মার্কিন দৈনিকের পাতায় লেখক এ বার স্বয়ং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সিরিয়া সমস্যা নিয়ে যৌথ জনমত গড়া এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার উপরে চাপ জারি রাখতে এ ভাবেই আসরে নামলেন তিনি। এ দিনই জেনিভায় মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি এবং রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভ্রভ সিরিয়া নিয়ে মস্কোর চার দফা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। আলোচনা গড়াতে পারে শনিবার পর্যন্ত।
‘এ প্লি ফর কশন ফ্রম রাশিয়া’ এই শিরোনামেই একটি উত্তর-সম্পাদকীয় লিখেছেন পুতিন। যেখানে তিনি মনে করিয়েছেন, ঠান্ডা লড়াইয়ের দিনগুলোর কথা। যখন বিরোধিতা সত্ত্বেও আমেরিকা এবং রাশিয়া একযোগেই নাৎসি শক্তিকে পরাজিত করেছিল। সেই সময়েই রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্ভব। তার সঙ্গেই পুতিনের সতর্কতা, “রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিণতি যেন লিগ অফ নেশনস-এর মতো না হয়। নিরাপত্তা পরিষদের স্বীকৃতির তোয়াক্কা না করে শক্তিধর দেশগুলো যদি সামরিক অভিযানের কথা ভাবতে থাকে, তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূমিকায় প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যায়।”
প্রত্যাশিত ভাবেই সিরিয়ায় ওবামার সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের সমালোচনা করেছেন পুতিন। বিদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় নাক গলানো এবং সেনা পাঠানো আমেরিকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে দাবি করে মার্কিন জনতার কাছে পুতিনের প্রশ্ন, “এটা কি আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যেই পড়ে? আমার সন্দেহ আছে। বিশ্বে কেউই আজ আর আমেরিকায় গণতন্ত্রের আদর্শ খুঁজে পায় না। ওদের সঙ্গেই থাকতে হবে, না হলে বাকিরা ওদের বিরোধী।” তাঁর মতে, “সিরিয়ায় একটা হামলা থেকে হিংসা তো ছড়াবেই। সঙ্গে ছড়িয়ে পড়বে নতুন ধরনের সন্ত্রাস। ইরানের পরমাণু অস্ত্র সমস্যা, ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন দ্বন্দ্ব মেটাতে যে বহুমুখী প্রচেষ্টা চলছে, সেগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক আইন-শৃঙ্খলার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।” |
লাভ্রভের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হচ্ছেন জন কেরি (ডান দিকে)। ওয়াশিংটনে। ছবি: রয়টার্স। |
পুতিনের আবেদন, “সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ রুখতে পারলে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আবহাওয়ার উন্নতি হবে। আর এটা হবে আমেরিকা-রাশিয়ার যৌথ সাফল্য।”
এই ‘যৌথ সাফল্য’ হাসিল করতে রাশিয়া চার দফা পরিকল্পনা সামনে এনেছে। প্রথমত সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ প্রতিষ্ঠানের (ওপিসিডব্লিউ) সদস্য হতে হবে। দ্বিতীয়ত সিরিয়াকে জানাতে হবে, দেশের কোথায় কোথায় রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। তৃতীয়ত, রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য ওপিসিডব্লিউ-এর সব তদন্তকারী অফিসারদের সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে এবং চূড়ান্ত দফায় কী ভাবে রাসায়নিক অস্ত্র নষ্ট করা যায়, সে ব্যাপারে ওই অফিসারদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ কেরি-লাভ্রভের আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র সমর্পণ করছে শুধু রাশিয়ার জন্যই। আমেরিকার হুমকিতে ভয় পেয়ে নয়।” এই রুশ পরিকল্পনা নিয়ে অবশ্য আশ্বস্ত নয় আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠী। তাদের বক্তব্য, এই পরিকল্পনা সফল হবে না। তা ছাড়া, রাসায়নিক অস্ত্র শুধু আন্তর্জাতিক নজরদারিতে আনাটাই কাজ নয়। এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে যে, সেই ব্যক্তির আন্তর্জাতিক অপরধাদমন আদালতে শাস্তি হওয়া উচিত। |