সাড়ে পাঁচ বছরের এক শিশুকে খুন করে তার চোখ উপড়ে নেওয়ার অপরাধে দৃষ্টিহীন এক যুবকের ফাঁসির আদেশ দিলেন বহরমপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল।
ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে শনিবার অভিযুক্তের বৃ্দ্ধা মায়েরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্ত বাবু মোল্লা ও তার মা মাঞ্জুমা বিবি এত দিন জেল হাজতেই ছিলেন।
২০০৯-এর ৬ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি এলাকার দুর্লভেরপাড়া গ্রামে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল সোহেল বিশ্বাস নামে ওই ছোট্ট শিশুটি। এলাকায় দিন কয়েক ধরে খোঁজাখুঁজিতেও হদিস মেলেনি তার। তিন দিন পর গ্রামেরই একটি ডোবা থেকে তার দেহ মেলে। পুলিশ জানায়, শিশুটির দু’টি চোখই উপরে নেওয়া হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে সোহেলের পড়শি বাবু মোল্লাই মূল অভিযুক্ত।
কৈশোরেই দৃষ্টি হারানো বাবুর ধারনা হয়েছিল, কোনও শিশুর চোখ উপরে নিজের দৃষ্টিহীন চোখের উপরে ছোঁয়ালেই সে ফের দৃষ্টি ফিরে পাবে। পুলিশের জেরায় এ কথা স্বীকারও করেছিল সে। বাবুর চোখের দৃষ্টি ফেরাতে ওই অন্ধ বিশ্বসে বাবুকে সাহায্য করেছিল তার গোটা পরিবারই। পুলিশ তাই মাঞ্জুমা বিবি ছাড়াও বাবুর বাবা গুলমাজন মোল্লা, তার দাদা রেজাউল মোল্লা এবং বৌদি ফিরোজা বিবিকেও গ্রেফতার করেছিল। রেজাউল ও ফিরোজাকে অবশ্য প্রমাণাভাবে আদালত এ দিন বেকসুর খালাস দিয়েছে। এই মামলা চলাকালীন জেলেই মারা গিয়েছে বাবুর বাবা গুলজানও। পুলিশ জানায়, গ্রামের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলুশি জানতে পারে ওই দিন সকালে লজেন্স দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সোহেলকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বাবু। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিল ওই শিশু। সেই সূত্রেই বাবুদের পরিবারের সকলেই গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় তারা সোহেলকে খুনের কথা স্বীকার করে।
সরকার পক্ষের আইনজীবী শুভাঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “নিজের দৃষ্টি ফিরে পেতে শিশুটিকে খুন করার পরে তার চোখ দু’টি উপড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ কাজ গুলজান ও মাঞ্জুমার সাহায্যে বাবুই করেছিল। বছর চল্লিশের বাবু সে কথা স্বীকারও করেছে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে বাবু মোল্লার মা মাঞ্জুমা বিবির সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।” |