মৃতপ্রায় শ্রীমতী নদী। আর এই হেমন্তের কারুণ্যময় দিনে গোধূলির নিভে আসা আলোয় নদী যেন এক সর্পিল সোনালি নালা। নদী আর নালা যাই হোক না কেন তার বুকের উপর ছোট্ট কংক্রিটের সেতু। সেতু পেরিয়ে সদ্য নির্মিত কংক্রিটের রাস্তা ধরে সোজা চলে যাওয়া যায় রাজ্যপালের মেয়ের বাড়ি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমণ্ডি থানার প্রান্তিক সীমানায় শ্রীমতী নদীর কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রাম দেহট। যে গ্রামেই রাজ্যপালের মেয়ের বাড়ি। তাঁর মেয়েদের বেঁচেবর্তে থাকার বারোমাস্যা কাহিনি। শুধুই কী বেঁচেবর্তে থাকা? দু’মুঠো ভাত, মোটা কাপড়, মাথার উপরে খড়ের চালাএ নিয়েই কি জীবন? হোক না কেন অজপাড়াগাঁর সাধারণ গ্রামীণ জীবন। এই গ্রাম্য জীবনযাপনের দৈনন্দিন কিছু সামগ্রী, তাদের হাতের নিপুণ দক্ষতা সঙ্গী করে তারা সঙ্ঘবদ্ধ। জেলার ডোকরা শিল্পকে শৈল্পিক মর্যাদায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেহট গ্রামের সরস্বতী স্বনির্ভর দলের মালতী সরকার ও তার সঙ্গীরা। |
পাটের পাপোশ, বাসন, পুতুল, টুপি, মোবাইল ব্যাগ, চটের বড় ব্যাগ প্রভৃতি ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি করেই তারা জীবন জীবিকার একটি নতুন সন্ধান পেয়েছেন। জেলার হস্তশিল্পের স্বাক্ষর রেখেছেন কলকাতা, বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, মালদহ প্রভৃতি হস্তশিল্প মেলায়। সেই দেহট গ্রাম আর শ্রীমতী নদীকেও পৌঁছে দিয়েছেন রাজধানীর বুকে। কাজের পরিধি ও শৈল্পিক সুষমায় মুগ্ধ হয়ে ১১ জানুয়ারি ২০০৯ রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী এসে দেখে গিয়েছেন তঁদের কার্যকলাপ। অনুপ্রাণিত করেছেন বৃহত্তর উত্তরণের পথে। সেই থেকে মালতী আর তার সঙ্গীরা রাজ্যপালের মেয়ে হিসেবেই পরিচিত। তবে মালতীরা এখন আর ভাল নেই। গত দুই বছর তারা কোনও মেলায় আমন্ত্রণ পাননি। আধিকারিকরা তেমন তৎপর নয় বলে তাদের ক্ষোভ। বহু দিন কর্মশালা হয়নি। একসময় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক পীযূষ গোস্বামীর এই মালতীরা দিন রাত কাজ করেও কাজ শেষ করতে পারতেন না। প্রচুর মেলা আর কাজের অর্ডার। আর এখন কাজ হাত গুটিয়ে বসে থাকা। দলের ওয়ার্কিং শেডটাও অযত্নে পড়ে রয়েছে। এ সবের মধ্যেও কিন্তু মালতীরা বাঁচতে চায়। সাধারণ ভাবে বেঁচেবর্তে থাকা নয়। কাজের মধ্য দিয়ে বাঁচা, শিল্পের সুষম নৈপুণ্যকে অভীষ্ট করে বাঁচা।
|
দু’জন দৃষ্টিহীন মানুষ অনন্ত রায় এবং আশিস দাস। সঙ্গে আরও এক জন, শুভাশিস চক্রবর্তী। এই তিন জন মিলে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় চালু করলেন। দিনটি ২০০১-এর ২ নভেম্বর। শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে বিধাননগরের কাছে ‘ভীমভার স্নেহাশ্রম দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়’-এ ছাত্র ছিল মাত্র দু’জন। শুরুতে তিনটি ঘর নিয়ে চালু হলেও এখন সংখ্যা পাঁচ। আবাসিক বিদ্যালয়টিতে এখন ৩২ জন ছাত্র এবং ২০ জন ছাত্রী। কোনও রকম সরকারি অনুদান ছাড়া শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের নানা সহযোগিতায় চলা এই বিদ্যালয়টির অবস্থা কী রকম? |
২০ ছাত্রীর একটি শোওয়ার ঘর। ৩২ ছাত্রকেও শুতে হয় আর একটি ঘরে। শোওয়ার ঘরটাই শ্রেণিকক্ষ। বৃষ্টি হলে ছাত্রদের ঘরের ছাদ দিয়ে জল পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নেই আলাদা শৌচাগার। মূলত ব্রেল পদ্ধতিতে এখানে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। তারপর ছাত্রছাত্রীদের পাঠানো হয় বিধাননগর সন্তোষিনী বিদ্যাচক্র উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার পর বাগডোগরা কলেজে। বিদ্যালয়ের ইনচার্জ অনন্তবাবু, শিক্ষক আশিসবাবু ও কর্মী শুভাশিসবাবু জানান, “পড়ুয়ারা ঘরের মেঝেতে বসে পড়াশোনা করে। আলাদা শ্রেণিকক্ষ নেই, নেই ব্রেলার মেশিন। আর্থিক সমস্যার জন্য এই সব প্রতিবন্ধকতা। তা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের পড়া-থাকা-খাওয়ার সব খরচ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বহন করে।
আমাদের লক্ষ্য, নবম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের ব্যয়ভার বহন করা। সেই কাজ হচ্ছেও। তবে আরও বেশি মানুষের সহযোগিতা পেলে এই কাজ ভাল ভাবে করতে পারব। তাঁরা আরও জানান, সরকারি স্তরে আবেদন করেও তেমন ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। চেষ্টা করেছি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। তা সফল হয়নি। কথা হলে সুরাহা হবে নিশ্চয়ই।” শারীরিক আর আর্থিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে যাঁরা দৃষ্টিহীনদের আলোর দিশা দেখাচ্ছেন, তাঁদের ‘হ্যাটস অফ’ বলতেই হবে।
|
সুশান্ত, দীপঙ্কর, সমীর, শ্রেয়সী, ঝুম ও ভবনাথ। এদের অভিভাবকদের কেউ রিকশা চালান, কেউ সবজি বিক্রেতা। মায়েরা পরিচারিকার কাজ করেন। তিস্তার চরে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের নিয়েই জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রবীথি পরিবেশন করল চণ্ডালিকা। সাদ্রী ভাষায় অনূদিত চণ্ডালিকার নিবেদন-সন্ধ্যায় অতিথিদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন চা-বলয়ের বাসিন্দা। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাটক বা সঙ্গীত নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ ও মঞ্চায়নের কাজ রবীন্দ্রবীথি শুরু করেছিল ২০১০ থেকেই। |
তাদের প্রথম প্রয়াস রাজবংশী, মেচ, সাদ্রী ও নেপালি ভাষায় অনূদিত বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত আলেখ্য হিসেবে সাজিয়ে পরিবেশনা। উল্লেখযোগ্য, সাদ্রীভাষায় চিত্রাঙ্গদা এক অন্য রকম পরিবেশনা। এই কাজের সুবাদেই উত্তরের বাইরে কলকাতায় মধুসূদন মঞ্চে, রবীন্দ্রসদনে, শিশিরমঞ্চে, দিল্লিতে দর্শকের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চণ্ডালিকা সাদ্রি ভাষায় অনুবাদ করেন হেমলতা বাঘওয়ার। গতানুগতিকতার বাইরে এসে রবীন্দ্র বিকাশের ধারাটিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বজায় রাখা নিঃসন্দেহে মূল্যবান।
|
রাজকীয় স্থাপত্যশৈলীর একটি অসাধারণ নিদর্শন। কলোনিয়াল এই বাংলোবাড়িটি কালিম্পং শহরে অবস্থিত। বাড়িটি তৈরি হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। ব্রিটেনের পশম-ব্যবসায়ীরা এটি তৈরি করেন। চাক্ষুষ দর্শনের জন্য কোনও বিধিনিষেধ নেই। |