ভোট-পরবর্তী সংঘর্ষ, ভাঙড়ে পুড়ল দোকান, ঢোলাহাটে জখম ১০
বাগদা, স্বরূপনগরে শান্তি বৈঠকে সব দল
ঞ্চায়েত ভোট মিটে যাওয়ার পরেও দুই ২৪ পরগনায় রাজনৈতিক দলগুলির বিশেষ করে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই। যদিও এর দায় দু’পক্ষই একে অপরের উপরে চাপিয়ে দিলেও দু’দলের কর্মী-সমর্থকেরাই আতঙ্কে রয়েছেন।
বুধবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি ব্লকের ঢোলাহাটে তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের সংঘর্ষে জখম হলেন তিন দলেরই বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে কুলপি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। ঢোলাহাট থানার পুলিশ জানায়, তৃণমূলের তরফে সিপিএমের ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও সিপিএম, কংগ্রেস কেউই এখনও অভিযোগ করেনি। সাদ্দাম মোল্লা নামে এক জন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে বৃহস্পতিবার কাকদ্বীপ আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢোলাহাটের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের উলুরদাঁড় গ্রাম থেকে তিন দলই ভোটে প্রার্থী দিয়েছিল। ফল বের হলে দেখা যায়, সিপিএম জিতে গিয়েছে। পঞ্চায়েতে কংগ্রেস আলাদা করে প্রার্থী দেওয়ায় আগেই ক্ষুব্ধ ছিল স্থানীয় তৃণমূল। তারা দাবি করে, কংগ্রেসের এমন আচরণের জন্যই ভোট কাটাকাটিতে জিতে গিয়েছে সিপিএম।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ওই গ্রামের কংগ্রেস প্রার্থী সেরিনা খানের বাড়িতে তৃণমূলের সমর্থকেরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সেরিনার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানো হয় বলেও দাবি কংগ্রেসের। যদিও কংগ্রেসের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি বলে দাবি পুলিশের। সেরিনার স্বামী রশিদ খান বলেন, “হেরে গিয়ে আক্রোশবশত আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূল।”
ভাঙড়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে চায়ের দোকানে। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের বক্তব্য, ঘটনার পর তারা থানায় অভিযোগ জানাতে যাচ্ছিল। পথে বেরগ্রাম হয়ে যেতে হয়। অভিযোগ, সেই সময়ে বেরগ্রামের বাসিন্দা রশিদ তাঁর ভাই সিপিএম সমর্থক আবুল হোসেন খানকে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার খবর দেন। তৃণমূলের লোকজন যখন তাঁদের গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিল, তখন আবুলের নেতৃত্বে সিপিএমের লোকজন তৃণমূলের লোকজনদের উপরে চড়াও হয়। সংঘর্ষে দু’পক্ষের চার পাঁচ জন জখম হয় বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “সিপিএম ও কংগ্রেসের লোকেরাই আমাদের উপরে হামলা চালায়। আমাদের কয়েক জন কর্মী-সমর্থক জখম হয়েছে।” সিপিএমের কুলপি জোনাল কমিটির সম্পাদক শকুন্তলা পাইকের দাবি, “এটি পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের ঘটনা। তাতে রাজনৈতিক রং লাগিয়েছে তৃণমূল।”
বুধবার রাতে ভাঙড়ের ঘটকপুকুরেও তিন সিপিএম কর্মীর দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ দিন বিকেলে এক সিপিএম কর্মীর দোকান ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটকপুকুরের গোবিন্দপুরে গফফর মল্লিকের চায়ের দোকানে সিপিএমের লোকজনের যাওয়া আসা ছিল বলে তাঁকে কিছুদিন ধরেই শাসাচ্ছিল তৃণমূলের লোকজন। ওই দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের লোকেরা দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের সরিয়ে দিলেও অভিযোগ, রাতে আবার গফ্ফর মল্লিক-সহ দুই সিপিএম কর্মীর দোকানে আগুন লাগিয়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। গফ্ফর বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের লোকজন আমাকে হুমকি দিচ্ছিল, যাতে দোকানে সিপিএমের কেউ চা খেতে না আসে। আমি ওদের কথা শুনিনি বলে আমার দোকানে ভাঙচুর চালায় ওরা। আগুন লাগিয়ে দেয়।”
ক্যানিং (পূর্ব)-এর বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেন, “ভোটের আগে থেকেই তৃণমূল ভাঙড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এ দিন আমাদের তিন সমর্থকের দোকানেও আগুন লাগিয়ে দেয় ওরা।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি কাইজার আহমেদ বলেন, “ওই ঘটনায় আমাদের দল কোনও ভাবে জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম।”
অন্যদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ও পরে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমায় রাজনৈতিক হিংসার কোনও ঘটনা না ঘটলেও ফল ঘোষণার পর থেকে মহকুমায় ঘটছে একের পর এক রাজনৈতিক সংঘর্ষ, মারামারি। বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদা সর্বত্রই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বাগদা। মহকুমা পুলিশ সূত্রের খবর, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে এখনও পযর্ন্ত বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে জখম হয়েছেন ১৫ জন। আহতদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগ-সহ অন্যান্য ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বনগাঁয় এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “যে সব এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেই সব এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া কোথাও সংঘর্ষের খবর পাওয়া মাত্রই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এলাকায় শান্তি ফেরাতে বুধবার বিডিও অফিসে সর্বদল বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু তার পরেও কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাগদার বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “সংঘর্ষ থামিয়ে শান্তি ফেরাতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দলই আপাতত বিজয় মিছিল বের করবে না। কোথাও গোলমাল হলে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারাই তা বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন।
একইভাবে বুধবার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগরে সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রার্থীর দুই ভাইকে গুলি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সংঘর্ষ থামাতে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বিডিও যে শান্তি বৈঠক করেছিলেন সেখানেও দলগুলি সংঘর্ষ বন্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেউই কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করবেন না। শান্তি বজায় রেখেই যে যার মতো কর্মসূচি নেবেন। কোনও সমস্যা হলে সব দল মিলে আলোচনা করে মীমাংসা করা হবে। তার পরেও যদি কোনও দলের কেউ কোনও অন্যায়কাজ করেন তাহলে দল তাঁর দায়িত্ব নেবে না।” প্রসঙ্গত স্বরূপনগরের ঘটনায় সিপিএমের তরফে ২০ জন ও তৃণমূলের তরফে সাত্তার গাজি-সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সঞ্জয় রায় সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গণপ্রহারে জখম সঞ্জয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সর্বদল বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলি এলাকয় শান্তি ফেরানোর ব্যাপারে একমত হলেও এলাকার মানুষ এতটাই আতঙ্কিত যে বৃহস্পতিবারও এলাকায় ছিল থমথমে পরিবেশ। যদিও দোকানপাট বেশিরভাগই খুলেছে। তবে র্যাফের টহলদারি জারি রয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.