কম সুদে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মেরাজুল ইসলাম নামে লালগোলার এক ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান মেরাজুল ওই বেসরকারি ‘ঋণদাতা সংস্থা’কে যে ‘ক্যান্সেল চেক’ দিয়েছিলেন, সেটি জাল করেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাপারে মেরাজুলের সঙ্গে ওই ‘সংস্থা’র যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন রাকেশ তাতের নামে যে যুবক, এক ‘সালিশি সভা’তে তাঁর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। মেরাজুল তাঁর টাকা ফেরত পেলে তিনিও এই এক লাখ টাকা রাকেশকে ফেরত দিয়ে দেবেন বলে ওই সালিশি সভায় ‘চুক্তি’ হয়েছে।
রাকেশের দাবি, “বিনা অপরাধে আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে। অথচ অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এফআইআর হয়নি। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি আমিই।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “এই বিষয়ে ১২ অগস্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” তবে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মেরাজুলের অজ্ঞাতে এক লপ্তে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা উঠিয়ে নেওয়ায় ব্যাঙ্কের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি তোলা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিধি অনুসারে সঠিক লোককেই টাকা দেওয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হতে হয়। ওই নিয়ম এ ক্ষেত্রে ঠিকঠাক মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সূত্রপাত জুলাইয়ের মাঝামাঝি। রাকেশ জানিয়েছেন, তিন যুবক নিজেদের কলকাতার লেকটাউনের একটি বেসরকারি ‘ঋণদান সংস্থা’র কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে তাঁর সঙ্গে তখন আলাপ করেছিলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের থেকে কিছুটা কম সুদে ও খুব কম সময়ের মধ্যে তাঁরা ঋণ দেন বলে দাবি করেন । মেরাজুল বলেন, “ঋণ দেওয়ার জন্য অন্য নথিপত্রের সঙ্গে ক্যান্সেল লেখা একটি চেকও নিয়েছিলেন ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা। ওঁদের দেওয়ার জন্য আমি সেই সব কাগজ রাকেশের হাতেই জমা দিই।” রাকেশ বলেন, “ওই যুবকেরা আমাদের দোকানে এলে সেই সব নথিপত্র আমি তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।” মেরাজুল জানান, ওই ‘ঋণদাতা সংস্থা’ জানায় তাকে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দেবে। তবে তার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েক দিনের জন্য ৪ লক্ষ টাকা জমা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ‘ক্যান্সেল চেক’টি মেরাজুলের হাতে ফেরতও দিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে গত ২৯ জুলাই মেরাজুল তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪ লক্ষ টাকা জমা করে সে কথা ওই যুবকদের ফোনে জানিয়ে দেন। তার মিনিট পনেরো পরেই ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। মোবাইলে সেই মেসেজ পাওয়ার পরেই রাকেশ ও মেরাজুল ব্যাঙ্কে ছোটেন। রাকেশ বলেন, “যে চেক জমা দিয়ে মেরাজুলের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা তোলা হয়েছে বলে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার আমাদের দেখিয়েছেন, সেটি জাল চেক। সম্ভবত ক্যান্সেল চেক থেকে জাল চেক তৈরি করার পর আসল চেকটি মেরাজুলকে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। আর জাল চেকটি ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে প্রতারকরা টাকা তুলে নিয়েছে। তারপর থেকে তাদের মোবাইল সুইচড অফ।”
এরপরই শুরু হয় সালিশি সভার তোড়জোড়। মেরাজুলের কথায়, “ওই সালিশি সভায় ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেলসাদ আলি, কংগ্রেসের সদ্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সাইফুদ্দিন শেখ ওরফে সাফু, লালগোলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির ছেলে মনোজ জৈন ও ফরওয়ার্ড ব্লকের লালগোলা-ভগবানগোলা জোনাল সম্পাদক গোলাম হোসেন বিশ্বাস।” এর মধ্যে দেলসাদ আলি মেরাজুলের কাকা। মেরাজুল বলেন, “সালিশি মেনে গত ৩ অগস্ট রাকেশ আমাকে ১ লক্ষ টাকা দিয়েছে।” টাকা আদায়ের জন্য সালিশির কথা স্বীকার করেন দেলসাদ, সাফু ও মনোজও। সালিশি সভার অন্যতম কর্তা ফব-র গোলাম হোসেন বলেন, “রাকেশ নির্দোষ বলেই মনে হচ্ছে। তবে মেরাজুল তার টাকা ফেরত পেলে রাকেশকে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে ঠিক হয়েছে।” লালগোলার বিডিও প্রসেনজিৎ ঘোষ অবশ্য বলেন, “সালিশি করে টাকা নেওয়া হয়ে থাকলে তা ঠিক কাজ হয়নি।” |