কখনও এক টানা মুষল ধারা। কখনও বা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। গত কয়েক দিনের এমনই বৃষ্টিতে বহরমপুরের ঘাটবন্দর এলাকার প্রাচীন একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে। সেখানে এখন কেউ থাকেন না। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল সেটি। শনিবার সেখানেই তার ইতি ঘটল।
গত বছর খাগড়া বান্ধব প্রেসের মোড়েও একই ভাবে একটি তিন তলা বাড়ির ছাদ খসে পড়েছিল। মারাও গিয়েছিলেন এক মহিলা। নিয়ম মাফিক তৎপর হয়েছিল স্থানীয় পুরসভা। ২৫টি ওয়ার্ডে কতগুলি পুরনো বাড়ি রয়েছে তৈরি হয়েছিল তার তালিকা। তৈরি হয়েছিল ১০ জনের একটি কমিটিও। যাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে পুরনো, বিশেষ করে সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে এমনই জরাজীর্ণ বাড়ির তালিকা তৈরি করবেন। |
কিন্তু মজার ব্যাপার বছর ঘুরে গেলেও সেই তালিকা আর তৈরি হয়নি। কেন?
পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “কমিটি কোনও রিপোর্ট না দিলেও ২৫টি ওয়ার্ডের ১৫টি বাড়ি আমরা চিহ্নিত করেছি। স্থানীয় বাসিন্দারাই উদ্যোগী হয়ে আমাদের কাছে ওই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলতে আবেদন করেছিলেন। ১০টি বাড়ির মালিকের কাছে ভেঙে ফেলার নোটিশও পাঠিয়ে দিয়েছি আমরা।” তবে পুরসভার নোটিশ পেয়েই বাড়ির মালিকরা আদালতের দারস্থ হয়েছেন। এমন খবরও রয়েছে। ফলে আইনি জটিলতায় বাড়ি ভেঙে ফেলা বা সংস্কারের কাজ ঝুলে থাকছে।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন শরিকের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদের কারণে, কম টাকায় ভাড়া রয়েছেন এমন দীর্ঘ দিনের ভাড়াটিয়া ঘর ছাড়তে চাইছেন নামূলত এই দুটি কারণেই পুরনো বাড়ি সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ দিকে সংস্কার না হওয়ায় ওই বাড়িগুলি বিপজ্জনক অবস্থায় হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ওই সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগও পুরসভায় জমা পড়েছে।
খাগড়া ১২০ ও ১২১ বিবি সেন রোডের প্রাচীন দোতলা ইমারতের দেওয়ালের যত্রতত্র বট গাছ গজিয়েছে। জীর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনও দিন ভেঙে পড়তে পারে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাগড়া ৬ নম্বর রাধিকা চরণ লেনের ভগ্নপ্রায় বাড়ি ভেঙে ফেলার জন্য পুরপ্রধানের উপরে চাপ রয়েছে পড়শিদের। একই ভাবে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২০ উমা বেওয়া লেনের জরাজীর্ণ বাড়ির ছাদ ধ্বসে পড়ছে। বাড়ির দেওয়ালে গজিয়ে ওঠা পাকুড় গাছের শিকড় প্রতিবেশী বাড়ির দেওয়াল ফাটিয়ে দিচ্ছেও বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু শরিকি বিবাদে বাড়ি সংস্কার হচ্ছে না।
সেই সঙ্গে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক্সিবিশন বাগান রোডের প্রায় ৮০ বছরের পুরনো একটি বাড়ির বিভিন্ন অংশ সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে। ছাদ চুঁইয়েও জল পড়ছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুরারিমোহন সেনের দোতলা বাড়ির ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। তার মধ্যে গোরাবাজার ১৮ নম্বর রুটি মহলের দোতলা বাড়ি-সহ খাগড়া নৃসিংহদেব ঘাট লেনের বাড়ি, ১ নম্বর ব্রজসাহা লেন, দৈহাট্টা রোড, মণীন্দ্রনগর রোড এবং ৩৭ নম্বর অম্বিকাবাবু লেনের বাড়ি বিপজ্জনক কারণে ভেঙে ফেলার জন্য লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে পুরসভায়।
বহরমপুর বিশেষজ্ঞ প্রবীণ গবেষক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাশিমবাজার-সৈয়দাবাদ-খাগড়া প্রাচীন জনপদ। এই এলাকায় ২০০-৩০০ বছরের প্রাচীন বাড়িঘর রয়েছে। সেই সময়ে যত্রতত্র বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় এই এলাকা ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে। দুটি বাড়ির মাঝে সরু গলি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ার ফলে পুরনো বাড়িগুলিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।” |