সাফল্যের সঙ্গে কাজ করা শুরু করল পরমাণু বিদ্যুৎচালিত ডুবো জাহাজ আইএনএস অরিহন্ত-এর তেজস্ক্রিয় চুল্লি। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই আইএনএস অরিহন্ত। গত কাল গভীর রাতে বিশাখাপত্তনমে ভারতীয় নৌ সেনার গবেষণা কেন্দ্রে অরিহন্তের তেজস্ক্রিয় চুল্লিটি চালু করা হয়। সামনের মাসের প্রথম দিকেই অরিহন্তকে পরীক্ষামূলক ভাবে সমুদ্রে পাঠানো হবে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)-র তরফে জানানো হয়েছে, ৬ হাজার টনের এই ডুবো জাহাজটি মাঝারি দূরত্বে আঘাত হানতে পারে এমন পরমাণু অস্ত্র বহন ও ক্ষেপণে সক্ষম। এর জন্য পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বিও-৫ তৈরি রেখেছে ডিআরডিও। সামনের মাসে যখন পরীক্ষামূলক ভাবে সমুদ্রে নামানো হবে অরিহন্তকে তখন বিও-৫ কেও বহন করবে এটি।
এখনও পর্যন্ত স্থল পথে এবং আকাশ পথে পরমাণু অস্ত্র ক্ষেপণে সক্ষম এমন বাহন আছে। কিন্তু জলপথ থেকে পরমাণু অস্ত্র ক্ষেপণ করা যেত না। অরিহন্ত পুরোপুরি কাজ করা শুরু করলে তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। ২০১৪-র মধ্যেই এটি জলপথে টহল দিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অরিহন্তের তেজস্ক্রিয় চুল্লি সাফল্যের সঙ্গে কাজ শুরু করায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ পরমাণু শক্তি দফতর, ডিআরডিও এবং ভারতীয় নৌ সেনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “গবেষণার ক্ষেত্রে এটা একটা বড় পদক্ষেপ। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অরিহন্ত ভারতীয় গবেষকদের কর্মদক্ষতারই প্রমাণ দেয়।” ভারত ছাড়া শুধু মাত্র আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চিন এবং ব্রিটেনেরই এ রকম পরমাণু বিদ্যুৎচালিত ডুবো জাহাজ রয়েছে।
১৯৯৮ সালে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রথম এ ধরনের ডুবো জাহাজ তৈরির চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। ডিআরডিও প্রধান ভি কে সারস্বত মে মাসে একটি আলোচনা সভায় অরিহন্তের কথা বলেন। তিনি জানান, একটা ছোট মাপের তেজস্ক্রিয় চুল্লি রয়েছে অরিহন্তে। এই চুল্লিতে যে বিপুল তাপমাত্রা তৈরি হবে তা দিয়ে জলকে ফোটানো হবে। এর ফলে যে বাস্প তৈরি হবে তা দিয়েই অরিহন্তের প্রপালসন চলবে। তৈরি হবে বিদ্যুৎ। অনেকটা বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের মতো হলেও অরিহন্তের বিদ্যুতের উৎস কিন্তু তেজস্ক্রিয় চুল্লি।
নৌ সেনা সূত্রের খবর, অরিহন্ত ছাড়া ভারতের হাতে আরও ১৪টা ডুবো জাহাজ আছে। কিন্তু এদের সবকটারই অনেক বয়স হয়েছে। এবং হয় ডিজেল নয় বিদ্যুতচালিত। ফলে এক টানা বেশি ক্ষণ জলের তলায় থাকতে পারে না এই ডুবো জাহাজগুলো। পরমাণু বিদ্যুৎচালিত আইএনএস অরিহন্ত ভারতীয় নৌ সেনার এই ঘাটতিই পূরণ করতে পারবে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আশা। |