ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে আঞ্চলিক ভাষাকে হাতিয়ার করছে সিডি-ডিভিডি শিল্প। ডাউনলোডের গুঁতোয় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ছোট শহরের বাজার ধরার উপরেও জোর দিচ্ছে তারা। বহুজাতিকদের পাশাপাশি এই জোড়া কৌশলে ভর করে নতুন উদ্যমে মাঠে নামছে স্থানীয় সংস্থাগুলি। পিছপা হচ্ছে না বিপণির সংখ্যা বাড়াতেও।
গত পাঁচ বছরে ১৪০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে সিডি-ডিভিডির বাজার। সংশ্লিষ্ট শিল্পের মতে, সিডি বা ডিভিডির পরিবর্তে নেটে হেঁটে গান বা সিনেমা ডাউনলোড দ্রুত বাড়তে থাকাই এর মূল কারণ। ঠিক যে-ভাবে সাবেকি বইয়ের দোকানকে কড়া প্রতিযোগিতার মুখে ফেলছে অনলাইন বই বিক্রি। গানের ‘অনলাইন’ বিপণি হাঙ্গামা-র দাবি, গত বছর এ ভাবে ৮ কোটি গান কিনেছেন আড়াই কোটি ক্রেতা। একই হিসেব ধিঙ্গানা-রও।
আর এই আক্রমণের মুখে পড়েই পাততাড়ি গুটিয়েছে বিভিন্ন ছোট-বড় সিডির দোকান। যার মধ্যে রয়েছে পার্ক স্ট্রিটের অন্যতম ‘ল্যান্ডমার্ক’ মিউজিক ওয়ার্ল্ড। আছে প্ল্যানেট এম। পড়তি বাজারের কথা মাথায় রেখে ডিজিটাল বাজারের দিকে নজর দিচ্ছে সারেগামা-ও। সরে আসছে সরাসরি খুচরো ব্যবসা থেকে। যে-কারণে নিজেদের সিডি তৈরির ভার তারা তুলে দিচ্ছে সোনি ডিএডিসি-র হাতে। |
দিয়েছে সিডি তৈরি, বিপণন ও বণ্টনের দায়িত্ব।
কিন্তু এই প্রতিকূল বাজারে স্রোতের উল্টো দিকে সাঁতরেও সাফল্যের মুখ দেখা সম্ভব বলে মনে করছে সোনি ডিএডিসি। কর্তৃপক্ষের দাবি, সিডি ব্যবসা মার খেয়েছে সঠিক মোড়ক ও বণ্টন না-থাকার কারণে। তাঁরা মনে করছেন, পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যাবে আঞ্চলিক ভাষার বাজার ধরতে পারলে। আর সেই সূত্রেই দেশের সাতটি আঞ্চলিক বাজার ধরার পরিকল্পনা করছে তারা। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল অন্যতম।
বহুজাতিকদের পথে হেঁটে এই একই কৌশল কাজে লাগাতে চাইছে স্থানীয় সংস্থা এম থ্রি-ও। পার্ক স্ট্রিটে ঝাঁপ বন্ধ হওয়া মিউজিক ওয়ার্ল্ডের কাছেই পুজোর আগে দোকান চালু করতে চাইছেন এম থ্রি-র কর্ণধার টিকু মানেক। ডিজিটাল দুনিয়ার চোখ রাঙানির তোয়াক্কা না-করেই ব্যবসা সম্প্রসারণে ঝাঁপাচ্ছেন তিনি। কলকাতা, হাওড়া ও দুর্গাপুর মিলিয়ে সাতটি বিপণি ইতিমধ্যেই রয়েছে। চলতি বছরে আরও তিনটি দোকান চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। রেকর্ড বিক্রি দিয়ে হাতেখড়ি। এর পর ক্যাসেট ও সিডির ব্যবসা। তবে শুধু দু’দশকেরও বেশি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে নয়। নিখাদ আর্থিক হিসেব নিকেশ করেই এই ব্যবসায় জোর দিচ্ছেন তিনি। মানেকের দাবি, রাজ্যে প্রতি মাসে সিডি বিক্রির পরিমাণ এখনও সাড়ে তিন কোটি টাকার আশপাশে। তাই সেই বাজারের সিংহভাগ দখল করতেই দোকানের সংখ্যা বাড়ানোয় জোর দিচ্ছেন তিনি। |