বিনোদন প্রেক্ষাগৃহ নেই, স্কুল বারান্দাই
ভরসা সৈয়দাবাদের
একটা প্রেক্ষাগৃহের দাবিতে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে বহরমপুর শহর।
শহরের পুরনো এলাকা খাগড়া, কাশিমবাজার, সৈয়দাবাদ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার সংস্কৃতি চর্চা নতুন নয়। কবেকার পুরনো এই নবাবের শহরে উত্তর প্রান্তের ওই জনপদগুলিতেই গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠী। পাড়ায় গান-নাটকের-আবৃত্তির পাঠশালা।
অথচ আড়ে-বহরে ক্রমেই বেড়ে ওঠা বহরমপুরের নয়া জনবসত দক্ষিণ প্রান্তে। নতুন ঘরবাড়ি, অফিস কাছারি, প্রেক্ষাগৃহ সবই গোরাবাজার, লালদিঘি কিংবা ব্যারাক স্কোয়্যারকে ঘিরে যে নতুন বসত, সেখানে। সংস্কৃতমোদী মানুষজনের গুমরে ধাক্কা লেগেছে এখানেই। কেন কাশিমবাজারে নয়, কেনই বা বাদ যাবে কুঞ্জঘাটা? তাই শীত রাতের নাট্যোৎসব দেখেও দক্ষিণের রবীন্দ্রসদন বা ঋত্বিকসদন থেকে প্রায় পঞ্চাশ টাকা রিকশা ভাড়া গুনে নাটক-আবৃত্তির পীঠস্থানে ফিরতে হয় উত্তরের বাসিন্দাদের। ক্ষোভটা সেখানেই।
এ বার তাই উত্তরের মানুষের মন রাখতে শহরের ওই প্রান্তেও প্রেক্ষাগৃহ করার কথা ভাবছে বহরমপুর পুরসভা।
বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য উত্তরের মানুষের সেই দাবি উড়িয়ে তো দিচ্ছেনই না, বরং বলছেন, “খাগড়া, বা সৈয়দাবাদ এলাকায় একটি প্রেক্ষাগৃহ গড়ে তোলা বাস্তববিকই দরকার। শহরের বহু বিশিষ্টই এই দাবি তুলেছেন। দাবিটা সঙ্গত। সৈয়দাবাদ এলাকার পুরনো ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরিটি পাওয়ার চেষ্টাও চলছে। সেটি পাওয়া গেলে শহরের উত্তর প্রান্তেও একটা সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র গড়া হবে।”মুর্শিদাবাদ জেলা আবৃত্তি সংসদের অধ্যক্ষ চন্দন দাশগুপ্ত বলেন, “খাগড়া এলাকার কথাই ধরুন না। পুরনো এলাকা। বহরমপুরের ঐতিহ্যটাই ধরা রয়েছে এখানে। সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের মূল কেন্দ্রই বলতে পারেন। কিন্তু সেখানে কোনও প্রেক্ষাগৃহ নেই। বাধ্য হয়ে অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের স্কুলের মাঠই বেছে নিতে হয়।” তা করতে গিয়ে খুব খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হল ‘প্রিজন থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’-এর কলাকুশলী থেকে দর্শক সকলকেই। গত ২২ শ্রাবণ থেকে তিন দিন ধরে খাগড়া জিটিআই স্কুলের মঞ্চে মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিনটি নাটক তাসের দেশ, তোতা কাহিনি ও রক্তকরবী। বহরমপুর রেপার্টরির পরিচালক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “দর্শক সংখ্যা ছিল প্রচুর। কিন্তু বাজে মঞ্চ ও অনুপযুক্ত শব্দ ব্যবস্থার কারণে প্রযোজনার রসই মাটি হল।”
তার চেয়েও খারাপ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন যুগাগ্নি নাট্যগোষ্ঠীর অনুপম ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “দু’ দশক আগেও সৈয়দাবাদ এলাকায় ৫-৭ দিন ধরে চলত রাজ্যস্তরের একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা। অস্থায়ী মঞ্চে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ওই নাট্য প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” বহরমপুর ইয়ুথ কয়ারের সম্পাদক মলয় গুপ্ত বলেন, “অবিভক্ত বাংলায় নাট্যভিনয় শেখার প্রথম স্কুল ‘দ্য কাশিমবাজার স্কুল অব ড্রামা’ ১৮৯৯ সালে কাশিমবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার ছ’বছর পর ১৯০৫ সালে কাশিমবাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার প্রথম অবৈতনিক সঙ্গীত বিদ্যালয়। মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর প্রতিষ্ঠিত ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘বহরমপুর সঙ্গীত সমাজ বিদ্যালয়’। সেই এলাকাতেই প্রেক্ষাগৃহ নেই।”
মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য কাশিমবাজার স্কুল অব ড্রামা’র অধ্যক্ষ ছিলেন নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের বাগবাজারের দলের অভিনেতা গোবর্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময় কাশিমবাজার রাজবাড়ির নাটমঞ্চে অনেকবার সদলবলে অভিনয় করেছেন স্বয়ং গিরিশচন্দ্র। মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর প্রতিষ্ঠিত সংগীত শিক্ষাকেন্দ্রের নাম ছিল ‘বহরমপুর সঙ্গীত সমাজ বিদ্যালয়’। অধ্যক্ষ ছিলেন বিদগ্ধ সঙ্গীতাচার্য রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী। প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর সেই ‘সঙ্গীত সমাজ বিদ্যালয়’ স্থানান্তরিত হয় বহরমপুর শহরেরই খাগড়া চৌরাস্তা মোড়ের কাছে। সঙ্গীত বিদ্যালয়ের সঙ্গেই ছিল কীর্তন শিক্ষাকেন্দ্র।
সত্যিই তো সেখানে একটা প্রেক্ষাগৃহের দাবি কি খুব বেশি চাওয়া?
প্রেক্ষাগৃহ সঙ্কট
• শহরের উত্তরে কাশিমবাজার রাজবাড়ির নাটমঞ্চে অভিনয় করেছেন স্বয়ং গিরিশচন্দ্র।
• রবীন্দ্রসদন বা ঋত্বিকসদন থেকে পঞ্চাশ টাকা রিকশা ভাড়া করে ফিরতে হয় উত্তরের বাসিন্দাদের।
• খাগড়া, সৈয়দাবাদ এলাকাতেও প্রেক্ষাগৃহের দাবি উঠেছে।
• সৈয়দাবাদের পুরনো জেলা লাইব্রেরি পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
• মঞ্চের অভাবে অনেক প্রযোজনা ব্যর্থ হয়েছে, দাবি নির্দেশকদের।


বাবুল সুপ্রিয়ের গানের অ্যালবাম প্রকাশে পায়েল সরকার,
হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.