কথা বলতে গেলেই নাকে-মুখে জল ঢুকে যাচ্ছে। স্পেসস্যুটের ওই ধড়াচুড়োর মধ্যে দমবন্ধ হয়ে আসছে ইতালীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী লুকা পারমিতানোর। এ দিকে, হেলমেট খোলার উপায় নেই। জায়গাটা যে মহাশূন্য!
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের বাইরে যে এত কাণ্ড ঘটছে, ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি নাসা। বুঝতে পারেননি লুকার সহকর্মীরাও। শেষে অবশ্য ফাঁড়াটা কাটে। লুকার সঙ্গে মহাশূন্যে নেমেছিলেন আর এক বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার ক্যাসিডি। আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। খবর পাঠান স্পেস স্টেশনের অন্দরমহলে। কোনও ক্রমে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় লুকাকে। ধরাচুড়ো খুলতে, রক্ষে!
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার (পৃথিবীর সময় হিসেবে)। কিছু যান্ত্রিক সমস্যা দেখা গিয়েছিল স্পেস স্টেশনে। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা মানুষের বাসযোগ্য এই কৃত্রিম উপগ্রহটি খারাপ হলে সাধারণত তার বাসিন্দারাই মেরামতি করেন। এ দিনও তাই হয়। লুকা ও ক্রিস্টোফার স্টেশনের বাইরে মহাকাশে বেরোন। হিসেব কষে দেখা যায়, সারাতে মোটামুটি ছ’ঘণ্টা সময় লাগবে। ইতালীয় নভশ্চরদের মধ্যে মহাকাশে হাঁটার অভিজ্ঞতা রয়েছে লুকারই। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল।
কিন্তু আধ ঘণ্টা যেতে না যেতেই, লুকা দেখেন চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে জলের বিন্দু। প্রথমটা বুঝতে পারেননি। মাথার পিছনটা ভেজা ভেজা লাগছিল। ভাবেন ‘ঘাম হবে হয়তো’। কিন্তু ভুল ভাঙে নিমেষেই। চোখের পলকে বাড়তে থাকে জলের পরিমাণ। নাকে-মুখে জল ঢুকে তৈরি হয় দমবন্ধকর পরিস্থিতি। জলের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রেডিও যোগাযোগও। |
স্পেস ওয়াক বাতিল করার ঘটনা নাসার ইতিহাসে বিরল। লুকার সহকর্মী ক্রিস্টোফার কিংবা ক্যারেন নাইবার্গই বলছিলেন, “ব্যাপারটা মারাত্মক চেহারা নিতে পারত।” শ্বাস আটকেই একটা বড়সড় বিপদ হতে পারত লুকার। প্রায় আধ লিটার জল ছিল হেলমেটের ভিতরে।
গবেষণাগারের ভিতরে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেনের বন্দোবস্ত থাকে। মহাশূন্যে তো তেমন কিছু নেই। তাই গায়ে চাপাতে হয় স্পেস স্যুট। তাতেই থাকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা। থাকে জল সরবরাহ। বিষয়টা তো পৃথিবীর মতো নয়। জল তেষ্টা পেলে হেলমেট খুলে জল খাওয়া অসম্ভব। তাই পোশাকের ভিতরেই থাকে এক ধরনের ‘ওয়াটার ব্যাগ’। বিজ্ঞানীদের সন্দেহ, ওই ব্যাগ থেকেই কোনও ভাবে জল চুঁইয়ে বেরোয়। তবে স্পেস স্যুটের ভিতরে অন্য একটি পোশাক পরতে হয় নভশ্চরদের। শরীর ঠান্ডা রাখাতে, তার মধ্যেও জল থাকে। বিপত্তির কারণ হতে পারে সেই ‘জল-পোশাকও’। |