গত কয়েকটি বর্ষায় সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ধান চাষে খরচ বাড়ছিল। লাভ হচ্ছিল না। চিন্তায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের কুলগাছির বাসিন্দা কৃষিজীবী মাধব ব্যাপারি। ওই প্রাক্তন সেনাকর্মী এখন নিজের চার বিঘা জমিতে চাষ করেই সংসার চালান। সেই সময় স্থানীয় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এর পরেই নিজের তিন বিঘা জমিতে ‘সিস্টেম অফ অ্যাশিওরড রাইস প্রোডাকশন’ (সার্প) তথা ‘সুনিশ্চিত ধানচাষ’ (সুধা) পদ্ধতিতে চাষের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই পদ্ধতি মেনে বীজতলা তৈরি করতে খরচ হয়েছে কম। আর রোপণের পর বেঁচে গিয়েছে অনেক বেশি চারা। তাই মাধববাবু ভাল ফলনেরও আশা করছেন।
কৃষি দফতরের নদিয়া জল ও সেচ গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী শস্যবিদ স্নেহাশিস দাসের কথায়, “২০০৯ সাল থেকে ‘সুধা’ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছি আমরা। গত বছর থেকে বিভিন্ন এলাকায় চাষিদের জমিতে এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হচ্ছে। সকলেই লাভ পাচ্ছেন।”
কী কাজে লাগে ‘সুধা’ পদ্ধতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছরই বর্ষার সময় বদলে যাচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে বর্ষা। বীজতলা তৈরির পর জমিতে রোপণের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩০ দিনেরও বেশি। ফলে ধানের ফলন কমছে। এর মোকাবিলা করতে পারে ‘সুধা’। এই পদ্ধতিতে প্রথাগত পদ্ধতির চেয়ে প্রয়োজনে অনেক বেশি সময় পর্যন্ত চারা রাখা যায় বীজতলায়। দীর্ঘমেয়াদী জাতের চারাকে কম দিন মূল জমিতে রেখেও প্রথাগত পদ্ধতির প্রায় সমান ফলন পাওয়া যায়। |
স্নেহাশিসবাবুর দাবি, “এই পদ্ধতিতে চাষ করলে চাষিদের খরচ ও ঝুঁকি দুইই কমে যায়। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম বীজ লাগে। তাই খরচও কম।” হাতেকলমে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে মাধববাবুও তাই বলছেন। তিনি বলেন, “আগে আড়াই বিঘা জমি চাষ করতে এক কাঠা বীজতলায় ১৫- ২০ কিলোগ্রাম বীজ লাগত। এ বার বীজতলা তৈরি করেছি তিন কেজি বীজ ফেলে। যা চারা হয়েছে, তা তিন বিঘা জমিতে লাগিয়েও বাড়তি আছে।”
কৃষি দফতরের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ পূর্ণিমা হালদার বলেন, প্রথাগত পদ্ধতিতে প্রতি বর্গমিটারে ৫০ গ্রাম বীজ ছড়াতে হয়। চাষিরা অবশ্য বেশি চারার আশায় ৯০-১০০ গ্রাম বীজ ছড়ান। সুধা পদ্ধতিতে বীজতলায় ১০ গ্রাম বীজ ছড়ালেই হবে। আর ৬০ দিন পর্যন্ত চারা বীজতলায় রাখা যাবে। প্রথাগত পদ্ধতিতে ৩০-৩৫ দিনের বেশি বীজতলায় রাখা যায় না।”
‘সুধা’ পদ্ধতিতে বাড়তি সুবিধে, বীজতলাটি আকারে প্রথাগত পদ্ধতির চাইতে অনেকটাই ছোট হয়। ফলে, জল এবং সার কম লাগে। তাই খরচ অনেকটাই বেঁচে যায়। পূর্ণিমাদেবীর হিসেব, প্রচলিত পদ্ধতিতে এক কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে যদি ১০০ টাকা খরচ হয়, তা হলে ‘সুধা’ পদ্ধতিতে খরচ বড়জোর ২০ টাকা।
কৃষি দফতরের জল ও সেচ গবেষণাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা সম্পদরঞ্জন পাত্র ‘সুধা’ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নানা জায়গায় চাষিদের প্রশিক্ষণ শিবির করে ‘সুধা’ প্রয়োগে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সম্পদরঞ্জনবাবু নিজেও কয়েকটি প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির থেকে চাষিদের হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। কৃষি-কর্তারা বলেন, “প্রথাগত নিয়মে চাষিরা প্রতি গুছিতে কোথাও ৫-৬টি থেকে ১৮টি পর্যন্ত চারা রোপন করেন। ফলে গাছের বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় না। ‘সুধা’ পদ্ধতিতে একটি গুছিতে একটিই চারা থাকবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়ায় চারার বৃদ্ধি ভাল হবে। আগাছা বাছতে সুবিধা হবে।” সম্পদরঞ্জনবাবুর দাবি, “ফলনও ভাল হবে।”
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এগ্রিকালচার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ ‘সুধা’ পদ্ধতিকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। চলতি বছরে নদিয়া জেলার পাঁচটি ব্লকরানাঘাট ১ ও ২, কৃষ্ণনগর ১, শান্তিপুর ও চাকদহে ‘সুধা’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। পাঁচটি ব্লকের ১৯ জন চাষি এই পদ্ধতিতে চাষ করছেন। কৃষি-কর্তাদের আশা, ধান চাষে ‘সিস্টেম অফ রাইস ইনটেনসিফিকেশন বা শ্রী’ পদ্ধতি যেমন জনপ্রিয় হয়েছে, আগামী দিনে ‘সুধা’ পদ্ধতিও জনপ্রিয় হবে।
|
বাড়ি ফিরলেন অপহৃত দম্পতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ |
তিরিশ ঘণ্টা আটকে রাখার পর ধুলিয়ানের অপহৃত দম্পতিকে মুক্তি দিল অপহরণকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে ফরাক্কার এনটিপিসির কাছে চোখবাঁধা অবস্থায় ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অপহৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়েছিলেন ধুলিয়ানের একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তা। টাকা ফেরতের দাবিতে শুক্রবার ভোর রাতে তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় গ্রাহক ও এজেন্টরা। মালিককে না পেয়ে তাঁর বাবা শিস মহম্মদ ও মা হাসনারা বিবিকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করতে বলে চলে যায় অপহরণকারীরা। শনিবার বাড়ি ফিরে শিস মহম্মদ বলেন, “আমাদের মারধর করেছে অপহরণকারীরা। চার জনকে চিনতে পেরেছি।” |