দক্ষিণ কলকাতা
চাপানউতোর
নবসাজের প্রতীক্ষায়
সৌন্দর্যায়ন নিয়ে কলকাতা পুরসভা এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপানউতোর রয়েই গেল। ফলে কুঁদঘাটে নেতাজি মেট্রো স্টেশনের পাশেই পথচারীদের যাতায়াতের জন্য যে জায়গা তৈরি করা হয়েছে সেই জায়গা ছাড়াও সামনের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হল না। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কেবলমাত্র নেতাজি মেট্রোর মধ্যেই আপাতত সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
অন্য দিকে কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কুঁদঘাটে টলিনালার উপরেই মেট্রো স্টেশন তৈরির সময়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে স্টেশন সংলগ্ন মেট্রোরই অধিগৃহীত জমিতে সৌন্দর্যায়ন করা ছাড়াও পারাপারের জন্য একটি নতুন সেতু তৈরি করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। সৌন্দর্যায়নের কাজ হয়নি। এমনকী, পারাপারের জন্য অস্থায়ী সেতু ভেঙে সেখানে নতুন সেতুও তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে স্টেশনের একাংশ দিয়েই লোকজন যাতায়াত করেন।
স্টেশনের একাংশ যেটি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয় তার সৌন্দর্যায়ন মেট্রোরেলেরই করার কথা। কারণ, এটি মেট্রো কর্তৃপক্ষেরই সম্পত্তি। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষকুমার ঘোষ বলেন, “সৌন্দর্যায়নের ব্যাপারে লিখিত ভাবে কোনও প্রস্তাব পুরসভা দেয়নি। পুরসভা লিখিত প্রস্তাব দিলে অবশ্যই মেট্রো কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসবেন। তবে স্টেশন তৈরি হওয়ার পরে মেট্রোর স্টেশন সংলগ্ন যে অংশ রয়েছে তা নাগরিকদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। ফলে সেই অংশে আলো লাগানো এবং সৌন্দর্যায়নের কাজ পুরসভাই করবে। তবে, নেতাজি মেট্রো স্টেশনের ভিতরে সৌন্দর্যায়নের কাজ মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিজেরাই করবেন।”
কুঁদঘাট অঞ্চলে নেতাজি মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় মেট্রো কর্তৃপক্ষ সিঁড়ি তৈরি করলেও মেট্রোর অধিগৃহীত জমিতেই ‘বেআইনি’ পার্কিং গড়ে উঠেছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। যেখানে-সেখানে গড়ে উঠেছে নির্মাণ। ফলে এলাকাটিও নোংরা হচ্ছে। স্টেশনের পাশেই মেট্রোর তৈরি অস্থায়ী ফুটব্রিজের অবস্থাও খারাপ। সেতুটি খারাপ হয়ে পড়ায় সেটি পুরসভার অনুমতি নিয়েই স্থানীয় কাউন্সিলর যাতায়াতের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু সেতুটির কার্যত দখল নিয়েছেন জবরদখলকারীরা। যাত্রী-সহ বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য যে জায়গাটি বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই জায়গাটিও অপরিষ্কার। এখানে রাতে আলো থাকে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অন্ধকারের আড়ালে অসামাজিক কাজকর্মও হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর রত্না শূর বলেন, “কুঁদঘাটে মেট্রোরেল যে জমি অধিগ্রহণ করেছিল সেখানে সংস্কার করবে বলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ ছাড়াও অস্থায়ী সেতু ভেঙে যাতায়াতের জন্য নতুন সেতু তৈরি করবে বলেও জানিয়েছিল মেট্রো রেল। পুরনো সেতুটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনও সময়ে এই সেতু ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তারা সেটা ভাঙেনি। আমি পুরসভা থেকে উদ্যোগী হয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। মেট্রোর জমিতেই চলছে বেআইনি পার্কিং। বার বার বলা সত্ত্বেও মেট্রো কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকী, কোনও সংস্থাকেও পার্কিংয়ের দায়িত্ব দেয়নি মেট্রো।” যদিও প্রত্যুষবাবু জানান, মেট্রোর জমিতে অন্য কোনও সংস্থা আইনত পার্কিং করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। তবে, এই ব্যাপারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ নিজেরাই খুব দ্রুত টেন্ডার ডেকে কোনও সংস্থাকে পার্কিং ফি আদায়ের দায়িত্ব দেবে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ যাতায়াতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং, পুরনো সেতু ভাঙার বা তৈরির ব্যাপারে নতুন করে তাদের কোনও দায়িত্ব নেই। কোন জায়গা তাঁরা পারাপারের জন্য ব্যবহার করবেন বা করবেন না, সে ব্যাপারে বাসিন্দাদেরই সচেতন থাকা দরকার।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.