বিনোদন কহানি এগিয়ে দিতে নাম-মাহাত্ম্যেই ভরসা
নেক বাংলা ছবির চেয়েও বেশি গভীরে গিয়ে কলকাতা চষেছিল ‘কহানি’। অথচ তার পরবর্তী পর্ব আর কলকাতায় রইল না। ‘কহানি-২’-র ঘটনাস্থল হয়ে গেল মহারাষ্ট্র। কেন্দ্রীয় চরিত্র এক মরাঠি মহিলা।
কলকাতা হয়তো কষ্ট পাবে শুনলে, ‘কহানি-২’-র পরিচালকও কিন্তু বঙ্গসন্তান সুজয় ঘোষ নন। ব্যাটন এখন ‘জানে ভি দো ইয়ারো’-র পরিচালক কুন্দন শাহ-এর হাতে। যিনি জানালেন, কহানির মতো থ্রিলার নয়, তাঁর ছবি হবে রাজনৈতিক স্যাটায়ার।
সুজয় নেই। বব বিশ্বাস নেই। বিদ্যা বালনের সঙ্গে এখনও কথা বলা হয়নি। তা হলে কী করে এটা সিক্যুয়েল হল?
প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু ঘটনা হল, প্রথম ছবির নামের সঙ্গে ‘১, ২, ৩’ জুড়ে, নতুন নায়ক, নতুন গল্প নিয়ে সিক্যুয়েল বানানোটাই এখন রেওয়াজ। আর সিক্যুয়েল অনুযায়ী পরিচালক বদল? দরকারে সেটাও হচ্ছে।
হাতে গরম উদাহরণ ‘আশিকি’। ১৯৯০-এর ছবিটার পরিচালক ছিলেন মহেশ ভট্ট। ‘আশিকি ২’-এ তিনি অন্যতম প্রযোজক। পরিচালক মোহিত সুরি। জন আব্রাহাম, বিপাশা বসু অভিনীত ‘জিসম’-এর পরিচালক ছিলেন অমিত চন্দ্র। ‘জিসম ২’-র পরিচালক পূজা ভট্ট। গপ্পে মিল নেই, জন-বিপাশাও নেই। বিদেশ থেকে আনা হল সানি লিওনকে। ‘জিসম’-এর পটভূমি ছিল পুদুচেরি। সানি শু্যটিং করতে পাড়ি দিলেন শ্রীলঙ্কায়।
আরও আছে। ‘দবাং’। অভিনব কাশ্যপের পরিচালিত বিশাল হিট। ‘দবাং-২’-এ সলমন ‘চুলবুল’ খান ও সোনাক্ষী সিংহ রইলেও পরিচালনার ভার নিলেন সলমনের ভাই আরবাজ। ‘ধুম’ আর ‘ধুম ২’ বানিয়েছিলেন সঞ্জয় গাডভি। আমির খানকে নিয়ে ‘ধুম ৩’ বানাচ্ছেন বিজয় কৃষ্ণ আচার্য।
মনে রাখতে হবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই প্রত্যেকটা ফ্রাঞ্চাইজির (এক-একটা সিক্যুয়েলের ধারাকে এই পরিভাষাতেই ডাকা হয় বলিউডে। যেমন ‘মার্ডার ফ্রাঞ্চাইজি’ বা ‘ধুম ফ্রাঞ্চাইজি’) প্রথম ছবিগুলো যেমন হিট করেছে, পরের সংস্করণগুলোও কম ব্যবসা করেনি। তা হলে কি পরিচালক পাল্টে গেলে বক্স অফিসে কোনও ছাপ পড়ে না? প্রযোজকরাই বা হিট পরিচালককে ছেড়ে দেন কেন?
‘কহানি’-র সহ প্রযোজক জয়ন্তিলাল গদা-র মতে, অনেক ক্ষেত্রেই এর কারণ হয়তো একটা হিটের পর পরিচালকদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়া। বললেন, “পরিচালকের চাহিদা বেড়ে গেলে আমাদেরও হাত-পা বাঁধা থাকে। অনেক অপেক্ষা করেছিলাম সুজয়ের জন্য। কিন্তু ও অনেক টাকা চাইছে। তার পর নিজের স্ক্রিপ্টটাও দেখাবে না বলছে। এই মঙ্গলবার কুন্দনকে সই করিয়েছি।” ইতিমধ্যে সুজয় টুইট করেছেন, “কহানি-র ভক্তরা, আপনারা জানেন না আমাদের আর আমাদের ছবিটাকে আপনারা কতটা ভালবাসা দিয়েছেন। কথা দিচ্ছি, এর পর যা-ই করি, ভালবাসাটাকে সম্মান জানাব।”
কুন্দন কিন্তু সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর গল্পের সঙ্গে সুজয়ের ‘কহানি’-র কোনও যোগ নেই। তবে সুজয়ের ছবিতে যেমন কলকাতার গন্ধ ছিল, তেমন তাঁর ছবিতে মহারাষ্ট্রের গন্ধ পাওয়া যাবে। বললেন, “গল্প অনেক দিন আগেই লিখেছিলাম। পলিটিকাল স্যাটায়ার। তাতে জানে ‘ভি দো ইয়ারো’র মতো একটা ডেডবডিও থাকছে। কেন্দ্রীয় চরিত্র কস্তুরী নামে এক মরাঠি মেয়ে।” কথাপ্রসঙ্গে কুন্দন তুললেন জেমস বন্ড সিরিজের কথা। “বন্ডের কত সিক্যুয়েল হয়েছে দেখুন। তাদের পরিচালক আলাদা। আবার ‘গডফাদার’-এর দু’টো ছবিতে একই পরিচালক। এখন অবশ্য একদম আলাদা গল্প নিয়েও সিক্যুয়েল হচ্ছে। প্রযোজক নামটা এক রাখছেন মার্কেটিংয়ের সুবিধের জন্য।”
“আজকের দিনে হিট টাইটেল সব চেয়ে বড় তারকা, মনে রাখবেন।” বক্তা মহেশ ভট্ট।
‘রাজ ২’ থেকে ‘মার্ডার ২’ তাঁর প্রযোজনা সংস্থার সিক্যুয়েলে নতুন নতুন পরিচালক নেওয়া হয়েছে নিয়মিত। ‘কহানি’র সহ-প্রযোজকের সুরেই মহেশ বললেন, “সাফল্য অনেক সময় মাথা ঘুরিয়ে দেয়। তাই হয়তো পরিচালক আর প্রযোজকদের সংঘাত হচ্ছে।”
তা হলে কি কোন সিরিজের ছবি, সেটাই সব? পরিচালকের কিছু করণীয়ই নেই? ‘রাজ-২’, ‘মার্ডার-২’, ‘আশিকি-২’-র পরিচালক মোহিত সুরি এ কথা মানতে নারাজ। বলছেন, “মুন্নাভাই, রেস, গোলমাল এই সিরিজগুলোয় পরিচালক বদলায়নি। আবার আমি ‘আশিকি’ না বানিয়ে একেবারে ‘আশিকি-২’ বানিয়েছি। শুধু হিট টাইটেলে হয় না। ‘আশিকি’র মতো হিট মিউজিকালের সিক্যুয়েলে ‘তুম হি হো’র মতো গান না থাকলে লোকের ভাল লাগত? পরিচালকের মুন্সিয়ানা, গল্পের বাঁধন, ভাল মিউজিক না থাকলে হিট টাইটেলের চাপেই ছবি হারিয়ে যেতে পারে।”
রাকেশ রোশনের অবশ্য পরিচালক বদলের ভাবনা নেই। কারণ, ‘কোই মিল গয়া’, ‘কৃষ’, ‘কৃষ-২’ ছবিগুলোর একাধারে তিনিই প্রযোজক ও পরিচালক। সে কথা মেনে নিয়েই রাকেশ বলছেন, “নিজে পরিচালক না হলে হয়তো অন্য পরিচালকদের কথা ভাবতাম। কিন্তু এটাই সাফল্যের একমাত্র রেসিপি নয়। পরিচালককে প্রতিটা চরিত্রের সঙ্গে সুবিচার করতে হবে। আর ‘কোই মিল গয়া’র গল্পটাই কিন্তু এখনও এগোচ্ছে।”
অতএব চর্চা কিন্তু চালু রইল। নামে কি আসে-যায়? কী-ই বা আসে যায়!

‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ সুজয়
বলিউডকে ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ আনছেন ব্যোমকেশ! শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঐতিহাসিক উপন্যাস থেকে হিন্দি ছবি করছেন সুজয় ঘোষ। ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যোমকেশ মাসখানেক হল উপন্যাসটির স্বত্ব কিনেছেন। এক সময়ে নিউ থিয়েটার্সের দিলীপ সরকার চেয়েছিলেন উপন্যাসটি থেকে বাংলা সিরিয়াল বানাতে। হয়ে ওঠেনি। সুজয়ের কিন্তু বহু দিন ধরেই এই উপন্যাসটি ‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ ছবি করার ইচ্ছে ছিল, জানালেন শরদিন্দু-কাহিনির স্বত্ব বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীর চক্রবর্তী। সুজয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তবে প্রবীরবাবু বললেন, “আমার ধারণা, সুজয় ২০১৪-য় কাজ শুরু করবে। শুনেছিলাম ও হৃতিককে নিতে চায়। শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে জানি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.