ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে ইটানগর পৌঁছলো রোয়িং চিড়িয়াখানার দু’টি ব্যাঘ্রশাবক। সেখানে তাদের জঙ্গলের জীবন এবং শিকারে রপ্ত করার প্রশিক্ষণ চলবে। তারপর ফেরানো হবে আনিনিতে। বাঘ দুটিকে নিয়ে প্রায় ছ’শো কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলেন চিকিৎসক, বনকর্মীরা।
গত বছর ডিসেম্বরে অরুণাচল প্রদেশের দিবাং উপত্যকার আনিনির পাহাড় থেকে দু’টি রয়্যাল বেঙ্গল শাবককে উদ্ধার করে ডব্লিউটিআই। রোয়িং চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিল সেগুলিকে। নাম দেওয়া হয় ‘ইপরা’ এবং ‘চিপি’।
ওই ব্যাঘ্রশাবকদের দেখভাল করেন চিকিৎসক অভিজিৎ ভাওয়াল। তিনি জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা রোয়িং চিড়িয়াখানায় বাঘ দু’টিকে বিরক্ত করছে। এ ভাবে চললে তাদের জঙ্গলে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। তাঁরা চাইছেন, মানুষের হাতে পালিত বাঘকে জঙ্গলে ফেরত পাঠাতে। রাশিয়ায় আমুর বাঘকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছাড়া হলেও রয়্যাল বেঙ্গলের ক্ষেত্রে তা কখনও হয়নি।
আপাতত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বাঘের শাবক দু’টিকে ইটানগর চিড়িয়াখানার জনহীন একটি অংশে রাখা হবে। সেখানে চলবে শিকার ধরার প্রশিক্ষণ। বন দফতর সূত্রের খবর, এর পর আনিনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি খাঁচায় রেখে অরণ্য জীবনে অভ্যস্ত করা হবে। জঙ্গলের রাজত্বে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার মতো দক্ষ হওয়ার পরই তাদের একেবারে গভীর অরণ্যে ছাড়া হবে।
চিকিৎসক ভাওয়াল জানান, তাঁদের কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল ৩৬ ঘণ্টার রাস্তা পার করে বাঘেদের ইটানগর নিয়ে আসা। ২৭ তারিখ দিবাং উপত্যকা থেকে যাত্রা শুরু হয়। ব্রহ্মপুত্র পার হতে সময় লেগেছে দু’ঘণ্টা। নদীপথে সদিয়া থেকে ঢোলা যাওয়ার সময় নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ যাতে ব্যাঘ্রশাবকগুলির কানে না যায়, তারজন্য সে গুলিকে ঘুমের ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। পশু চিকিৎসক অঞ্জন তালুকদার জানান, একটানা সে গুলিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। দফায় দফায় তাদের অজ্ঞান করা হচ্ছিল। তিনটি গাড়ি ও দুটি নৌকার ‘কনভয়ে’ প্রায় ৬৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার সময় চিকিৎসক ও বনকর্মীরা বাঘদের নিয়ে পাঁচটি স্থানে থামের। রাত কাটানো হয় কাজিরাঙাতেও।
গত সন্ধ্যায় ইপরা ও চিপি নতুন ‘ঘরে’ পৌঁছায়। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, এতদিন ‘ভাইবোন’ একসঙ্গে থাকত। এখন তারা থাকবে পৃথক খাঁচায়। আর আলাদা আলাদা ভাবেই জঙ্গলে শিকারের নিয়ম শিখবে তারা। |