায় দাঁড়িয়ে না থেকে মা-ও সবান্ধবে বেরিয়ে পড়েছেন ফুচকা খেতে! গণেশ এক ফাঁকে কলা-বউকে স্কুটারে চড়িয়ে মায়ের বাপের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাল! ও দিকে সিংহের পিঠ আর ল্যাজে চড়ে বাকি বাহনরাও বেড়াতে বেরোল! সে-ও যে কম যায় না, তা বোঝাতে ইঁদুরও মহিষাসুরের নাকে ল্যাজ বেঁধে খানিক ঘোরাল! এ সব তো হতেই পারে! তুলি-কলম নিয়ে সাদা-কালো টি-শার্ট-এ এত সব কাণ্ডকারখানা ফুটিয়ে তুলেছেন কার্টুনিস্ট সেন্টু (অজিতেশ কর)। সঙ্গে তারই একটি ছবি।
|
নেপথ্যকাহিনি |
বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পুজোর সন্ধিলগ্নে, ১৯৩২-এ শুক্লা অষ্টমীর প্রভাতে বাণীকুমারের রচনায় প্রথম প্রচারিত হয় কাব্যগীতি অনুষ্ঠান ‘বসন্তেশ্বরী’। পরে ‘বেতার জগৎ’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর পরামর্শে বেতারকেন্দ্রের তৎকালীন নির্দেশক নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার চণ্ডীর কাহিনি ও শ্লোক সংকলিত করে একটি অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করেন। অশোককুমার শাস্ত্রীর সাহায্যে বাণীকুমার নতুন আঙ্গিকে গান লেখেন। ভাষ্যপাঠে ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামে এটি প্রথম প্রচারিত হয় ১৯৩৬-এর ২১ অক্টোবর, মহাষষ্ঠীর ভোরে। শ্রোতাদের অনুরোধে দু-বছর পর এটি শোনানো হতে থাকে মহালয়ার ভোরে। বাকিটা ইতিহাস। এ বার মহালয়ায় উত্তরপাড়ার বেঙ্গল স্টুডিয়োয় আয়োজিত হয়েছে এই ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী। অরিন্দম সাহা সর্দারের পরিকল্পনায় থাকছে দুষ্প্রাপ্র্য ছবি-নথি, রেকর্ড-সিডি ও বাণীকুমার রচিত মহিষাসুরমর্দিনী গ্রন্থটি। চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। অন্য দিকে মহালয়ার দিন সন্ধেয় যাদবপুরের ত্রিগুণা সেন মঞ্চে ‘আন্তরিক’ বাচিক শিল্প সংস্থার উদ্যোগে ও মধুমিতা বসুর পরিচালনায় রয়েছে কবিতা কোলাজ ‘উমা আসছেন’। থাকবেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, ও অপরাজিতা আঢ্য।
|
কালী দ্য মাদার |
একশো কুড়ি বছর আগে শিকাগো ধর্মমহাসম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের সেই বিখ্যাত বক্তৃতা, কিংবা ১৮৯৮-এ তাঁর লেখা ‘কালী দ্য মাদার’ কবিতাটি (যার বাংলা অনুবাদ করেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘মৃত্যুরূপা মাতা’)— এ বার শোনা যাবে এক সঙ্গে মূল ও অনুবাদে। ‘কালী দ্য মাদার’ (ভাবনা রেকর্ডস) সম্প্রতি প্রকাশ করলেন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ। স্বামীজি রচিত আরও ১১টি ইংরেজি কবিতা ও তার বাংলা রূপান্তরও আছে এতে। ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত হবে এরই দ্বিতীয় পর্ব: শিকাগো সম্মেলনে স্বামীজির শেষ দিনের ভাষণ ও আরও কয়েকটি ইংরেজি কবিতা ও তার বাংলা অনুবাদ। দু’টি সিডিতেই ইংরেজি ভাষণ ও কবিতাগুলি শোনা যাবে কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু-র কণ্ঠে, আর বাংলা অনুবাদ পাঠ করেছেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ।
|
পরম্পরা |
শারদোৎসবের সূচনায় বইপাড়ার সপ্তর্ষি-র উদ্যোগে মহালয়ার দিন শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় অনুষ্ঠান: ‘পরম্পরা’। স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির নাটমন্দিরে। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্যা ও প্রবাসী উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী মীনাক্ষী বিশ্বাসের প্রাচীন ভারতীয় মার্গ সংগীত নিয়ে গবেষণা-গ্রন্থ পরম্পরা: বাংলায় উচ্চাঙ্গ সংগীতের ক্রমবিবর্তন প্রকাশ করবেন মণিলাল নাগ, বিশেষ অতিথি অরুণ ভাদুড়ি। প্রথম পর্বের রেশ ধরেই পরের পর্বে একক সংগীত নিবেদন করবেন শুচিশ্রী রায়, কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের শিষ্যা ও উত্তরসূরি। মার্গ সংগীত ধরেই ধ্রুপদী থেকে আগমনী, সব রকমের গানই গাইবেন সে সন্ধ্যায় শুচিশ্রী। অন্য দিকে ৫ অক্টোবর বিকেল ৪-৬টা ভ্রাম্যমাণ ট্রামে কবিতা পাঠের আসর: আগমনী। থাকছেন শাঁওলী মিত্র, জয় গোস্বামী, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। উদ্যোগে সি টি সি ও ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ।
|
ভাল লাগা গান |
পেশায় উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক, নেশা গান। তাই দিনের শেষে ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরে যান প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতে। গুরু সুতনু মিত্র আর তাঁর গানের অনুপ্রেরণা শ্রাবণী সেন। নিজের একান্ত ভাললাগা ১০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে সম্প্রতি বেরোল শিল্পীর অ্যালবাম ‘তব গীতসুর’ (পিকাসো)। অন্য দিকে ৪ অক্টোবর রোটারি সদনে সন্ধে ছ’টায় কবীর সুমন প্রকাশ করবেন পৃথা চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীতের সিডি ‘ভরা সরোবরের গান’ (কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড)। পেশায় শিক্ষক পৃথা শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ধারার শিল্পী। সিডি’র গানগুলি গীতাঞ্জলি-গীতিমাল্য-গীতালি থেকে সংকলিত। অনুষ্ঠানে শিল্পীর একক পরিবেশনাও শোনা যাবে। ওই অনুষ্ঠানেই প্রকাশিত হবে রাজদীপ বসুর একক আবৃত্তির অ্যালবাম।
|
শুভাপ্রসন্ন-র সঙ্গে |
|
ভেনিস ফেস্টিভ্যালে ‘পার’ দেখে খুশি হয়েছিলেন গ্যুন্টার গ্রাস। ওই ছবির সুবাদে নিজের সম্মান ও নাসিরুদ্দিন শাহের পুরস্কার প্রাপ্তির পাশাপাশি কী ভাবে সখ্য গড়ে উঠেছিল গ্যুন্টারের সঙ্গে, জানাচ্ছিলেন গৌতম ঘোষ। সম্প্রতি তিনি একটি ছবি করেছেন ‘শুভা অ্যান্ড মি, আ জার্নি উইথ শুভাপ্রসন্ন’ (প্রযোজনা: ইমেজ ক্রাফ্ট)। এ-ছবির অনেকাংশই জার্মানিতে তোলা, শুভাপ্রসন্ন তাতে শিল্পকে কেন্দ্র করে সমাজ-ইতিহাস-রাজনীতি-সাহিত্য নিয়ে কথোপকথনে মেতেছেন গ্যুন্টারের সঙ্গে (সঙ্গে তারই ছবি)। ‘ওঁর সঙ্গে শুভা’র অনেকদিনের সম্পর্ক, কলকাতায় এলেও সময় কাটান শুভা’র সঙ্গে।’ গৌতম নিজেও ওঁদের দু’জনের সঙ্গে এ-ছবির একটি চরিত্র। ‘৮৭ মিনিটের এ-ছবি মূলত শিল্পের রূপ নিয়ে, কী ভাবে তা বদলে যাচ্ছে সময়ের অভিঘাতে। অতএব আমার সঙ্গে শুভা’র দীর্ঘকালের বন্ধুত্বের ভিতর দিয়ে ছবিতে উঠে এসেছে ষাট-সত্তরের উত্তাল বামপন্থা, ভিয়েতনামের লড়াই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ফ্রান্সের ছাত্র আন্দোলন, ক্ষুধা, দারিদ্র, বেকারত্ব... আরও কত কী!’ গৌতমের ছবিটি দেখানো হবে ১ অক্টোবর সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, ম্যাক্সমুলার ভবনে, গ্যেটে ইনস্টিটিউট ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর উদ্যোগে।
|
মা ফলেষু |
না, ‘মা ফলেষু’ বললে শুনব না। বর্ণে গন্ধে রূপে রসে আঠায় আঁশে এমনকী পাপে জড়ানো আমাদের চেতনার প্রতিটা ডাইমেনশনের আঙুল সেঁধিয়েছে ফল-বিশ্বে। ষান্মাসিক ঋদ্ধি পত্রিকার (সম্পা: তন্ময় ভট্টাচার্য) সাম্প্রতিক ‘ফল-ফলাদি’ সংখ্যায় সেই ফলভুবনের ভূগোল, ইতিহাস আর লোকমনের নানা স্তরে তার প্রতিফলন এবং ফল নিয়েসাহিত্যকলাপ। ত্রিফলা প্রসঙ্গে যেমন এল আমাদের এক-ঢিলে ব্যাধি বধ করতে চাওয়ার অলীক ইচ্ছার কথা, স্থবির দাশগুপ্তর কলমে। অপর দিকে আদি ‘মা ফলেষু’ যুক্তিজাল যে আসলে এক তর্কচাতুরি তার দিকে আঙুল তুলেছেন অরিন্দম চক্রবর্তী (দর্শনের অধ্যাপক নন)। আছে ফল নিয়ে শশিশেখর বসুর সরস স্মৃতিকথাও। ফলেরও আগে গাছ। দীনবন্ধু-বিভূতি সাহিত্য সংসদ-এর আয়ত পত্রিকা তাঁদের ‘গাছপালা’ সংখ্যায় (সম্পা: শ্যামপদ মণ্ডল) সেই সবুজ অভিযাত্রীর সঙ্গে লোকসংস্কৃতির সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলেছেন। পালা-পার্বণে, প্রবাদ-প্রবচনে, কালিদাস থেকে জীবনানন্দের পংক্তিতে কি বিস্ময়কর উদ্ভিদবৈচিত্র! হরপ্পা সভ্যতায় উদ্ভিদ নিয়ে লিখেছেন সোমনাথ রায়, পুনর্মুদ্রিত কালীচরণ ঘোষের বাবলা গাছ নিয়ে লেখাটি।
|
মাঝি বাইয়া যাও রে |
হাতছানি দিচ্ছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী, দুর্গাদাস, কে এল সায়গল-রা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলেটি ট্রেনে চেপে বসল। গন্তব্য কলকাতা। রবীন্দ্র সরোবরে দেখা একজনের সঙ্গে। টালিগঞ্জে স্টুডিয়োয় বরফ সাপ্লাই করে। ফিল্মের কথা শুনেই ছেলেটি লাফিয়ে উঠল। একবার দেখা যায় ‘স্বপ্নের রাজকুমার’ বড়ুয়াসাহেবকে? দেখা অবশ্য হয়নি সে দিন। গ্রামে ফিরে গিয়েছিল ছেলেটি, বেশি করে মন দিয়েছিল লোকগানের চর্চায়। এমনই সব গল্প নব্বই-ঊর্ধ্ব শিল্পী অমর পালের জীবনে। বায়োস্কোপের টানে কৈশোরের কলকাতা থেকে নেয়ামত আলি, শচীন দেববর্মণ, লালমোহনের যাত্রাদলে ঢপকীর্তন, প্রথম ফাংশনে অপমানিত হওয়া, লালন ফকির, হীরক রাজার দেশে ও সত্যজিৎ রায়, সিটি অব জয়ের বাতিল শ্যুটিং, শৈলেন রায়, রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ— স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির ভাটিয়ালি জীবন এ বার এক জীবনীতে। আশিসতরু মুখোপাধ্যায়ের লেখা মাঝি বাইয়া যাও রে: অমর পালের জীবন ও সময় (পারুল প্রকাশনী) সম্প্রতি প্রকাশিত হল এক অনুষ্ঠানে। জীবনীর সঙ্গে আছে কিছু দুর্লভ সাদাকালো ছবি। আছে শিল্পীর গাওয়া প্রভাতী, শ্যামাসঙ্গীত, লালনগীতি, গোষ্ঠের গান, সারি, ভাটিয়ালি-র কথা। সঙ্গে ডিভিডিতে তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র। গবেষণা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় গৌরদাস সাহা। বাংলা গানের এক অবহেলিত ইতিহাসও এ ভাবেই ধরা থাকল। |
|
|
|
|
অতিথি |
উল্টো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে হেঁটে চলেছেন পথচারী। জনৈকের প্রশ্ন, ‘মিঞা, আপনে আইতাসেন না যাইতাসেন?’ এমন সব ঢাকাই রসিকতা নিয়ে লিখে ফেললেন ঢাকাই রঙ্গরসিকতা বইটি। বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ শামসুজ্জামান খানের জন্ম ১৯৩৭-এ, মানিকগঞ্জ চারিগ্রামে। স্পষ্ট মনে পড়ে, মহরমের সময় মা সুর করে পড়ে যেতেন মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদসিন্ধু। ছেলেবেলার যাত্রা, লোকগান, রথ, মিরপুরের মাজার— প্রবহমান লোকজীবনের প্রতি আগ্রহ গড়ে উঠেছিল তখনই। ঢাকার জগন্নাথ কলেজে পড়াশোনা, সেখানে অধ্যাপনাও, পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার বাংলা একাডেমিতে ১৯৯৬ পর্যন্ত পরিচালক, মাঝে শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব সামলে আবার ২০০৯ থেকে বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক পদে। ওঁর রচিত-সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা সত্তর। রচিত বইয়ের মধ্যে আধুনিক ফোকলোরচর্চা, গণসঙ্গীত উল্লেখযোগ্য, আর সম্পাদনায় প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের লোক ঐতিহ্য (দু’খণ্ড), চরিতাভিধান ইত্যাদি। এখন ব্যস্ত বাংলা একাডেমির নানা প্রকল্প নিয়ে— বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সংস্কৃতি নিয়ে গ্রন্থমালা তৈরি হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই গোটা বারো খণ্ড বেরিয়ে যাবে। চার খণ্ডে প্রকাশিত হবে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস। বাংলা শব্দের রূপান্তর-অভিধানের কাজ শেষের মুখে। বাংলাদেশের বই যাতে কলকাতায় সহজলভ্য হয় তার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ বইমেলা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে লোককবি বিজয় সরকার স্মরণ অনুষ্ঠান, এ সব সূত্রেই কলকাতায় কয়েক দিন কাটিয়ে গেলেন শামসুজ্জামান খান। |
|
|
|
|
|
|