বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড চত্বরের যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। যানজটের ফাঁসে বহরমপুর থেকে পঞ্চাননতলা প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পার হতে আধ ঘন্টারও বেশি সময় লাগছে! সমস্যায় জেরবার নিত্যযাত্রীরা। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস নিত্যযাত্রী সমিতির সহ-সম্পাদক তৌসিফুল ইসলাম তুহিন বলেন, “যানজটের কারণে সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারছি না। বহরমপুর থেকে জলঙ্গি যেতে যেখানে পৌনে দু’ঘন্টা সময় লাগে। যানজটের কারণে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা যেতেই আধ ঘন্টার বেশি লাগছে।”
এত দিন ভোট নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ব্যস্ততা ছিল চূড়ান্ত। যানজটের কারণে নাগরিক জীবনের যে ভোগান্তি, সে ব্যাপারে ট্র্যাফিক পুলিশের ভাবার সময় কোথায়! প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্তও ভোটের কারণে এত দিন থমকে ছিল। কিন্তু ভোট মিটলেও যানজট সামাল দিতে প্রশাসনের কর্তাদের দেখা মেলেনি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে যানজট বন্ধ করতেই হবে।” |
যদিও বছর খানেক আগে বহরমপুর পুরসভা ও জেলা পুলিশ প্রশাসন যৌথ উদ্যোগে বহরমপুরের অবাঞ্চিত ভিড় রুখতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া খিড়কি সাঁকো থেকে বাবুলবোনা রোড হয়ে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত রাস্তা চওড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই বাসস্ট্যান্ড থেকে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বিষ্ণুপুর রোডের কোনও কোনও জায়গায় পিচ উঠে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে বাস-লরি-থেকে রিকশা চলাচল করায় ওই যানজট মাত্রাতিরিক্ত আকার নেয়। নিত্যযাত্রীদের কথায়, “বাস টার্মিনাসের ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও রাস্তার উপরেই বাসগুলিকে সারি দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে বাসস্ট্যান্ডে একশ্রেণির বাস ঢুকতে পারছে না।”
পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “বহরমপুর বাস টার্মিনাসের সামনের রাস্তা দখল করে বেসরকারি বাস সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বিষ্ণুপুর রোডের ওই যানজট আরও পাকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বহরমপুরের নাগরিক জীবন। বিশেষ করে খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল বাসগুলি বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ের যানজটে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।”
যানজটের বিষয়টি বাস মালিক সংগঠনের অজানা নয়। বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারি বলেন, “পরিকল্পনা ছাড়াই বেসরকারি বাস টার্মিনাস নির্মাণের জন্যই এই যানজট তৈরি হচ্ছে। দূরপাল্লার বাস রাখার মত কোনও জায়গা বাস টার্মিনাসে নেই। দূরপাল্লার ওই বাসগুলি বাস টার্মিনাসের ভেতরে রাখা হলে রুটের বাসগুলি বের করতে অসুবিধে হয়। তাই যাত্রী তুলে সময়ের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য রুটের বাসগুলি বাসস্ট্যান্ডের বাইরে রাখতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও রাস্তার যা হাল হয়েছে, তাতে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতেও যাতায়াত করতে পারছে না। যানজট তৈরি হচ্ছে।”
পুরপ্রধান বলেন, “যানজট কমাতে বাস মালিক সংগঠন ও পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে যানজটের কারণ খুঁজে তার সমাধানসূত্র বের করা হবে।” কিন্তু কবে? উত্তর জানা নেই কারও। |