কেন গুলি চালাল রক্ষী, ধন্দে পুলিশ
কারখানা চত্বরের জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়োতে মাঝে-মধ্যেই ভিতরে ঢোকেন আশপাশের এলাকার মহিলারা। লুকিয়ে-চুরিয়ে ঢুকে দুষ্কৃতীরা নানা যন্ত্রাংশও চুরি করে নিয়ে যায় বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। দেখতে পেলে তাড়া করেন রক্ষীরা। কিন্তু গুলি চালানোর ঘটনা আগে ঘটেনি। তাই শুক্রবার বিকেলে কয়েক জন মহিলা ঝুড়ি হাতে জেসপের কারখানা চত্বরে ঢোকায় কর্তব্যরত বেসরকারি রক্ষী কেন গুলি চালাল, সে ব্যাপারে ধন্দে পুলিশ। অভিযুক্ত রক্ষী ধরা পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জনা দশ-বারো মহিলা বন্ধ পড়ে থাকা ওই কারখানায় ঢুকেছিলেন। আশপাশের বাসিন্দারা পুলিশকে জানান, হঠাৎ তাঁরা তিন বার গুলির আওয়াজ শোনেন। কিছু ক্ষণ পরেই দেখেন, কারখানা থেকে কয়েক জন মহিলা এক জনকে তুলে বের করে আনছেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, কারখানার ভিতরে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এক জনের দেহ ভিতরে পড়ে আছে। আহতকে বাকিরা বের করে এনেছেন। পুলিশ গিয়ে কারখানার ভিতরে জঙ্গলে চম্পা দাসের (৩২) দেহ উদ্ধার করে। তাঁর পেটে ও বুকে গুলির চিহ্ন মিলেছে। গুলি কান ছুঁয়ে যাওয়ায় জখম পুনমদেবী অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর স্বামী অজয় ভুঁইয়া হাসপাতালে দাবি করেন, ওই মহিলাদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী বন্ধ কারখানার জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে গিয়েছিলেন। পুনমদেবীদের আর এক সঙ্গী গুঞ্জা ভুঁইয়াও একই দাবি করেন।
এলাকায় পুলিশের টহল।
দুর্গাপুরে জেসপ কারখানা চালু হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। ফাউন্ড্রি, ক্রেন, রেলের বগি, রোলার তৈরি হত। প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ সালে কারখানাটি অধিগ্রহণ করে ভারী শিল্প মন্ত্রক। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নয়ের দশকের গোড়া থেকে সেটি রুগ্ণ হতে শুরু করে এবং ১৯৯৯ সালে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। চার বছর বন্ধ থাকার পরে ২০০৩ সালে প্ল্যান্ট সমেত কারখানার ১১৭ একর জমি ১৮ কোটি টাকায় কিনে নেয় রুইয়া গোষ্ঠী। প্রতিশ্রুতি ছিল, সেখানে রেলের বগি এবং কাপলিং তৈরি করা হবে। কিন্তু আজও তা হয়নি।
জেসপ থেকে লোহার যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কারখানার ভিতরে পুনর্নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অসামাজিক কাজকর্ম বাড়তে থাকে। লোহা মাফিয়ারা কারখানার পাঁচিল ভেঙে ভিতরে গাড়ি ঢুকিয়েও লোহার যন্ত্রপাতি সরাতে শুরু করেছিল। কিন্তু তা বন্ধ করতে কোনও পক্ষের উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলেই বাসিন্দাদের দাবি। মাঝে কিছুদিন কারখানায় বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীও ছিল না।
২০১১ সালের মার্চে স্থানীয় কড়ঙ্গপাড়া বাসিন্দারা তৎকালীন মহকুমাশাসককে কারখানা থেকে চুরি যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান। প্রশাসনের তরফে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে লোহা মাফিয়াদের সরাসরি উৎপাত বন্ধ হয়। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, চোরাগোপ্তা যন্ত্রাংশ সরানোর কাজ চলছেই। তাঁদের দাবি, এলাকার গরিব মহিলাদের লোহা মাফিয়ারা ব্যবহার করে। তাঁদের ঝুড়ি নিয়ে কারখানার ভিতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঝুড়িতে কাঠ, কাঁঠাল ইত্যাদির তলায় ছোট ছোট যন্ত্রাংশ ভরে নিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পেটের দায়ে অনেকেই সে কাজ করেন।
গুলিবিদ্ধ মহিলা।
যদিও বিকেলে কারখানায় যাওয়া মহিলাদের দাবি, তাঁরা শুধু কাঠ কুড়োতেই গিয়েছিলেন। হঠাৎ ওই রক্ষী গুলি চালান। ঘটনার পরেই অভিযুক্ত রক্ষী পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে যান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। এডিসিপি জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। তাঁকে ধরার পরে জেরা করা হলে তথ্য মিলতে পারে বলে আশা এডিসিপি-র। যে ঠিকা সংস্থা কারখানায় নিরাপত্তা রক্ষী সরবরাহ করে তার আধিকারিক মানস রায় জানান, অভিযুক্ত রক্ষীর নাম রামময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। আমরাও ওই রক্ষীর খোঁজ করছি। সন্ধান পেলেই পুলিশকে জানাব।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.