আত্মসমর্পণ ‘সিপিএমের সম্পদ’ সুকুরের
দু’বছর ফেরার থাকার পরে আত্মসমর্পণ করলেন গড়বেতার সিপিএম নেতা সুকুর আলি। তাঁর আত্মসমর্পণ, নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে।
গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলাতেই সুকুর আলির আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে। শনিবার তমলুক জেলা আদালতে সুকুরের আত্মসমর্পণের পরে আগাম জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও দায়রা বিচারক মধুমতী মিত্র সুকুরকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই দিন নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় অভিযুক্ত, বর্তমানে জামিনে মুক্ত সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাউদেরও হাজিরা আছে।
শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ গাড়িতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকজন সিপিএম নেতা এবং ভাই রাজেশ আলির সঙ্গে তমলুক জেলা আদালতে পৌঁছন সুকুর। পরে জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারকের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন। এ দিন বেশ কিছুটা সময় কোর্ট লক-আপে রাখার পরে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ তাঁকে তমলুক জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে সুকুরের ভাই রাজেশ বলেন, “দাদার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা সাজানো। আইনের উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে।”
২০০১ সালে ছোট আঙারিয়া গণহত্যা মামলায় প্রথম নাম জড়ায় সিপিএমের গড়বেতা জোনাল সম্পাদক তথা দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুকুর আলির। ওই বছর ৪ জানুয়ারি ছোট আঙারিয়া গ্রামে তৃণমূলকর্মী বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে বৈঠক চলাকালীন সিপিএমের লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
শনিবার তমলুক জেলা আদালতে আত্মসমর্পণের পর
সিপিএম নেতা সুকুর আলি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
আগুন লাগানো হয়। গুলি চলে। অন্তত পাঁচ জন নিহত হন এবং তাঁদের দেহ লোপাট করা হয় বলে অভিযোগ। রাজ্য রাজনীতিতে হইচই ফেলা ওই ঘটনার পরে কেশপুর-গড়বেতায় ২০০০ সাল থেকে তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে এলাকা দখল নিয়ে যে লড়াই চলছিল, তাতে পাল্লা ভারী হয়ে যায় সিপিএমের। মামলায় সুকুর আলি-সহ ১৪ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে সিবিআই। সেই তালিকায় নাম ছিল গড়বেতা জোনাল কমিটির সদস্য শিক্ষক নেতা সুকুরের সঙ্গী তপন ঘোষেরও। সে সময় গড়বেতার বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তপন-সুকুর এলাকাতে দাপিয়ে বেড়ালেও ধরা পড়েননি।
২০০৭ সালে সিপিএমের নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’ পর্বে ধরা পড়েন তপন-সুকুর। ওই বছর ১০ নভেম্বর গোকুলনগরে ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র মিছিলে নির্বিচার গুলিবর্ষণে অনেকে জখম হন। অনেকের আবার খোঁজ মেলেনি। অভিযোগ, সিপিএমের লোকেরাই গুলি চালিয়েছিল। তিন আহতকে এগরা হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার দিকে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। তৃণমূলের লোকজন এগরায় চারটি গাড়ি আটকে ওই তিন জনকে উদ্ধার করেন। তখনই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে ধরা পড়েন তপন-সুকুর। সেই সময় তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। তার মধ্যে অন্যতম জখমদের পাচারের চেষ্টা এবং নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলা। প্রথম মামলাটিতে পুলিশ যথাসময়ে চার্জশিট দিতে না পারায় তপন-সুকুর জামিন পান। তবে নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় দু’জনেই ফেরার ছিলেন।
২০০৯ সালের ২৮ মে ছোট আঙারিয়া মামলায় বেকসুর খালাস পান তপন-সুকুর। বক্তার মণ্ডল-সহ ঘটনার বেশিরভাগ সাক্ষীই ‘বিরূপ’ হওয়ায় গড়বেতার দুই সিপিএম নেতা-সহ অভিযুক্ত ৮ জনকেই আদালত অব্যাহতি দেয়। সে সময় সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের মন্তব্য ছিল, “তপন-সুকুর আমাদের দলের সম্পদ।”
২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে পালাবদলের পরে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। ওই বছর ১৫ মে ছোট আঙারিয়া মামলায় অভিযুক্ত দিল মহম্মদ ধরা পড়েন। তারপরই ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া মামলাটি প্রাণ পায়। গা ঢাকা দেন তপন-সুকুর। ফেরার থাকাকালীনই ২০১২ সালে গড়বেতা জোনাল সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন সুকুর আলি। তার পরে দীর্ঘ অজ্ঞাতবাস চলছিল।
এখনও পলাতক সুকুরের ছায়াসঙ্গী তপন ঘোষ।
তপন ঘোষের মতোই নেতাই গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা ডালিম পাণ্ডে, অনুজ পাণ্ডেরাও এখনও পলাতক। সম্প্রতি সিপিএম সূত্রেই জানা গিয়েছিল, বিভিন্ন মামলায় নাম জড়ানো দলীয় নেতাদের অনেকেই আর পালিয়ে বেড়াতে চাইছেন না। শারীরিক, আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে, ধৈর্য হারিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন তাঁরা। তাঁদের পরিবারের লোকেরাও সে মর্মে দরবার করায় চাপ বাড়ছিল দলের উপরে। পঞ্চায়েত ভোটের কারণ দেখিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা আত্মসমর্পণের বিষয়টি কিছু দিনের মতো পিছিয়ে দিলেও ‘চাপ’ ছিলই। দল কি তা হলে চাপের মুখে সেই নির্দেশ দিল?
সরাসরি জবাব এড়িয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “আমাদের পার্টিতে দলের নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনও কিছুই হয় না।”
৭ সেপ্টেম্বর
সুকুরের আত্মসমর্পণ, তপন ফেরারই
সুকুর আলি: গড়বেতা জোনাল সম্পাদক ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য
তপন ঘোষ: শিক্ষক নেতা, গড়বেতা জোনাল সদস্য ও জেলা কমিটির সদস্য

বড় মামলা
ছোট আঙারিয়া গণহত্যা (২০০১)
সিপিএমের নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’ পর্বে জখমদের পাচারের চেষ্টা হয়। নিখোঁজ হন ৬ জন।
দু’টি মামলাতেই অভিযুক্ত তপন-সুকুর (২০০৭)।
২০০৭-এর নভেম্বর: দু’জনেই ধৃত
২০০৯-এর মে: ছোট আঙারিয়া মামলায় খালাস। আগেই নন্দীগ্রামে জখম পাচারের মামলায় জামিন।
২০১১-এর মে: দু’জনে ফেরার
৪ সেপ্টেম্বর: নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় সুকুরের আগাম জামিন নাকচ হাইকোর্টে

পুরনো খবর:
দুর্ঘটনার পরে তাণ্ডব, ধৃত ১৮
লরির ধাক্কায় তিন জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনতার তাণ্ডবের ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শনিবার আদালতে তোলা হলে ১৭ জনকে পাঁচ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। এক জন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। শুক্রবার রাতে খড়্গপুর ১ ব্লকের খেলারের শঙ্করাচক গ্রামের বেনাপুর রেলগেটের কাছে দুর্ঘটনায় বিমল ঘোষ (৪৫), সুন্দর ভুঁইয়া (৪২) ও শ্যামল হাঁসদা (৩৪) নামে তিন জনের মৃত্যু হয়। এগারো জন জখম হন। জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, খড়্গপুর টাউন থানার আইসি অরুণাভ দাস-সহ নয় পুলিশকর্মী আহত হন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.