সম্পাদকীয়...
ক্যালাসতা
ত্তরপ্রদেশের হাসপাতালে রিকশা-চালক এক বালককে ইঞ্জেকশন দিলেন, বালকটি মারা গেল। কেন ইঞ্জেকশনের দায়িত্বে রিকশা-চালক? কারণ ডাক্তার বলিয়াছিলেন কম্পাউন্ডারকে, ইঞ্জেকশনটি দিয়া দিতে, কম্পাউন্ডার তুরন্ত সে দায়িত্ব রিকশা-চালকের স্কন্ধে অর্পণ করিয়া দেন, সেই চালক প্রায়ই মৃতদেহ গাড়িতে বহিয়া দিতেন হাসপাতাল হইতে, সেই সূত্রে চেনা। ইহা উদ্ভট গল্পকেও হার মানাইয়া দেয়। টিভি চ্যানেলের জন্য যখন রিকশা-চালকটি পুনরায় ইঞ্জেকশন দিবার ‘পোজ’ দেন এবং বলেন তিনি গত পনেরো বৎসর ধরিয়াই ময়না তদন্ত ও চিকিৎসায় সাহায্য করিয়া আসিতেছেন, তখন এই দেশের মূল থিমটি কমেডি না ট্র্যাজেডি, নির্ধারণ করা কঠিন হইয়া পড়ে। কোন স্পর্ধায়, দায়িত্বজ্ঞানহীনতায়, অমানবকিতায় এক চিকিৎসা-কর্মী, সেই শাস্ত্রে সম্পূর্ণ মূর্খ এক ব্যক্তির হস্তে রোগীর জীবন অর্পণ করেন? ইহার পূর্বেও, এক হাসপাতালে, এক মাতাল ঝাড়ুদার আসিয়া এক শিশুর অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করিয়া দেয়, সিলিন্ডারের চাবি ঘুরাইয়া। শিশুটির ঠাকুমা বহু মিনতি করেন, তবু সে অক্সিজেন চালু করিতে সম্মত হয় নাই। শিশুটি মারা যায়। সংবাদপত্র খুলিলে এমন অবিশ্বাস্য বেনিয়ম ও ইতরতার উদাহরণ ভূরি ভূরি, কোথাও ঝাড়ুদার স্টিচ করিতেছে, কোথাও ওয়ার্ড-বয় অপারেশনে হাত পাকাইতেছে। দারিদ্র নহে, পরিকাঠামোর অভাব নহে, ইহার মূলে চূড়ান্ত ঔদাসীন্য, নির্মম অনুভূতিহীনতা, ইংরাজি হইতে ধার লইয়া বলা যায় ‘ক্যালাসতা’। জীবনের কোনও মূল্য এই দেশে নাই। যদি ‘প্রথম বিশ্বের’ সহিত ভারতের একটি প্রধান পার্থক্য নিরূপণ করিতে বলা হয়, তাহা হইল, ওই দেশগুলিতে জীবন সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ প্রবল, এই দেশে খুব খ্যাত ব্যক্তি ব্যতীত কোটি কোটি মানুষকে, এমনকী নিজেদেরও, আমরা কীটপতঙ্গের ন্যায় তাৎপর্যহীন ভাবিতে অভ্যস্ত। সকল কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে সর্বদা চূড়ান্ত অবহেলা পাইয়া সাধারণ মানুষের এমন অভ্যাস হইয়া গিয়াছে, নিজের প্রতি অন্যায় ঘটিয়া গেলে বিচার চাহিবার মানসিকতাটুকুও অবশিষ্ট নাই। গরিব মানুষ তো এই ভাবেই মরিবে, ঝরিবে, ইহা মানিয়া লইয়া, কপালে করাঘাত করিয়া, পুনরায় একটি মনুষ্যেতর জীবনচক্রে পিষ্ট হইবার জন্য নতমুখে পিঞ্জরে প্রবেশ করিতে সকলেই প্রস্তুত।
ইহাই ভয়াবহতর: কেবল দোষীরা নহে, এই ব্যবস্থার চক্রে পড়িয়া শিকারগণও ক্যালাস হইয়া যাইতেছেন। নিজের অধিকার জানাইয়া কোনও লাভ হইবে না— এই সত্য ঠেকিয়া শিখিয়া এবং চতুষ্পার্শ্বে বারংবার দেখিয়া এমন অভ্যাস হইয়াছে যে অন্যায়ের সহিত মানাইয়া লওয়াকেই স্বস্তিকর জীবনচর্যার অঙ্গ বলিয়া সকলে ধরিয়া লইয়াছেন। রুখিয়া দাঁড়াইবার ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রবৃত্তি এখানে অতিরিক্ত পাকামি বলিয়া স্বীকৃত। রাষ্ট্র তীব্র অবিচারের এক নিপুণ পরিমণ্ডল রচনা করিয়া, মানুষের মেরুদণ্ড ও আশাবাদ আমূল ধ্বংস করিতে সক্ষম হইয়াছে। এখানে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে না, করিলেও দোষী কোন জাদুবলে সহজে জামিন পাইয়া যায়, মামলা আদালতে উঠিতে কাল কাটিয়া যায়, হয়তো সাজা ঘোষণার পূর্বে অপরাধী মরিয়া যায়, অন্তত বৎসরের পর বৎসর ফাইল-ফাঁসের ভুলভুলাইয়ায় ঘুরিয়া অভিযোগকারীর বিশ্বাস ও প্রাণশক্তি মরিয়া তো যায়ই। সেই নিশ্চয়তায় ভর করিয়া কদর্য ধর্ষকও ভ্যানে উঠিবার আগে শাসাইয়া যায়, ফিরিয়া আসিয়া দেখিয়া লইব। আর জনগণ ভাবিয়া লয়, প্রতিবাদ সত্যই এক অতিস্ফীত প্রতিক্রিয়া, উহার অতশত প্রয়োজনই বা কী, অধিকার বলিয়া প্রকৃত পক্ষে তাহার কিছু নাই, বরং সে যে প্রত্যহই রিকশা-চালকের হস্তে সুঁই পাইতেছে না, ইহাই যথেষ্ট সৌভাগ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.