|
সত্যজিৎ-সহ চার লেখকের গল্প নিয়ে সন্দীপের ছবি |
চার রকম |
আকাশে উত্তরে মেঘ দেখা গেলেও এদিকে রোদ। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটা কাগ্তাড়ুয়া।... উত্তরের মেঘটা অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুত এগিয়ে এসে সূর্যটাকে ঢেকে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে একটা ঠাণ্ডা হাওয়া। মৃগাঙ্কবাবু ব্যাগ থেকে পুলোভারটা বার করে গায়ে চাপিয়ে নিলেন। এদিকে সূর্যও দ্রুত নিচের দিকে নেমে এসেছে।... আরেকটা সিগারেট ধরালেন মৃগাঙ্কবাবু। তারপর কয়েক পা সামনে এগিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে তাঁর মনে হল বিশ্বচরাচরে তিনি একা। এমন একা তিনি কোনোদিন অনুভব করেননি।’— সত্যজিৎ রায়ের গল্প: ‘কাগ্তাড়ুয়া’। ‘হাইওয়ে’তে হঠাৎ গাড়ির তেল ফুরোলে যা হয়, ড্রাইভার তেল আনতে গেলে খানিকটা সময়ের জন্যে একা হয়ে যান মৃগাঙ্কবাবু, এমন একটা মুহূর্ত থেকে গল্পটা শুরু হচ্ছে। |
|
‘বাবার এ-গল্পের চলনটা এত সিনেম্যাটিক, গল্পটা সংলাপহীন ভাবেই এগোতে থাকে অনেকক্ষণ, অথচ চমৎকার সব মুহূর্ত তৈরি হতে থাকে। ওঁর গল্পগুলির মধ্যেই একটা ফিল্মের ট্রিটমেন্ট লুকনো থাকে, ফলে ওঁর গল্প নিয়ে ছবি করার মস্ত সুবিধে সেখানেই।’ বলছিলেন সন্দীপ রায়। ভেঙ্কটেশ ও সুরিন্দর ফিল্মস-এর প্রযোজনায় তাঁর নতুন ছবির শুটিং শুরু হচ্ছে অগস্টের শেষে, এ-গল্পটি নিয়ে মোট চারটি গল্প থাকছে তাতে, এই গল্পটির জন্যে শান্তিনিকেতনের আশেপাশে লোকেশনও দেখে এসেছেন সন্দীপ, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আর নিমাই ঘোষ মুখ্য দুই অভিনেতা। গল্পটি বেরিয়েছিল ‘সন্দেশ’-এ, পৌষ ১৩৯৩-এ (সত্যজিতের ইলাসট্রেশন, নীচে)। চারটি ছোট ছোট ছবি নিয়ে গোটা একটা ছবি, আরও যে তিনটি গল্প বাছছেন সন্দীপ, তার মধ্যে সত্যজিতের ‘দুই বন্ধু’ও রাখবেন ভেবেছেন। ‘সন্দেশ’-এ বেরিয়েছিল গল্পটা পৌষ ১৩৯৬-এ (সত্যজিতের ইলাসট্রেশন, উপরে)। |
|
স্কুলের দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছাড়াছাড়ি হওয়ার আগে ঠিক করেছিল— কুড়ি বছর পর তারা কলকাতার অতি-পরিচিত একটা সিনেমা হলের সামনে দু’জনে দেখা করবে... এখান থেকে এ-গল্পের শুরু। অভিনেতা এখনও ঠিক না করলেও চিত্রনাট্য ‘রেডি’ সন্দীপের। ‘শুধু সিনেম্যাটিক বলেই নয়, বাবার গল্প নিয়ে ছবি করার আর একটা কারণ এগুলোর মানবিক আবেদন। তা ছাড়া দর্শককে একেবারে টানটান বসিয়ে রাখে আসনে, আর গল্পের শেষে একটা অদ্ভুত মোচড় থাকবেই।’— সন্দীপের বাছাইয়ের তালিকায় আর আছে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরীক্ষা’, পরশুরামের ‘বটেশ্বরের অবদান’, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের দু’একটি গল্প, এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ‘কোনও যোগসূত্র থাকবে না ছবিগুলোর মধ্যে, চারটে আলাদা স্বাদের গল্প, ছবিটার নামও রাখব ভেবেছি— চার রকম।’ ছবি সন্দীপ রায়ের সৌজন্যে।
|
নয়নসুখ |
ভারতীয় শিল্পে বহু ক্ষেত্রে শিল্পীর পরিচয়ই মেলে না, আত্মপ্রতিকৃতি তো দূরের কথা। পাহাড়ি চিত্রকলার খ্যাতকীর্তি শিল্পী ছিলেন নয়নসুখ। শুধু জানা যায় পাহাড়ি অঞ্চলের ছোট্ট জনপদ গুলের-এ তাঁর জন্ম। পরে বলবন্ত সিংহের (বা বলবন্ত দেব)-এর পৃষ্ঠপোষকতায় নয়নসুখের শিল্পসৃষ্টি ও বিকাশ। কিন্তু কে এই বলবন্ত সিংহ? জম্মুর রাজকুমার না জসরোটা-র? দু’জনের দু’দশকের সম্পর্ক থেকেই শিল্পীর সৃষ্টি একের পর এক অনবদ্য চিত্র, যার ১৩টি ভারতীয় সংগ্রহশালায় রক্ষিত। ১৩ অগস্ট বিকেল চারটেয় আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে ‘দি আইজ ডিলাইট’ শীর্ষকে শিল্পী নয়নসুখকে নিয়ে বলবেন শিল্প ঐতিহাসিক অশোককুমার দাস। দেখা যাবে শিল্পীর কিছু দুর্লভ ছবি (সঙ্গে আত্মপ্রতিকৃতি)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত।
|
আবার অ্যান্টনি |
‘অবশেষে এন্টনি-সাহেব কবির দল করিবার ইচ্ছা করিলেন। ব্রাহ্মণীকে এই কথা বলিলে তিনি তাঁহাকে উপহাস করিতে লাগিলেন। এন্টনি ছাড়িবার পাত্র নহেন। তিনি গোরক্ষনাথ যোগী নামক একটী লোককে মাসিক ২০ টাকা বেতন দিয়া বাঁধনদার নিযুক্ত করিলেন।’ অ্যান্টনি-র জীবনকথা লিখছেন পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগর। এ শহরে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি আবার জীবিত হয়ে উঠছেন মঞ্চে, পূর্ব পশ্চিম-এর ‘অ্যান্টনি-সৌদামিনী’ নাটকে। কিন্তু পূর্ণচন্দ্র লিখিত তাঁর একটিমাত্র জীবনকথা দুর্লভ পত্রিকার পাতায় হারিয়ে ছিল। নাটকের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে সেটি পড়েন নির্দেশক সৌমিত্র মিত্র। এ বার তাঁরই সম্পাদনায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হচ্ছে কবি এন্টনি সাহেব (সপ্তর্ষি প্রকাশন), প্রাসঙ্গিক তথ্য সংযোজন করেছেন কলকাতা-গবেষক দেবাশিস বসু। নাটকটির দ্বিতীয় অভিনয় ১৩ অগস্ট সাড়ে ছ’টায় অ্যাকাডেমিতে, আর বইটি প্রকাশিত হচ্ছে আজ।
|
বিশেষজ্ঞ |
তাঁর কর্মজীবন শুরু ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের অন্তর্দেশীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী হিসেবে। ৩৫ বছরেরও বেশি সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্য ও তার জীববৈচিত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন ড. কুমুদরঞ্জন নস্কর। ২০১১-য় সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে অবসর নেন। তাঁর গবেষণা দেশবিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতীয় কৃষি গবেষণা-র (আইসিএআর) পক্ষ থেকে তাঁকে পর পর দু’বার ন্যাশনাল ফেলো হিসেবে সম্মানিত করা হয়। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন এই বিশিষ্ট উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ। সুন্দরবন নিয়ে বই লেখায় ব্যস্ত ছিলেন, কাজ অসমাপ্ত রেখেই চলে গেলেন তিনি।
|
আট দশক |
এক সময় কলকাতার রাস্তাতেই দুঃস্থ মানুষের শবদেহ পড়ে থাকত। কখনও গঙ্গার ধারে সে সব দেহ ফেলে রাখা হত, বা গণদাহের ব্যবস্থা হত। ১৯৩২-এ কিছু উৎসাহী মানুষ গঠন করলেন সেবামূলক সংস্থা ‘হিন্দু সৎকার সমিতি’। বিচারপতি রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। দুঃস্থদের জন্য ভারতে প্রথম শবদেহ বহনকারী গাড়ির ব্যবস্থা হল। নিখরচায় দাহও করা হত। ৯৩ মহাত্মা গাঁধী রোডে সরকারের দেওয়া ১৮ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠে সমিতির ভবন। অতিক্রান্ত হল হিন্দু সৎকার সমিতির আট দশক। কলকাতা ও হাওড়ায় সমিতির ১২টি গাড়ি চলে। মরদেহ সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করার চেষ্টাও চলছে। ৩ অগস্ট সমিতির ৮১তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভবন প্রাঙ্গণে প্রয়াত অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সনৎকুমার রায়চৌধুরী ও ইন্দ্রভূষণ বিদ্-এর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করলেন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়।
|
ধ্রুপদী |
সুখী গৃহকোণ, শোভে গ্রামোফোন। চোঙাওয়ালা সেই কলের গান আজ আর সুখী গৃহকোণে বাজে না, শুধু থাকে। তবে ডিজিটাইজ করে সে সব গান ফিরে শোনার ব্যবস্থা করেছে ‘আর্কাইভ অব ইন্ডিয়ান মিউজিক’। ২৩ অগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর আইসিসিআর-এ ‘ভয়েসেস অব ইন্ডিয়া’ নামে এক প্রদর্শনীতে বিশ শতকের গোড়ার দিকের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিল্পীদের নিয়ে ৫৬টি প্যানেলে থাকবে তাঁদের জীবনী, ছবি এবং বিশেষ কিয়স্কে গান শোনার ব্যবস্থা। হিন্দুস্থান রেকর্ডসের সৌজন্যে একটি আলাদা কিয়স্কে ২০,০০০ গান ডিজিট্যালি শোনার ব্যবস্থাও থাকবে। প্রদর্শনীর কিউরেটর বিক্রম সম্পত, শিল্পনির্দেশক নারায়ণচন্দ্র সিংহ। ২৩ অগস্ট সূচনা করবেন শাবানা আজমি ও জাভেদ আখতার। ৭-১৫ সেপ্টেম্বর বিড়লা অ্যাকাডেমিতে থাকছে শিল্পীদের নিয়ে তথ্যচিত্র, ক্লাস এবং নানা সেমিনার। এ শহরে প্রদর্শনীর আয়োজক ‘উইভার্স স্টুডিয়ো সেন্টার ফর দি আর্টস’।
|
টেরাকোটা |
|
কয়েক জন শিল্পী আড্ডার সূত্র ধরে মিলিত হতেন বিভিন্ন জায়গায়। তারই পরিণতি ‘ওপেন উইন্ডো’ (১৯৭৭)। এঁদের উদ্যোগেই এ বার ‘পোড়ামাটির রূপ কথা’ নামের এক টেরাকোটার কর্মশালা। বিষ্ণুপুর সহ সারা বাংলার মন্দির-ভাস্কর্যের সঙ্গে মাটি ও বাংলা— দুইয়েরই যোগ। তাই ভাস্করদের পাশাপাশি চিত্রশিল্পীরাও এগিয়ে এসেছেন পোড়ামাটির মাধ্যমে নিজেদের কল্পনাকে রূপ দিতে। ১৫ অগস্ট কর্মশালা শুরু বাইপাসের নয়াবাদে ‘কারুকল্পনা ভবন’-এ। চলবে ১৮ পর্যন্ত। থাকবেন সুনীল দে, সমীর আইচ, প্রদীপ রক্ষিত, তাপস কোনার (সঙ্গে তারই এক সৃষ্টি) প্রমুখ।
|
ওয়েবম্যাগ |
বই নয়, কম্পিউটারেই স্বচ্ছন্দ আজকের অনেক পাঠক। তাঁদের কথা ভেবেই ওয়েবম্যাগ। বাংলা ওয়েবম্যাগ-এর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু এদের খবর রাখেন ক’জন? নিজেদের মধ্যে পরিচিতিও কম। এই শূন্যস্থান পূরণেই এগিয়ে এসেছেন তিনটি ওয়েবম্যাগ ‘ইচ্ছামতী’, ‘ও কোলকাতা’ এবং ‘সৃষ্টি’র প্রতিনিধিরা। তাঁদের উদ্যোগেই জীবনানন্দ সভাঘরে ১২ অগস্ট সন্ধে ছ’টায় ‘ইন্টারনেটে বাংলা সাহিত্য চর্চার মাধ্যম: বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা। লিটল ম্যাগাজিনগুলোর প্রসারও সীমিত। অথচ সেখানে প্রকাশিত সম্পদ অমূল্য। সেখান থেকে কপিরাইটহীন লেখা ইন্টারনেটে তুলে আনা বা ওয়েবম্যাগ আর্কাইভ গড়ে তোলা যায় কি না, ছোটদের জন্যও ওয়েবম্যাগ তৈরি ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা হবে।
|
জঙ্গলের ডায়েরি |
|
‘সিং সাব’কে ভুলতে পারেননি তিনি। সিং সাব মানে, ভি এস সিংহ। জয়পুর থেকে কলকাতা ফেরার এক সকালে ফোনে পেয়েছিলেন চুরু-র সেই সদাহাসিমুখ জেলাশাসকের মৃত্যুসংবাদ। রনথম্ভোর ন্যাশনাল পার্কে এক শীতের অভিযানের আগে সন্দীপ ভুতোরিয়া জিগ্যেস করেছিলেন তাঁকে, ‘একটা বাঘও কি দেখতে পাব?’ সিংসাব বলেছিলেন, ‘একটা কেন? এক ডজন পাবেন।’ সত্যিই এক ডজনেরও বেশি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন সন্দীপ। আর সেই রোমাঞ্চকর কাহিনি লিখেছিলেন ডায়েরির আকারে। সেই ডায়েরি, দ্য সাফারি প্রকাশিত হল সম্প্রতি কলকাতায়। সঙ্গে আলোচনাসভা। বললেন, লেখক, ঋতা ভিমানি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ বেলিন্ডা রাইট ও নিতিন দেশাই।
|
ফিরে দেখা |
পুরনো বাংলা গান ও ভক্তিমূলক গানের শিল্পী হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। ১৮ অগস্ট সে সব ‘ফিরে দেখা বাংলা গান’ নিয়েই শিল্পী দেবাশিস দত্ত বাগবাজারের ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ যাত্রা মঞ্চে গাইবেন ‘একা দেবাশিস’। উঠে আসবে ভারতচন্দ্র থেকে শুরু করে বিবেকানন্দের সময়কার নানা গান। নিধুবাবু, মুকুন্দ দাস, গিরিশ ঘোষ-সহ নানা বিখ্যাত গীতিকারের গানের পাশাপাশি গীতিকারের খোঁজ মেলে না এমন সব জনপ্রিয় গান। অনুষ্ঠানে প্রাপ্ত অর্থ দেওয়া হবে উত্তরাখণ্ডে দুর্গতদের সাহায্যে। আয়োজনে বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
|
বাংলা ভাষা |
সাহিত্যসৃষ্টিতে যে চলিত ভাষার আজ একাধিপত্য সে সম্পর্কে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ‘এই বইয়ে যে ভাষার রূপ আমি দেখাতে চেষ্টা করেছি, তাকে বলে চলিত ভাষা। আমি তাকে বলি প্রাকৃত বাংলা।’ ১৯৩৮-এ প্রকাশিত হয় তাঁর বাংলা ভাষা নিয়ে নতুন ভাবনার বই বাংলা ভাষা-পরিচয়, প্রথম প্রকাশের ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে বইটি পুনঃপ্রকাশ করল বাংলার মুখ প্রকাশন। পরিশিষ্টে যেমন রবীন্দ্রনাথের রচনা রয়েছে, তেমনই রয়েছে তাঁর ব্যাকরণ-বিষয়ক ভাবনাকে সমালোচনা করে লেখা বিজয়চন্দ্র মজুমদারের রচনা। এই প্রকাশন থেকেই বেরল দেবব্রত বিশ্বাস সম্পাদিত রবীন্দ্রনাটকে প্রতিবাদ। কবির নাটকে নানা দিক থেকে কী ভাবে উঠে এসেছে প্রতিবাদ, তা নিয়েই বিবিধ প্রবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্টজনেরা।
|
ধানসিড়ি |
ছোটবেলায় রঙ আর পেনসিল হাতে পেলেই মন ছুট লাগাত পাহাড়, নদী আর প্রজাপতির দেশে। সৃষ্টির নেশা তখন থেকেই। প্রিয় কবি জীবনানন্দকে মনে রেখে সঙ্গীতশিল্পী পিতা মেয়ের নাম রেখেছেন ধানসিড়ি। গতানুগতিক লেখাপড়ায় মন বড় চঞ্চল, তবে ইতিহাস দারুণ প্রিয়। আর প্রিয় গান। অতএব বাবার কাছেই শুরু গানের তালিম। তবে এ ব্যাপারে শিক্ষক পিতার অবাধ স্বাধীনতা। একটা গান জন্ম থেকে সাবালক হয়ে ওঠা চোখের সামনে দেখতে দেখতে তৈরি হয়ে গিয়েছে শিল্পীমন। বাবা গান লিখছেন ‘পাখি এবার ফেরার পালা/ মনের ভিটেয় দিয়ে তালা...’। শুনে মেয়ে শুধায় ‘বাবা, ভিটে কী?’ সস্নেহে বুঝিয়ে দেন মেয়েকে গানের কথা। এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ধানসিড়ির সামনে আর এক কঠিন পরীক্ষা। ‘এক ফোঁটা ভালবাসা’ ছবির জন্য এই গানই ওঁর জীবনের প্রথম প্লে-ব্যাক। শিল্পী উতরেও দিলেন অনায়াসে। ‘পাখি আমার নীড়ের পাখি’— গানটির সুরও পিতারই। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ছবিটি, এখন দর্শকদের দেখা ও শোনার অপেক্ষা। পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে সুরের আকাশে শক্ত ‘ভিটে’ তৈরি হবে নচিকেতা কন্যা ধানসিড়ির জন্য, এমনটা আশা করাই যায়। |
|
|
|
|
চিত্রশিল্পী |
দুর্ভিক্ষ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে কয়েক জন তরুণ শিল্পী গড়ে তুলেছিলেন শিল্পী সংঘ ‘ক্যালকাটা গ্রুপ’। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন রথীন মৈত্র। ১৯১৩-র ১৪ জুলাই তাঁর জন্ম। বাবা পাবনা শীতলাই-এর জমিদার যোগেন্দ্রনাথ, মা সরলা। পাবনা জেলা স্কুল ও পরে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে পড়াশুনো। শিক্ষক শিল্পী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কাছেই ছবি আঁকায় হাতেখড়ি। প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৩১-এ সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। মুকুল দে তখন অধ্যক্ষ। বসন্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে শিল্পশিক্ষা। পরে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট-এ অধ্যাপক হন। ছিলেন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর অন্যতম কর্মকর্তাও। তেলরঙ ও টেম্পারা ছিল তাঁর প্রধান মাধ্যম। প্রথাগত ধারার বাইরে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন গ্রামীণ চিত্রকলা ও ইমপ্রেসনিজ্ম নিয়ে। ১৯৫৩-য় ভারতীয় শিল্পকলার প্রদর্শনী নিয়ে যান আমেরিকা। নিউ ইয়র্কের ভারতীয় দূতাবাসে দু’টি ম্যুরাল করে খ্যাতি অর্জন করেন। তখন ক্রিস্টোফার ইশারউড ও স্বামী প্রভাবানন্দের গীতার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের উদ্যোগ চলছে। রথীন মৈত্র এঁকেছিলেন সেই গ্রন্থের প্রচ্ছদ। অসাধারণ চিত্রশিক্ষক ছিলেন। আকাদেমির সর্বভারতীয় প্রদর্শনীতে তরুণ শিল্পীদের সুযোগ করে দিতেন। কবি ও সুরকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র ছিলেন তাঁর অগ্রজ। নিজেও সেতারে ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। ১৯৯৭-এ রথীন মৈত্র প্রয়াত হন। এ বছর নীরবেই অতিক্রান্ত হল প্রখ্যাত এই চিত্রকরের শতবর্ষ। |
|
|