অনুব্রতর বিরুদ্ধে মামলা শুরুর আবেদন খারিজ |
উপযুক্ত তথ্য প্রমানের অভাবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা শুরুর আবেদন খারিজ করল সিউড়ি আদালত। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে প্রার্থী ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন অনুব্রতবাবু। তারপর রাজ্য নির্বাচন কমিশন অনুব্রতর বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী তদন্ত শুরু করে পাড়ুই থানার পুলিশ। তবে আজ আদালতে সেই সভার ভিডিও ফুটেজ বা অন্যান্য তথ্যাদি কিছু আদালতে জমা দিতে পারেনি পুলিশ। ফলে আমলা শুরু আবেদন খারিজ কর আদালত। আগামী কাল ফের নতুন করে তথ্য প্রমান দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামও স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে একটি জনসভায় হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও আজ তদন্ত করার অনুমতি চেয়ে তথ্য প্রমান দিখুল করে পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।
|
পঞ্চম দফায়ও অব্যাহত অশান্তি, মৃত ১ |
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে গত চার দফায় যে অশান্তির চিত্র লক্ষ্য করা গিয়েছিল, পঞ্চম দফায়ও তার চিত্র বদলালো না। বিশেষত জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের মারধর, হুমকি দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত শাসকদল তৃণমূল। ধূপগুড়িতে গত কাল রাত থেকেই তৃণমূলের বাইক বাহিনী গোটা এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রায় সমস্ত বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের ভোট না দিতে যাওয়ার জন্য হুমকিও দেয় তারা। প্রার্থীদেরও হুমকি দিয়ে বলা হয়, বাড়ি থেকে বেরোলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। সকাল থেকে নির্বাচন শুরু হলেও জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারছেন না বলেই অভিযোগ করছে বিরোধীরা। ময়নাগুড়ির বিভিন্ন ব্লকে আরএসপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। সেখানেও ভোট না দিতে দেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় ৪ জন আরএসপি সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁগের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্য দিকে, কোচবিহার জেলার বিভিন্ন গ্রাম গ্রামে ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দিনহাটার বুনাতপুর গ্রামের ২০৮ এবং ২০৯ নম্বর বুথে ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থক ও এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। এক জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে দিনহাটা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকারও অভিযোগ জানিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা উদয়ন গুহ। ইটাহারে তৃণমূলের হামলায় বুথের সামনেই সিপিএম সমর্থকের মৃত্যুর খবর মিলেছে। গিতালদহে কংগ্রেসের আক্রমণের জখম হয়েছেন ২ তৃণমূল সমর্থক। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে বুথ জ্যাম করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। রায়গঞ্জে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে এবং হেমতাবাদে কংগ্রেসের নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূল। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে অভিযুক্তরা। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, তাদের কাছে এ নিয়ে বিশেষ কোনও অভিযোগ আসেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে ধূপগুড়ির কয়েকটি জায়গায় ব্যালট পেপার ছিনতাই ও ভুল ব্যালট পেরা পৌঁছানোয় সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। তবে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে কোথাও কোথাও পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছলেও বেশিরভাগ জায়গায় পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
|
রাজ্য ফের ধাক্কা খেল কলকাতা হাইকোর্টে |
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই ‘অমানবিক’ মুহূর্ত।—নিজস্ব চিত্র। |
পরিবর্তনের সরকারের দু’ বছরের মধ্যে আমরা বহু বার দেখেছি ধর্ষণ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মনোভাব ও সংশ্লিষ্ট ‘কার্যকলাপ’এর জন্য আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এবং বেশির ভাগ সময়ই আদালতের রায় বা নির্দেশ রাজ্যের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। আজ ফের এক বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে ভর্ৎসনা শুনতে হল রাজ্য সরকারকে। গত ১৪ এপ্রিল শিলিগুড়িতে সিপিএম তৃণমূল সংঘর্ষের জেরে সন্তোষ সাহানি নামে এক এসএফআই নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেডের সঙ্গে পায়ে বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। খবর প্রকাশ্যে আসতে পরে অবশ্য তা খুলেও ফেলা হয়। এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়। আজ হাইকোর্টে সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও মাননীয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রীতিমতো ভর্ৎসনা করে রাজ্যকে। হলফনামায় রাজ্যের সাফাই ছিল, সেই দিন সন্তোষকে দেখার জন্য সংবাদ মাধ্যমের প্রচুর লোক এসেছিলেন। সঙ্গে তার আত্মীয়-বন্ধুরাও ছিল। ফলে তাকে যাতে হাসপাতাল থেকে ‘ছিনিয়ে’ না নিয়ে যেতে পারে সে জন্যই পায়ে বেড়ি পরানো হয়েছিল। রাজ্য সরকারের হলফনামা পড়ে তা খারিজ করেন তাঁরা। সন্তোষ সাহানির মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশও দেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, এর আগেও অধ্যাপত অম্বিকেশ মহাপাত্রের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন রাজ্য পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিলেও তা আজ পর্যন্ত মানেনি রাজ্য। এ ক্ষেত্রে নির্দেশ মানা হয় কি না, তা সময় বলবে।
|