মামার বাড়ি এসে কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল বছর চারেকের এক শিশু। তাকে উদ্ধার করতে কুয়োয় নেমে বিষাক্ত গ্যাসে মারা গেল তিন জনেই। মৃত শিশুটির নাম রওশন শেখ। তার দুই মামা, সাদেকুল শেখ (২২) ও জাহেরুল শেখ (২১)।
একই পরিবারের তিন জনের এই আকস্কিক মৃত্যুতে সমশেরগঞ্জের চাঁদনিদহ এলাকা শুক্রবার সকাল থেকেই শোকাচ্ছন্ন। বাপের বাড়িতে এসে ছেলে ও দুই ভাইকে হারিয়ে কার্যত বাকরুদ্ধ শিশুটির মা রুমেশা বিবি। ছোট ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা বছর সাতেকের আফসানা খাতুনের। শিশুটির দিদিমা আশিয়া বিবি অশক্ত শরীরে শোক সামাল দিতে না পেরে একটানা কপাল চাপড়ে চলেছেন। সুতির বাহাগলপুর গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে দিন পাঁচেক আগে ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাবা মহম্মদ আলির কাছে এসেছিলেন রুমেশা। মহম্মদ আলির বাড়িতেই শৌচাগার তৈরির জন্য কাটা হয়েছিল কুয়ো। শিশুটি রোজকারের মত এ দিনও কুয়োর আশপাশে খেলা করছিল। ছুটতে ছুটতে হঠাৎই সে কুয়োর মধ্যে পড়ে যায়। প্রতিবেশীরা রওশনকে গভীর কুয়োয় পড়ে যেতে দেখে চিৎকার করে ওঠে। |
কালক্ষেপ না করে দড়ি বেয়ে ভাগ্নেকে উদ্ধারে তরতরিয়ে কুয়োয় নামেন সাদেকুল। নীচে নামতেই হঠাৎ তাঁর হাত থেকে দড়ির বাঁধন আলগা হয়ে যায়। সাদেকুলের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে বাড়ির লোকজনের। তাঁর খুড়তুতো ভাই কলেজ ছাত্র জাহেরুলও নেমে পড়েন কুয়োয়। কিন্তু তিনিও তলিয়ে যান সাতাশ ফুট গভীর কুয়োর জলে। এরপর সাদেকুলের আরেক খুড়তুতো ভাই আব্দুল করিম কুয়োয় নামেন। করিম বলেন, “ফুট কুড়ি নীচে নামতেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। বুঝতে পারি নীচে বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে।” সঙ্গে সঙ্গে কোমরে বাধা দড়ি ধরে টেনে তাঁকে উপরে তোলা হয়। এরপর খবর দেওয়া হয় সমশেরগঞ্জ থানায়। পুলিশই খবর দেয় ধুলিয়ানের দমকলকেন্দ্রে। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ঘটনার অনেকটা পরে পৌঁছয় দমকলের লোকজন। তাঁদের কাছে উদ্ধারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও ছিল না। দমকলের ওসি মহম্মদ আলি গাফিলতির সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, সাবেক কিছু সরঞ্জাম নিয়েই তাঁদের উদ্ধারের কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, “মিথেন গ্যাসেই মৃত্যু হয়েছে ওঁদের। খবর পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কর্মীরা।” |