অঞ্জন-ব্যঞ্জন
‘ছোট’র দাবি
ছোট মাছ। মানে মৌরলা, পুঁটি, কাচকি, কুচো চিংড়ি, মিনি ট্যাংরা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ইত্যাদির মধ্যেও এমন সব স্বাদু মাছের সুলুক-সন্ধান আছে, যা কিনা আমার মতো মৎস্যকাতর বাঙালিরও অজানা। ক্যাচ দেম ইয়াং এই মন্তরকে কাজে লাগিয়ে নদী-খাল-বিল উজাড় করে কাদা-প্যাচপ্যাচে রাস্তায় হাওয়াই চটির ফটফটানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আসে এই ক্ষুদ্র মাছেরা। ইলিশ-অধ্যুষিত বর্ষাকালে বাঙালি বাড়ির রান্নাঘরে যেন ফাউ হিসেবে প্রবেশ করে এরা। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে একাকার উদরপূর্তির আয়োজনে, স্টার্টার মৌরলা ভাজা কি লাউ দিয়ে কুচো চিংড়ি। আহা, বড় স্বাদের, বড় সাধের!
পেঁয়াজ-লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে মুসুর ডালের সঙ্গে পুঁটি কি কাচকি মাছের ঝুরো এক থালা ভাতকে ভ্যানিশ করে দিতে পারে যখন-তখন। মৌরলার টকও বা কম যায় কীসে? আমার এক মাসিমা বলতেন ‘মৌরলা মাছে মধু আছে’, আজ যখন মাছ নিয়ে রাতদিন নানা এক্সপেরিমেন্ট করি, তখন মাসিমার কথা খুব মনে পড়ে। ইচ্ছে আছে একদিন ‘মধু-মৌরলা’ বলে একটা ডিশ বানাব।
রান্নার কথা থাক। আমরা বরং ফিরে যাই বাজারে। ছোট মাছ বাজার করা একটা আর্ট। দোকানদার আপনাকে গছাতে চাইবে এক ঝুড়ি, বেছে নিতে হবে আপনাকেই। ঝড়তি-পড়তির ভিড়ে ভাল ছোট মাছ বেছে নেওয়া এক ঝক্কিবিশেষ।
এ তো আর ইলিশ-কাতলা নয় যে, আপনি কানকো সরিয়ে বুঝে যাবেন মাছ তাজা না খাজা। তবে এটুকু বলতে পারি, জ্যান্ত হলে ছোট মাছ চোখ বুজে কিনবেন। আর, কলকাতার ভাল ভাল বাজার থেকে ছোট মাছ কিনলে ঠকার সম্ভাবনা নিতান্তই কম। ছোট মাছের স্বাস্থ্যগুণও অসাধারণ। চোখ ভাল থাকে, হার্ট ভাল থাকে, শুনেছি ছোট মাছে নাকি শরীরে রক্তও হয় খুব। ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে তাই ছোট মাছ বা চুনো মাছের জয়জয়কার। ইলিশ-চিংড়ি খেতে খেতে যখন মুখ মেরে যায়, তখন মুখে স্বাদ ফিরিয়ে আনে এই ছোট মাছই। ছোট মাছের বড় গুণ তো এটাই।

ছবি: শুভেন্দু চাকী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.