রাজ্যের মডেল হিসেবে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে গড়ে উঠেছিল সিক নিউ বর্ন বেবি কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ)। পরবর্তীকালে রাজ্যের এই মডেল কেন্দ্রটিকে ঘিরে পরিকাঠামোগত উন্নতি না হওয়ার অভিযোগ উঠলেও সীমিত ক্ষমতা নিয়ে অত্যন্ত কম ওজনের এক নবজাতককে শুশ্রূষা করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন এই হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের চিকিৎসকেরা।
এই কেন্দ্রের চিকিৎসক শিবশঙ্কর মাহাতো জানাচ্ছেন, জন্মের সময় ওই শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ৭৭০ গ্রাম (নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন আড়াই কেজি)। এই হাসপাতালে এর আগে এত কম ওজনের বাচ্চাকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার নজির নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ৬ জুন মফস্সল থানা এলাকার রুদড়া গ্রামের জবা মাহাতোকে একটি গাড়িতে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন বাড়ির লোকজন। হাসপাতালে আনার পথে রাস্তায় গাড়িতেই তাঁর কন্যা সন্তান প্রসব হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাঁর প্রসবের নির্ধারিত সময় সেটা ছিল না। সে দিন এসএনসিইউ বিভাগে অত্যন্ত কম ওজনের ওই শিশুটির জন্য শয্যা মেলেনি। দু’দিন পরে তাকে ওই বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। শিবঙ্করবাবুর কথায়, “আমি তখন ডিউটিতে ছিলাম। বাচ্চা খুব কম ওজনের হলে অন্য বাচ্চার চেয়ে বেশি শ্বাসকষ্ট হয়, হাইপোথার্মিয়া অর্থাৎ দেহের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়, মায়ের বুকের দুধ সে টানতে পারে না। এই শিশুটিও তা পারছিল না।” |
এর পরে শুরু হয় শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। ওই নবজাতককে স্যালাইন, অক্সিজেন দেওয়ার পাশাপাশি ওয়ার্মারে রাখা হয়। নিয়মিত নজরে রাখার মাসখানেক পরে দেখা গেল শিশুটি নিজেই মায়ের বুকের দুধ খেতে পারছে। এর পরেও এসএনসিইউ-এ ভর্তি থাকাকালীন একাধিকবার ওই শিশু অসুস্থ হয়েছে। অবশেষে গত শনিবার সত্তর দিনের মাথায় মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন জবাদেবী। এখন শিশুটির ওজন ১১০৫ গ্রাম। তাকে কী ভাবে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় বাড়িতে রাখতে হবে বা বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকলে, না খেতে চাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মনসাপুজোর আগেই বাড়ি ফিরেছে মেয়ে। জবাদেবী বললেন,“আমি প্রথমে ভাবিইনি এই মেয়েকে বাঁচাতে পারব। এখানকার চিকিৎসকেরা যা করেছেন, তা আমি ভুলতে পারব না। ওঁদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।” পেশায় ক্ষুদ্র চাষি, জবাদেবীর শ্বশুর ঠাকুরদাস মাহাতো বলেন,“ডাক্তারবাবুরা যা করলেন তুলনা হয় না।”এসএনসিইউ-র চিকিৎসকেরা বলছেন, “আমরা কর্তব্য করেছি মাত্র।” |